Ajinkya Rahane: দল থেকে বাদ, সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রোল, ১৭ মাসের অপেক্ষার পর লড়াকু কামব্যাক...
Ajinkya Rahane Update: সোশ্যাল মিডিয়ায় একের পর এক ট্রোল। তাঁকে নিয়ে সমালোচনা। বিরাট কোহলির অনুপস্থিতিতে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে বর্ডার-গাওস্কর ট্রফি জিতে রাজকীয় অভ্যর্থনা পেয়েছিলেন।
মুম্বই: বাংলায় একটা প্রবাদ আছে পুরনো চাল ভাতে বাড়ে। ভারতীয় ক্রিকেটে এই মুহূর্তে সবচেয়ে আলোচিত নাম অজিঙ্ক রাহানের সঙ্গে এই প্রবাদটি মিলে যেতে পারে। বয়স ৩৫ ছুঁইছুঁই। বুড়ো হয়েছেন। টেস্ট প্লেয়ারের তকমা সেঁটে গিয়েছিল দীর্ঘদিন আগেই। কিন্তু গত বছর থেকে সেই ফর্ম্যাটেও মুম্বইয়ের এই ব্য়াটারকে দেখতে চাইছিলেন না কেউই। সোশ্যাল মিডিয়ায় একের পর এক ট্রোল, মিম, তাঁকে নিয়ে সমালোচনা। বিরাট কোহলির অনুপস্থিতিতে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অধিনায়ক হিসেবে বর্ডার-গাওস্কর ট্রফি জিতে রাজকীয় অভ্যর্থনা। কিন্তু তার মাস দুয়েকের মধ্যেই প্রশংসার মধ্যগগন থেকে রাহানেকে মাটিতে ছুড়ে ফেললেন সেই মানুষগুলোই। খারাপ পারফরম্যান্সের জন্য জাতীয় দল থেকে বাদও পড়লেন। টানা ১৭ মাস তরুণ ক্রিকেটারদের সঙ্গে ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলেছেন, নিজেকে ভেঙেছেন-গড়েছেন, রানও করেছেন, প্রচুর রান করেছেন। আর এরপর? এরপর একেবারে রাজার মত কামব্যাক। ডানহাতি ব্য়াটারকে হিসেবের খাতা থেকে সরিয়ে দেওয়া মানুষগুলোয় গত ২ সপ্তাহ ধরে রাহানের আইপিএলে নতুন অবতার থেকে চমকে উঠেছেন। জাতীয় দলের তাঁকে ফেরানোর দাবি তুলেছেন। বোর্ডের নির্বাচকমণ্ডলীরও সাহস হয়নি এমন টেকলিক্যালি শক্তিশালী ব্যাটারকে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালের জন্য ভারতীয় স্কোয়াড থেকে দূরে রাখার। অবশেষে ফিরলেন তিনি। আগামী ৭ জুন থেকে শুরু হতে চলা টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালেও অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ভারতীয় একাদশে হয়ত দেখা যাবে রাহানেকে।
১৭ মাসের অপেক্ষা
২০২২ সালের জানুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টেস্টে শেষবার জাতীয় দলের জার্সিতে মাঠে নেমেছিলেন। এরপর ফেব্রুয়ারি মাসে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ থেকে তাঁকে ছেঁটে ফেলা হয়। তবে এর থেকেও খারাপ খবর অপেক্ষা করছিল রাহানের জন্য। গত বছর মার্চ মাসের ২৫ তারিখ বোর্ডের বার্ষিক চুক্তির আওতা থেকেও ছেঁটে ফেলা হল ডানহাতি ব্যাটারকে। বরাবরের মুখচোরা রাহানে ডুবে গেলেন নিজেকে নতুনভাবে গড়ে তুলতে। আইপিএলে কেকেআরের জার্সিতে গত মরসুমে ভাল খেলতে না পারলেও ঘরোয়া ক্রিকেটের মঞ্চকে দারুণভাবে কাজে লাগালেন তিনি। ২০২১-২৩ রঞ্জি মরসুমে ৭ ম্যাচে ১১ ইনিংস খেলেছেন জিঙ্কস। ঝুলিতে পুরেছেন ৬৩৪ রান। গড় ৫৭.৬৪। গত মরসুমে ঘরোয়া ক্রিকেটে একটি দ্বিশতরানও রয়েছে তাঁর।
আইপিএলের নিলামের আগে কেকেআর রাহানেকে ছেড়ে দিয়েছিল। মিনি অকশন থেকে বেস প্রাইস ৫০ লক্ষ টাকাতেই ভারতীয় টেস্ট দলের প্রাক্তন সহ অধিনায়ককে দলে নেয় সিএসকে। ব্যাস, মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ছত্রছায়ায় একেবারে আমূল বদলে ফেললেন নিজেকে। চলতি আইপিএলে ৫ ইনিংস খেলে ২০৯ রান করে ফেলেছেন রাহানে। গড় ৫২.২৫। স্ট্রাইক রেট চলতি টুর্নামেন্টে যে কোনও ব্য়াটারের মধ্যে সর্বাধিক ১৯৯.৫। গত মরসুমে যেখানে কেকেআরের জার্সিতে মাত্র ৩টি ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন, এবার সেখানে তাঁর ঝুলিতে রয়েছে ১১টি ছক্কা ও ১৮টি বাউন্ডারি এখনও পর্যন্ত।
মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে ২৭ বলে ৬১ হাঁকিয়েছিলেন সিএসকের জার্সিতে অভিষেকে। কেকেআরের বিরুদ্ধে ২৯ বলে অপরাজিত ৭১। কিন্তু ধ্রুপদী ঘরানার ব্যাটার রাহানের থেকে ল্য়াপ স্কুপ, রিভার্স স্কুপ দেখে তো চোখ ছানাবড়া দর্শকদের। আরে এ কোন রাহানে! সবাই অবাক। নেপথ্যে কী? পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে এসে বিরাটের একসময়ের ডেপুটির মুখে শোনা গিয়েছিল মাহি বন্দনা। কীভাবে তাঁর জীবনে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি সঞ্জীবনী হয়ে উঠেছেন, তা জানিয়েছিলেন। হয়ত সত্যিই তাই। এবার আর পেছনে ফিরে তাকানোর সময় নেই। বুড়ো হয়েছেন, কিন্তু ফুরিয়ে যাননি তিনি। এটাই প্রমাণ করার পালা জাতীয় দলেও। গত বারের বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের সর্বাধিক রান স্কোরার ছিলেন। এবারের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালেও কি রাহানের ব্য়াট জ্বলে উঠবে? উত্তর সময়ই দেবে।