Vivek Prasad Exclusive: স্কুলশিক্ষক বাবাকে লুকিয়ে খেলা শুরু, হকিতে ভারতকে পদকের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন বিবেক
প্রত্যেক ম্যাচের আগে মাকে ফোন করেন বিবেক। পয়মন্ত মনে করেন বলে। ভারত-বেলজিয়াম ম্যাচের আগেও করবেন। গোটা গ্রামে উৎসবের প্রস্তুতি সারা...
![Vivek Prasad Exclusive: স্কুলশিক্ষক বাবাকে লুকিয়ে খেলা শুরু, হকিতে ভারতকে পদকের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন বিবেক ABP Exclusive: Vivek Prasad, Indian Hockey player family shared his life stories and excited before tomorrow's India vs Belgium semifinal Vivek Prasad Exclusive: স্কুলশিক্ষক বাবাকে লুকিয়ে খেলা শুরু, হকিতে ভারতকে পদকের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন বিবেক](https://feeds.abplive.com/onecms/images/uploaded-images/2021/08/02/564d11b9a974eaa2b59656f99141900b_original.jpg?impolicy=abp_cdn&imwidth=1200&height=675)
কলকাতা: বাবা স্কুলশিক্ষক। কড়া ধাঁচের মানুষ। বাড়ির ছোট ছেলেকে সারাক্ষণ বলতেন, 'খেলাধুলো করে কী হবে, পড়াশোনা করো। খেলাধুলো নিয়ে পড়ে থাকলে কেরিয়ার তৈরি হবে না। ভাল করে পড়াশোনা করে বড় হয়ে চাকরির চেষ্টা করতে হবে।'
একরত্তির অবশ্য বাবার ফতোয়া শুনতে ভাল লাগত না। অপেক্ষা করত, কখন বাবা স্কুলে যাবেন, আর সে বেরিয়ে পড়বে হকি স্টিক নিয়ে। সারাদিন খেলার পর সন্ধ্যায় বাবা আসার আগে বাড়ি ফিরে পড়তে বসে যেত। বাবা ঘুণাক্ষরে টেরও পেতেন না যে, ছেলে সারাদিন হকি খেলে ফিরেছে।
সেদিনের সেই একরত্তির বয়স এখন ২১। মঙ্গলবার সকালে ৪৯ বছর পর অলিম্পিক্স হকির সেমিফাইনাল খেলতে নামছে ভারত। আর বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে শেষ চারের ম্যাচে জাতীয় দলের অন্যতম ভরসা, মিডফিল্ডার বিবেক সাগর প্রসাদ। ভারত-বেলজিয়াম দ্বৈরথ নিয়ে উত্তেজনায় ফুটছেন সেদিনের সেই স্কুলশিক্ষক রোহিত প্রসাদ।
মধ্যপ্রদেশের ইতারসি থেকে জুম কলে এবিপি লাইভকে বিবেকের বাবা বললেন, 'ছোট থেকেই ও হকি ভালবাসে। কোনওদিনও খেয়াল করিনি। রজন পটেল নামের একজন ওকে খেলা শেখাত। আমি খুব একটা আমল দিইনি। ওকে খেলতে বারণ করতাম। পড়াশোনা করতে বলতাম। আমার মনে হতো, পড়াশোনা করলেই ওর কেরিয়ার তৈরি হবে। কিন্তু বিবেক কথা শোনেনি। মিজানুর পটেল বলে ওর এক বন্ধু আছে। আমি স্কুলশিক্ষক। স্কুলে চলে গেলেই ওকে লুকিয়ে লুকিয়ে হকি খেলার জন্য নিয়ে যেত মিজানুর। লুকিয়ে লুকিয়ে বাড়ি ফিরত। আমি স্কুল মিটিয়ে প্রাইভেট পড়িয়ে রাত ১০টায় বাড়ি ফিরতাম। ততক্ষণে ও বাড়ি চলে আসত। আমি জানতেও পারতাম না।'
