East Bengal: পিছিয়ে পড়েও অনবদ্য লড়াই, পাঞ্জাবকে হারিয়ে মরশুমের তৃতীয় জয় ইস্টবেঙ্গলের
East Bengal vs Punjab FC: পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে প্রথমার্ধে ০-২ ব্যবধানে পিছিয়ে ছিল ইস্টবেঙ্গল। তবে দ্বিতীয়ার্ধে খেলা সম্পূর্ণ বদলে যায়।
কলকাতা: পরপর দুই ম্যাচে জয়ের পর গত ম্যাচে ওড়িশার বিরুদ্ধে হারের সম্মুখীন হতে হয়েছিল ইস্টবেঙ্গলকে (East Bengal)। তবে ঘরের মাঠে ফিরতেই জয়েও ফিরল লাল হলুদ। পাঞ্জাবকে হারিয়ে আইএসএল মরশুমের (ISL 2024-25) তৃতীয় জয় সুনিশ্চিত করল অস্কার ব্রুজোনের দল। প্রথমার্ধে দুই গোলে পিছিয়েই ছিল ইস্টবেঙ্গল, তবে দ্বিতীয়ার্ধে হু হু করে আক্রমণ গড়ে তোলেন ক্লেটন সিলভারা। পরিণামে এক দুই নয়, চার চারবার পাঞ্জাবের জালে বল জড়াতে সক্ষম হয় লাল হলুদ, অর্জন করে নেয় তিন পয়েন্ট।
মঙ্গলবার প্রথম দলের চার খেলোয়াড়কে ছাড়া খেলতে নামা ইস্টবেঙ্গলের ফর্মে থাকা পাঞ্জাব এফসি-র বিরুদ্ধে এমন নাটকীয় জয় ছিল চলতি লিগের অন্যতম সেরা অঘটন। ২১ ও ৩৯ মিনিটের মাথায় যথাক্রমে হাঙ্গেরিয়ান ফরোয়ার্ড আসমির সুলজিক ও আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার নর্বের্তো ভিদালের গোলে এগিয়ে যায় পাঞ্জাব।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে পিভি বিষ্ণু রিজার্ভ বেঞ্চ থেকে নামার পরেই ইস্টবেঙ্গলের মেজাজ পুরো বদলে যায় এবং মাত্র ২২ মিনিটের মধ্যে চার-চারটি গোল করে জয়ের দিকে এগিয়ে যায় তারা। দ্বিতীয়ার্ধের দ্বিতীয় মিনিটেই সেটপিস গোল করে প্রথমে ব্যবধান কমান হিজাজি মাহের। এই গোলের আট মিনিট পরেই সমতা আনেন বিষ্ণু। ৬০ মিনিটের মাথায় পাঞ্জাবের ডিফেন্ডার সুরেশ মিতেইয়ের নিজ গোলে এগিয়ে যায় লাল-হলুদ বাহিনী, যে ব্যবধান ৬৭ মিনিটের মাথায় বাড়িয়ে নেন ইস্টবেঙ্গলের ফরোয়ার্ড ডেভিড লালনসাঙ্গা।
এ দিন প্রথমার্ধে অগোছালো ফুটবল খেললেও দ্বিতীয়ার্ধে দুর্দান্ত ভাবে ঘুরে দাঁড়ায় তারা। এই প্রত্যাবর্তনের কৃতিত্ব মূলত পিভি বিষ্ণুর। যিনি এ দিন একটি গোল করেন ও একটি অ্যাসিস্টও করেন। তিনটি শট নেন তিনি, যার মধ্যে একটি ছিল লক্ষ্যে এবং সেটিই প্রতিপক্ষের জালে জড়িয়ে যায়। এই ফলে অবশ্য কোনও দলেরই অবস্থান বদলায়নি। ১১ ম্যাচে দশ পয়েন্ট নিয়ে ইস্টবেঙ্গল ১১ নম্বরেই রয়ে গেল। পাঞ্জাবও রইল পাঁচ নম্বরেই।
আইএসএলে এর আগে কখনও এ ভাবে ম্যাচ জেতেনি ইস্টবেঙ্গল। দু’গোলে পিছিয়ে থেকেও না এবং ২২ মিনিটে চার গোল দিয়েও না। গত বছর ডিসেম্বরে তারা নর্থইস্ট ইউনাইটেডকে ৫-০-য় হারিয়েছিল এবং এ বথর এপ্রিলে তারা কেরালা ব্লাস্টার্সকেও ৪-২-এ হারিয়েছিল। ২০২১-এর জানুয়ারিতে ওডিশা এফসি-কে তারা ৩-১-এ হারায়। ২০২২-এ একই ব্যবধানে হারিয়েছিল নর্থইস্ট ও জামশেদপুরকেও। কিন্তু দু’গোলে পিছিয়ে থেকে জয়, আজ পর্যন্ত কখনও অর্জন করতে পারেনি, যা করে দেখাল অস্কার ব্রুজোনের লাল-হলুদ বাহিনী।
এ দিন দ্বিতীয়ার্ধে ক্রোয়েশিয়ান ডিফেন্ডার ইভান নোভোসেলিচ চোট পেয়ে এবং তাদের আর এক ডিফেন্ডার লামডিং দ্বিতীয় হলুদ তথা লাল কার্ড দেখে মাঠ ছেড়ে চলে যাওয়ায় পাঞ্জাবের রক্ষণ বেশ দুর্বল হয়ে পড়ে। এই সুযোগই কাজে লাগিয়ে নেয় ইস্টবেঙ্গল এবং ২২ মিনিটের মধ্যে পরপর চার-চারটি গোল করে অভাবনীয় জয় ছিনিয়ে নেয়।
