Exclusive Interview: উইম্বলডন কোর্টে বাঙালি লাইন আম্পায়ার সৈকত রায়ের স্বপ্নের সফর
উইম্বলডনে বাঙালি রাজ। লাইন আম্পায়ার হিসেবে উইম্বলডনে ম্যাচ খেলিয়েছেন হুগলির সৈকত রায়। খেলিয়েছেন জুনিয়র উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন আরেক বাঙালি সমীর বন্দ্যোপাধ্যায়কে। সেই অভিজ্ঞতাই ভাগ করলেন।
সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়, হুগলি: উইম্বলডন টেনিস টুর্নামেন্ট আমরা ছোটবেলা থেকেই নাম শুনে আসছি। যারা টেনিস খেলে বা টেনিস খেলা দেখতে ভালবাসেন, তাঁদের কাছে উইম্বলডন টেনিস টুর্নামেন্ট খেলা বা দেখা স্বপ্নের ব্যাপার। সারাবিশ্বে এরকম প্রচুর মানুষ আছে যারা নিজেদের টাকা পয়সা খরচ করে শুধুমাত্র উইম্বলডন টেনিস দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকে। প্রতি বছরের মতোই এই বছরও ভারত থেকে ১০০ জনের মতো এই প্রতিযোগিতায় আম্পায়ারিং করার জন্য আবেদন করেছিলেন। এরমধ্যে উইম্বলডনের সংগঠকরা মাত্র ৭ জনকে বেছে নিয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গ থেকে ৪ জন তার মধ্যে তিনজন হুগলি জেলা থেকে। তাঁদের একজন হুগলির সৈকত রায়। এবারের উইম্বলডনে লাইন আম্পায়ার হিসেবে কাজ করেছেন সৈকত।
কোভিড পরিস্থিতির জন্য ভারত থেকে খুব বেশি মানুষকে এই মুহূর্তে লন্ডনের ভিসার অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতেই সৈকতদের আম্পায়ারিং টিমের প্রধান নীতিন কন্নমওয়ারের প্রচেষ্টায় ইউকে হাইকমিশন থেকে ভারতীয় হাইকমিশনে নির্দেশ দেওয়া হয় ৭ ভারতীয়কে জরুরী ভিত্তিতে ভিসার অনুমোদন দেওয়ার। সৈকত বলেন, ‘ভারতকে রেড লিস্টেড কান্ট্রির মধ্যে রাখার জন্য ভিসার অনুমোদন পেতে ভীষণ অসুবিধার মধ্যে আমাদের সবাইকেই পড়তে হয়েছে। রওনা হবার দুদিন আগে আমরা সাতজন ভারতীয় আমাদের হাতে পাসপোর্ট পাই। কিন্তু তখন আরেকটা অসুবিধার সম্মুখীন আমরা হই। করোনার জন্য ভারত থেকে সরাসরি লন্ডনের যাবার অনুমতি পাই না, নিয়ম অনুযায়ী যেকোনো একটি দেশে ১১ দিন অতিক্রম করে তবেই আমরা লন্ডনে পৌঁছতে পারব। মাত্র তিনটে দেশকে আমরা বেছে নেই ঢোকার ছাড়পত্র হিসেবে। তারমধ্যে রাশিয়ার ভিসা পেতে ৫ দিন দেরি হত বলে আর্মেনিয়ার ভিসার জন্য আবেদন করি আমরা।’
সৈকত আরও বলেন, ‘জুন মাসের ৯ তারিখে আমরা তিনজন বাঙালি আমি শৈবাল ও সোমনাথ কলকাতা থেকে সার্বিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিই। আমরা সার্বিয়া পৌঁছোই ১০ তারিখ। নিয়ম অনুযায়ী লন্ডনে ঢোকার আগে সার্বিয়াতে আমাদের ১১ দিন থাকতে হত আমরা তাই আগে থেকেই হোটেল বুক করে রেখেছিলাম।’
