Mohun Bagan SG: পরিবর্ত হিসাবে নেমে জ্বলে উঠলেন স্টুয়ার্ট, কামিংসের গোলে ফের ISL টেবিলের শীর্ষে মোহনবাগান
Mohun Bagan Super Giant vs Chennaiyin FC: ম্যাচের ৮৬ মিনিটের মাথায় জেসন কামিংসের (Jason Cummings) গোলে চলতি আইএসএলের ষষ্ঠ জয় তুলে নেয় সবুজ-মেরুন বাহিনি।
কলকাতা: নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার চার মিনিট আগে মাঠে নামেন তিনি। সব মিলিয়ে দশবার বলে পা ছোঁয়ান। এর মধ্যেই তাঁর একটি শট পোস্টে ও একটি বারে লেগে ফিরে আসে। ম্যাচের একমাত্র গোলটি হয় তাঁরই পাস থেকে এবং ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়ের খেতাবটিও পেয়েছেন তিনিই।
তিনি গ্রেগ স্টুয়ার্ট (Greg Stewart)। শনিবার রাতে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে চেন্নাইয়িন এফসি-র বিরুদ্ধে মোহনবাগানের (Mohun Bagan) ১-০-য় জয়ের চেয়ে স্টুয়ার্টের এই সংক্ষিপ্ত অথচ অসাধারণ পারফরম্যান্সই উঠে আসে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
শেষ কবে যুবভারতীতে গোল করতে পারেনি মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট, শনিবার বৃষ্টিভেজা যুবভারতীতে এই নিয়ে যখন আলোচনা তুঙ্গে, তখনই ম্যাচের ৮৬ মিনিটের মাথায় জেসন কামিংসের (Jason Cummings) গোলে চলতি আইএসএলের ষষ্ঠ জয় তুলে নেয় সবুজ-মেরুন বাহিনি। গতবারের লিগ শিল্ডজয়ীরা এ দিন প্রায় সারাক্ষণই সাদামাটা ফুটবল খেলার পর শেষ দিকে যখন কামিংস ও স্টুয়ার্ট মাঠে নামেন তখনই তেতে ওঠে পরিবেশ। জয়সূচক গোল পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন এই দুই তারকা।
কামিংস নামেন ৭৫ মিনিটের মাথায় ও তার দশ মিনিট পর নামেন স্টুয়ার্ট। মাঠে নেমেই যে শটটি নেন স্টুয়ার্ট, তা পোস্টে লেগে ফিরে আসে। ফিরতি বল সতীর্থদের পা ঘুরে যখন ফের বক্সের বাইরে তাঁর পায়ে আসে, তখনই তিনি গোলের পাসটি বাড়ান বক্সের মাথায় থাকা কামিংসকে। সময় নষ্ট না করে ওখান থেকেই গোলে শট নেন অস্ট্রেলীয় ফরোয়ার্ড। বারের নীচ দিয়ে বল জালে জড়িয়ে যায়, গোলকিপারের পক্ষে যার নাগাল পাওয়া ছিল অসাধ্য।
আইএসএলের ইতিহাসে এর আগে তিনবার ৮৫ মিনিট বা তার পরে পাওয়া গোলে ম্যাচ জিতেছে মোহনবাগান। এ মরশুমেই, ২৩ সেপ্টেম্বর নর্থইস্টের বিরুদ্ধে ৮৭ মিনিটে এই কামিংসের গোলেই জেতে তারা। ২২-২৩ মরশুমে এইই নর্থইস্টের বিরুদ্ধে শুভাশিসের ৮৯ মিনিটের গোলে ও জামশেদপুরের বিরুদ্ধে হুগো বুমৌসের ৯১ মিনিটের গোলে জেতে সবুজ-মেরুন ব্রিগেড।
শনিবারের এই জয়ের ফলে ফের লিগ টেবলের শীর্ষে পৌঁছে গেল কলকাতার দল। নয় ম্যাচে ২০ পয়েন্ট তাদের ও বেঙ্গালুরু এফসি-র। কিন্তু গোলপার্থক্যে (৯) এগিয়ে সবুজ-মেরুন বাহিনী। তবে এই জয়ের আনন্দের মাঝেও বাগান-শিবিরে খারাপ খবর নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি-র বিরুদ্ধে আগামী ম্যাচে খেলতে পারবেন না দলের দুই নির্ভরযোগ্য ডিফেন্ডার শুভাশিস বোস ও আলবার্তো রড্রিগেজ।