শুরু থেকেই আক্রমণ ও প্রতি আক্রমণে লিগ টেবলের ১১ নম্বর বনাম পাঁচ নম্বরের খেলা জমে ওঠে এ দিন। মাদি তালাল, সল ক্রেসপো, জিকসন সিং-দের অনুপস্থিতিতে আনোয়ার আলিকে মাঝমাঠে রেখে এ দিন খেলা শুরু করে ইস্টবেঙ্গল। ডেভিড লালনসাঙ্গাকে সামনে রেখে ও ক্লেটন সিলভাকে তাঁর পিছনে রেখে ৪-৪-১-১-এ দল সাজান তাদের কোচ অস্কার ব্রুজোন। পাঞ্জাব এফসি তিনটি পরিবর্তন করে দল নামায়।
আত্মবিশ্বাসী আক্রমণে ঘন ঘন ওঠা ইস্টবেঙ্গল দশ মিনিটের মাথাতেই এগিয়ে যেতে পারত। বাঁ প্রান্ত থেকে ক্লেটনের ফ্রিকিকে উড়ে আসা বল প্রতিপক্ষের জালে বল জড়িয়ে দেন ডেভিড। কিন্তু তিনি অফসাইডে থাকায় সেই গোল বাতিল হয়ে যায়। এর পর থেকেই ক্রমশ নিয়ন্ত্রণ ও আক্রমণের তীব্রতা কমতে থাকে লাল-হলুদ বাহিনীর। ২২ মিনিটের মাথায় তাদের হাইলাইন ফুটবলের ফলে রক্ষণে শূন্যস্থানের সুযোগ নিয়ে তীব্র কাউন্টার অ্যাটাকে উঠে এগিয়ে যায় পাঞ্জাব এফসি।
প্রতি আক্রমণে ওঠা আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার নর্বের্তো ভিদাল ডান দিক দিয়ে উঠে ভাসানো ক্রস দেন দূরের পোস্টের সামনে থাকা হাঙ্গেরিয়ান ফরোয়ার্ড আসমির সুলজিককে। মহম্মদ রকিপ তাঁকে আটকানোর চেষ্টা করেও পারেননি। কোনাকুণি শটে জালে বল জড়িয়ে দেন সুলজিক (১-০)।
দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকসের অনুপস্থিতিতে যে ইস্টবেঙ্গলের আক্রমণ কতটা নির্বিষ হয়ে যেতে পারে, তা এ দিনই বোঝা যায়, যখন একের পর এক গোলের সুযোগ তৈরি করেও ফিনিশ করতে পারেনি তারা। প্রথমার্ধে একটিও শট গোলে রাখতে পারেনি লাল-হলুদ বাহিনী। তবে পাঞ্জাবের তিনটি শট ছিল লক্ষ্যে। ৩৪ মিনিটের মাথায় লুকা মাজেনের গোলমুখী শট গোলকিপার প্রভসুখন গিল অনবদ্য সেভ না করলে তখনই ব্যবধান বাড়িয়ে নিত পাঞ্জাব। গিলের হাত থেকে ছিটকে আসা বল চমৎকার ভাবে বিপদমুক্ত করেন লালচুঙনুঙ্গা।
তবে তবে পাঁচ মিনিটের মধ্যেই ফের গোল করে ব্যবধান বাড়িয়ে নেন ভিদাল। ৩৯তম মিনিটে বক্সের বাঁ দিকে থ্রো ইন থেকে বল পেয়ে বক্সে ঢুকে কোণাকুনি শটে গোলে বল ঢুকিয়ে দেন মেসির দেশের ফুটবলারটি। আনোয়ার আলি তাঁকে ক্লোজ ডাউন করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন (২-০)। সংযুক্ত সময়ে প্রতিপক্ষের পেনাল্টি বক্সের সামনে থেকে ফ্রিকিক পায় ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু ক্লেটনের কিক মানবপ্রাচীরে থাকা নিখিল প্রভুর মাথায় লেগে বারের ওপর দিয়ে উড়ে যায়।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই নিখুঁত সেটপিসে গোল করে ব্যবধান কমান হিজাজি মাহের। প্রথমার্ধে ক্লেটনের যে ধরনের ফ্রিকিক থেকে ডেভিড গোলে বল ঠেলেছিলেন, এ বার সে রকমই আর একটি মাপা ফ্রিকিক বক্সের মধ্যে পাঠান ব্রাজিলীয় তারকা। আগেরবার ছিল বাঁদিক থেকে, এ বার ডানদক থেকে। এ বার বল গিয়ে পড়ে বক্সের মাঝখানে এবং লাফিয়ে উঠে জোরালো হেডে সেই বল গোলে পাঠান জর্ডনিয়ান ডিফেন্ডার (১-২)।