সার্বিয়াতে পৌঁছানোর পর কার্যত হোটেলেই বন্দি ছিলেন সৈকত ও তাঁর দল। নোভাক জকোভিচের দেশেই আস্তানা গড়তে হয় সৈকতদের। সেখানে ১১ দিন কাটানোর পরই ২১ জুন ৩ বাঙালি মিলে লন্ডনের উদ্দেশ্য়ে রওনা দেন।
উইম্বলডনে সংগঠকরা চলতি বছরে করোনার জন্য প্রচন্ড কড়াকড়ির মধ্যে রেখেছিল। হোটেল এবং খেলার মাঠ ছাড়া কোথাও যাবার অনুমতি ছিল না। সংগঠনের তরফ থেকে হোটেল থেকে মাঠে যাবার জন্য আলাদা করে গাড়ির ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। সৈকত বলেন, '২২শে জুন থেকে আমরা কোয়ালিফাইং খেলানো শুরু করি। কোয়ালিফাইং রাউন্ডের খেলা গুলো Rohampton University Ground এবং মূল পর্বের খেলা গুলি All England Lawn Tennis Club -এ অনুষ্ঠিত হয়। এই দুটি মাঠেই আঠারোটি করে Tennis Court e সম্পূর্ণ প্রতিযোগিতাটি পরিচালনা করা হয়। কোয়ালিফাইং প্রতিযোগিতাটি ৪ দিন ধরে এবং মূল পর্বের খেলা গুলি ১৪ দিন ধরে অনুষ্ঠিত হয়।'
২৮ জুন সকাল থেকে মূলপর্বের খেলা শুরু হয়। সেই অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলতে গিয়ে সৈকত বলেন, 'প্রথম দিনই আমার ডিউটি কোর্ট ১২ তে পড়ে। সাধারণত ওই মাঠে বেশ কিছু ভাল খেলোয়াড়দের খেলাই থাকে। Gael Monfils ( France), Aryna Sabalenka ( Belarus) এদের খেলা সেদিন ১২ নম্বর মাঠেই ছিল। প্রথম দিন আমি ওই ১২ নম্বর মাঠেই ২ টো চ্যালেঞ্জ জিতি। এভাবেই ক্রমশ এক এক দিন এক একটা মাঠে আমার ডিউটি পড়তে থাকে। উইম্বলডন টুর্নামেন্ট ১৪ দিনের হলেও সকলের কাজ ১৪ দিন থাকে না।'
জুনিয়র উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন এবার এক বাঙালি সমীর বন্দ্যোপাধ্যায়। যা নিয়ে বেশ খুশি সৈকত বলেন, 'এই মুহুর্তে ভারতে সবচেয়ে বেশি উচ্ছ্বাস যাকে নিয়ে সেই সমীর বন্দ্যোপাধ্যায়ের খেলাও আমি ২ দিন খেলিয়েছি। বাঙালির নাম উইম্বলডনে দেখে খুশি হয়ে আমিই নিজে থেকে তার সঙ্গে বাংলায় কথা বলা শুরু করি। সেও আধো আধো ভাবে বাংলায় আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করে। আম্পায়ার হিসেবে কোনো খেলোয়াড়দের সঙ্গে আমরা বেশি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে কথা বলতে পারি না বলে অল্প কথায় তার সাথে কথা মিটিয়ে আমি চুপ করে যাই। সেও ব্যাপারটা ভালই বুঝতে পারে বলে চুপ করে যায়। বিশ্বাস করুন তখনও কিন্তু আমি ভাবতে পারিনি যে এই বাঙালি ছেলেটাই এত বড় একটা ইতিহাস রচনা করতে পারে।।তবে একটা কথা অবশ্যই বলব যে এই বাঙালি ছেলেটার মনের জোর অসাধারণ। কঠিন সময়ে মাথা ঠান্ডা রেখে যেভাবে খেলল, ওর থেকে আমাদের দেশের জুনিয়র খেলোয়াড়দের শেখা উচিত বলে আমার মনে হয়।'