এ দিন শুরু থেকেই আধিপত্য বিস্তার করে মোহনবাগান। প্রথম দশ মিনিট তাদের দখলে ছিল প্রায় ৮০ শতাংশ বল। সেই সময় চেন্নাইয়িনকে আল্ট্রা ডিফেন্সিভ ফুটবল খেলতে দেখা যায়। দশ মিনিট পর থেকে চেন্নাইয়িন পাল্টা আক্রমণে ওঠা শুরু করে। বেশ কয়েকবার বিশাল কয়েথের পরীক্ষা নেন কোনর শিল্ডস, উইলমার জর্ডনরা। ২৪ মিনিটের মাথায় ফারুখ চৌধুরিকে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন শুভাশিস বসু, যার ফলে তিনি নর্থইস্ট ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে পরের ম্যাচে খেলতে পারবেন না। ম্যাচের শেষে হলুদ কার্ড দেখেন আলবার্তো রড্রিগেজও। তাই তিনিও পরের ম্যাচে নেই
২৪ মিনিটের মাথায় গোল লাইনের সামনে বল নিয়ে পৌঁছে যান পেট্রাটস। কিন্তু ডিফেন্ডাররা তাঁকে বাধা দেওয়ায় গোলে বল ঠেলতে পারেননি। ৩৫ মিনিটের মাথায় লিস্টন কোলাসোর দূরপাল্লার শট গোলে ঢোকার ঠিক আগে আটকে দেন বিকাশ ইউমনাম। এর তিন মিনিট পরে ফের কোলাসো একই রকম লম্বা শট নেন, যা গোলের কোণ দিয়ে ঢোকার আগে শরীরকে ডানদিকে যথাসম্ভব শূন্যে ছুড়ে দিয়ে বিপদমুক্ত করেন গোলকিপার মহম্মদ নাওয়াজ। ৪৪ মিনিটের মাথায় বাঁ দিক দিয়ে বক্সে ঢুকে যে বিপজ্জনক ক্রস দেন কোলাসো, তা রায়ান এডওয়ার্ডস ক্লিয়ার না করলে হয়তো গোল পেতেন মনবীর।
অন্যদিকে ৩০ মিনিটের মাথায় এডওয়ার্ডসের গোলমুখী হেড বাঁচান বিশাল। এ ছাড়া তেমন কোনও বিপজ্জনক সুযোগ তৈরি করতে পারেনি চেন্নাইয়িন। প্রথমার্ধে ৬৯ শতাংশ বলই ছিল সবুজ-মেরুন বাহিনির দখলে। তবে দুই দলই একটি করে শট লক্ষ্যে রাখে। মোহনবাগানের দু’টি শট তবু গোলের বাইরে যায়। কিন্তু চেন্নাইয়িনের অ্যাটাকাররা আর কোনও শটই নিতে পারেননি গোলে। মোহনবাগানের (২৭০) অর্ধেক পাসও খেলতে পারেনি ওয়েন কোইলের দল (১১২)।
আশিস রাই ও গ্রেগ স্টুয়ার্ট এ দিন চোট সারিয়ে স্কোয়াডে ফিরলেও গত ম্যাচের প্রথম এগারোয় কোনও বদল করেননি বাগান-কোচ মোলিনা। রক্ষণে দীপেন্দু ও আক্রমণে ম্যাকলারেনের সঙ্গে দিমিত্রিয়স পেট্রাটসকেই রাখেন। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে তিনি দীপেন্দুর জায়গায় নামেন আশিস।
৫১ মিনিটের মাথায় আলবার্তো রড্রিগেজ যে ভাবে প্রায় মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে কার্যত বিনা বাধায় প্রতিপক্ষের বক্সে ঢুকে গোলে শট নেন, তাতে চেন্নাইয়িনের রক্ষণের দুর্বলতা প্রকট হয়ে ওঠে। তাও বাগান অ্যাটাকরার প্রতিপক্ষের এই দুর্বলতা কাজে লাগাতে পারেনি। সে যাত্রায় আলবার্তোর শটে তেমন জোর না থাকায় নাওয়াজের তা আটকাতে খুব একটা অসুবিধা হয়নি।