হিজাজিকে আটকাতে গিয়ে বুকের পাঁজরে চোট পান পাঞ্জাবের ক্রোয়েশিয়ান ডিফেন্ডার ইভান নোভোসেলিচ। এই চোট তিনি প্রথমার্ধেই পেয়েছিলেন, তবে খেলা চালিয়ে যান। কিন্তু এ বার মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন। তিনি বেরিয়ে যাওয়ায় পাঞ্জাব রক্ষণে যে ফাটল তৈরি হয়, তা কাজে লাগিয়েই ৫৩ মিনিটের মাথায় সমতা এনে ফেলে লাল-হলুদ বাহিনী।
বিরতির পরেই পায়ে চোট পাওয়া নাওরেম মহেশের জায়গায় নামা পিভি বিষ্ণুই হয়ে ওঠেন দিনের নায়ক। অসাধারণ গোল করে সমতা এনে দেন। ডানদিক থেকে রকিপের হাওয়ায় ভাসানো ক্রস সুরেশ মিতেই হেডে ক্লিয়ার করলেও তা গিয়ে পড়ে সম্পুর্ণ অরক্ষিত বিষ্ণুর পায়ে। বক্সে ঢুকে সোজা গোলে শট নেন তিনি, যা সেই সুরেশের পায়ে লেগেই গোলে ঢুকে পড়ে (২-২)।
এর পরেও যে চমক বাকি ছিল, তা বোধহয় ভাবতেই পারেনি গ্যালারিতে থাকা ইস্টবেঙ্গল সমর্থকেরা। সেই চমকদার উপহার তাদের এনে দেন সেই সুরেশ, যাঁর ভুলে সমতা আনতে সমর্থ হয়। এ বার বক্সের ডানদিক থেকে পাঠানো নন্দকুমারের ক্রস নিজেদের গোলের দিকে মুখ করে ক্লিয়ার করতে গিয়ে জালে জড়িয়ে দেন তিনি (২-৩)।
দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম ১৪ মিনিটের মধ্যেই তিন-তিনটি গোল পেয়ে যাওয়ায় প্রবলভাবে উজ্জীবিত ইস্টবেঙ্গল আক্রমণের ঝড় তোলে। তাদের আটকাতে গিয়ে ৬৪ মিনিটের মাথায় দ্বিতীয় হলুদ তথা লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন পাঞ্জাবের ডিফেন্ডার খাইমিনথাং লামডিং। ফলে তাদের রক্ষণ আরও দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ৬৭ মিনিটের মাথায় চতুর্থ গোলও পেয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল।
অফসাইডের ফাঁদে পড়ায় যাঁর গোল বাতিল হয়েছিল, সেই ডেভিড এ বার সেই আফসোস মিটিয়ে নেন দলকে চতুর্থ গোল এনে দিয়ে। এই গোলেও বিষ্ণুর প্রত্যক্ষ অবদান ছিল। বক্সের সামনে বাঁদিক থেকে যে ক্রস বাড়ান তিনি, সেই ক্রসেই সামনে ডাইভ দিয়ে হেড করে গোল করেন তিনি (২-৪)।
লামডিংয়ের লাল কার্ড ও ইস্টবেঙ্গলের চতুর্থ গোলের পরই পাঞ্জাব এফসি-র ফুটবলারদের শরীরি ভাষায় হার মেনে নেওয়ার ইঙ্গিত ছিল স্পষ্ট। ৭৮ মিনিটর মাথায় লুকা মাজেন মাঠের বাইরে চলে যাওয়ার পর আরও গা ছাড়া হয়ে যায় তারা। এরই মধ্যে অবশ্য ৮১ মিনিটের মাথায় পরিবর্ত ফরোয়ার্ড কিপজেন ও সংযুক্ত সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে ভিদাল গোলে শট নেন। দু’বারই সেভ করেন গিল।
ইস্টবেঙ্গল অবশ্য আরও একটি গোলের খোঁজে ছিল, যে সুযোগ ফের বিষ্ণুর কাছেই আসে ৮৮ মিনিটের মাথায়, যখন ক্লেটন বক্সের সামনে থেকে তাঁকে গোলের বল প্রায় সাজিয়ে দেন। কিন্তু বাঁ দিক দিয়ে বক্সে ঢুকে যে কোণাকুনি শট নেন বিষ্ণু, তা অল্পের জন্য দ্বিতীয় পোস্টের বাইরে চলে যায়। ততক্ষণে অবশ্য গ্যালারিতে জয়ের সেলিব্রেশন শুরু হয়ে গিয়েছে।
(তথ্য: আইএসএল মিডিয়া)
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।
আরও পড়ুন: বিজয় হাজারেতেও মুম্বই দল থেকে ছাঁটাই, 'আর কী করতে হবে...', প্রশ্ন ব্রাত্য পৃথ্বী শয়ের