বিবেকরা দুই ভাই। ছোট ভাই সেমিফাইনালে জাতীয় দলের জার্সিতে নামার আগে উত্তেজনায় ফুটছেন তাঁর দাদা বিদ্যাসাগর। বলছেন, 'বাড়ির সবাই খুব খুশি। সেমিফাইনালে পৌঁছে গিয়েছি আমরা। সেটাও আবার ৪৯ বছর পরে। সবাই প্রার্থনা করছি ভারত যেন সেমিফাইনালে জিতে ফাইনালে পৌঁছতে পারে। কাল সকালে পরিবারের সকলে তো বটেই, পাড়ার সবাই মিলে একসঙ্গে ম্যাচ দেখব। সবাই উত্তেজনায় ফুটছে।'
মাত্র ২১ বছর বয়সে এত বড় ম্যাচ। বিবেকের জন্য তো আপনাদেরও স্নায়ুর চাপ টের পাওয়ার কথা? বিদ্যাসাগর হেরে বলছেন, 'স্নায়ুর চাপ আমাদের চেয়ে বিবেকের বেশি টের পাওয়ার কথা। তবে ওদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এইরকম পরিস্থিতি কীভাবে সামলাবে তা নিয়ে। ও নিজের একশো শতাংশ দেবে। বিবেক মনে করে মাঠে নেমে আগে দেশের হয়ে খেলছে, তার পরে নিজের জন্য। নিজের একশো শতাংশ দেবে সেমিফাইনালেও।'
আর্জেন্তিনার বিরুদ্ধে গ্রুপ পর্বের ম্যাচ তখন ১-১। গোল করে দেশকে ২-১ এগিয়ে দিয়েছিলেন বিবেকই। অলিম্পিক্সে তাঁর প্রথম গোল। শেষ পর্যন্ত ৩-১ গোলে ম্যাচ জিতেছিল বিবেক। সেই ম্যাচ জিতেই ভারত কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা পাকা করে নিয়েছিল। বিদ্যাসাগর বলছেন, 'আমরা সকলে ভীষণ খুশি হয়েছিলাম। কারণ বিবেকের এটা প্রথম অলিম্পিক্স আর সেখানে প্রথম গোল। গোলের জন্য কাউকে একক কৃতিত্ব দেওয়া ঠিক নয়। দলগত সংহতির জয়। তবে বিবেকের প্রথম গোল দেখে সকলে আনন্দে কাঁদছিলেন।'
বাবা রোহিত বলছেন, 'গ্রেট ব্রিটেনকে হারানোর পর আমার সঙ্গে ওর কথা হয়নি। তবে টোকিওতে পুরো দল মানসিকভাবে তরতাজা। পদক জিততে ও মরিয়া। গোটা দল দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।'
বেলজিয়াম বিশ্বক্রমপর্যায়ে দু'নম্বরে রয়েছে। ভারত সেখানে পাঁচে। বিদ্যাসাগর বলছেন, 'বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে কঠিন ম্যাচ। তবে বেলজিয়ামে যে ধরনের খেলা হয়, তার চেয়ে এশিয়ার খেলার ঘরানা সম্পূর্ণ আলাদা। একের বিরুদ্ধে এক পরিস্থিতিতে আমরা এগিয়ে থাকব। র্যাঙ্কিংয়ে খুব একটা ফারাক নেই।'
প্রত্যেক ম্যাচের আগে মাকে ফোন করেন বিবেক। পয়মন্ত মনে করেন বলে। বিদ্যাসাগর বললেন, 'বিবেক জানে বড় ম্যাচে কীভাবে খেলতে হয়। প্রত্যেক ম্যাচের দিন টিমবাসে ওঠার আগে মাকে ফোন করে। খেলা নিয়ে কথা বলে না। এমনিই কথা বলে। মা ওকে শুধু বলে ভাল করে খেল। এটাই দস্তুর। কালকেও সকালে ফোন করবে। বিবেককে বলব, প্রাথমিক ব্যাপারগুলোয় জোর দাও। চাপমুক্ত থাকো।'
মঙ্গলবার সকাল সাতটায় ম্যাচ। জিতলেই পদক নিশ্চিত। গোটা গ্রাম ঢোল নিয়ে হাজির হয়ে যাবে বিবেকের বাড়িতে। সকলে একসঙ্গে ম্য়াচ দেখবেন। ভারত জিতলেই শুরু হবে নাচ। মিষ্টি বিতরণ। পদকের প্রার্থনা শুরু হয়ে গিয়েছে হকির তরুণ তুর্কির বাড়িতেও।
ট্রেন্ডিং
সেরা শিরোনাম
![ABP Premium](https://cdn.abplive.com/imagebank/metaverse-mid.png)