দ্বিতীয়ার্ধের খেলা শুরু হওয়ার মিনিট দশেক পর থেকে চেন্নাইয়িনের ওপর ফের চাপ বাড়াতে শুরু করে। তবে প্রতিপক্ষের রক্ষণ তেমন দুর্ভেদ্য না হওয়া সত্ত্বেও গোল এরিয়ায় এসে বারবার খেই হারিয়ে ফেলে তারা। গত ম্যাচের মতো ধারালো আক্রমণ অন্তত ম্যাচের ৬০ মিনিট পর্যন্ত দেখা যায়নি।
আক্রমণে গতি বাড়ানোর জন্য ৬৩ মিনিটের মাথায় দীপক টাঙরির জায়গায় আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার সহাল আব্দুল সামাদকে নামায় মোহনবাগান। মাঠে নামার পাঁচ মিনিটের মধ্যে বাঁ দিক থেকে বক্সের মধ্যে দুর্দান্ত একটি ক্রস ভাসিয়ে দেন সহাল, যা ঠিকমতো হেড করতে পারলে হয়তো গোল পেতেন মনবীর। কিন্তু তা পারেননি তিনি।
নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার কুড়ি মিনিট আগে নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড ড্যানিয়েল চিমাকে নামান চেন্নাইয়িন কোচ কোইল। তুলে নেন উইলমার জর্ডনকে। একই সঙ্গে ব্রাজিলীয় মিডফিল্ডার লুকাস ব্রামবিলাও নামেন এলসিনহোর জায়গায়। আক্রমণে গতি বাড়ানোর উদ্দেশেই এই জোড়া পরিবর্তন করেন চেন্নাইয়িন কোচ এবং এর ফলে গতি কিছুটা বাড়েও। ৭৭ মিনিটের মাথায় ইরফান ইয়াডওয়াডের গোলমুখী জোরালো শট সেভ করেন বিশাল।
অন্যদিকে, ৭৫ মিনিটের মাথায় মোহনবাগান রিজার্ভ বেঞ্চ থেকে জেসন কামিংস ও আশিক কুরুনিয়ান নামেন যথাক্রমে জেমি ম্যাকলারেন ও কোলাসোর জায়গায়। ম্যাকলারেন এ দিন সেরা ছন্দে ছিলেন না। ৮৩ মিনিটের মাথায় কামিংসকে গোলের দুর্দান্ত সুযোগ তৈরি করে দেন মনবীর, যখন বাঁ দিক থেকে শুভাশিসের উড়ে আসা ক্রস বুক দিয়ে রিসিভ করে কামিংসের কাছে পাঠিয়ে দেন তিনি।
নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার চার মিনিট আগে পেট্রাটসের জায়গায় নামা সেই গ্রেগ স্টুয়ার্টই শেষ পর্যন্ত সমর্থকদের মুখে হাসি ফোটান। তাঁর শট পোস্টে লেগে ফিরে আসে। ফিরতি বল মনবীর, আশিসের পা ঘুরে যখন ফের বক্সের বাইরে তাঁর পায়ে আসে, তখনই তিনি গোলের পাসটি বাড়ান কামিংসকে। বক্সের মাথা থেকে সোজা গোলে শট নেন তিনি (১-০)। ঠিক এক মাস পরে মাঠে নামা এই স্কটিশ মিডফিল্ডারই সারা মাঠ মাতিয়ে দেন এ দিন। গত মাসের ৩০ তারিখে হায়দরাবাদ এফসি-র বিরুদ্ধে শেষ মাঠে নেমেছিলেন তিনি। তার পর এ দিন পাঁচ মিনিটের জন্য মাঠে ফিরে দলকে জিততে সাহায্য করে ম্যাচের সেরার খেতাবটিও জিতে নেন স্টুয়ার্ট।
সংযুক্ত সময়ের তৃতীয় মিনিটে ফের স্টুয়ার্টের ফ্রি কিক থেকে বল পেয়ে গোলে শট নেন কামিংস। কিন্তু এ বার বিকাশের গায়ে লেগে বল গোলের বাইরে চলে যায়। এর দু’মিনিট পরে ফের স্টুয়ার্ট বক্সের মাথা থেকে গোলে শট নেন, যা বারে লেগে ফিরে আসে। ফিরতি বল গোলে ঠেলেও দেন তিনি। কিন্তু এ বার কামিংস অফসাইডে থাকায় সেই গোল বাতিল হয়ে যায়। এর পরে আর ব্যবধান বাড়ানোর সময় ছিল না সবুজ-মেরুন বাহিনির হাতে। (সৌ: আইএসএল মিডিয়া)
আরও পড়ুন: বন্ধুর প্রেমের প্রস্তাবে রাজি, স্নেহাশিস-কন্যার নতুন ইনিংস, খুশির হাওয়া সৌরভের পরিবারে