Sports Highlights: ইডেনে প্রোটিয়া-বধ অজ়িদের, ফাইনালে ভারতের সামনে অস্ট্রেলিয়া, খেলার দুনিয়ার সারাদিন
Top Sports News: খেলার দুনিয়ার সারাদিনের সব খবর এক ঝলকে।
কলকাতা: বিশ্বকাপ (ODI World Cup) চূড়ান্ত পর্বে। বৃহস্পতিবার ইডেনে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে দিল অস্ট্রেলিয়া (AUS vs SA)। রবিবার আমদাবাদে ভারতের সামনে প্যাট কামিন্সরা। খেলার দুনিয়ার সারাদিন।
অস্ট্রেলিয়ার রুদ্ধশ্বাস জয়
ভারত-নিউজ়িল্যান্ডের (IND vs NZ) প্রথম সেমিফাইনালে একমাত্র ডারিল মিচেল ও কেন উইলিয়ামসনের পার্টনারশিপের সময় তৈরি হওয়া সামান্য খচখচানি ছাড়া রোহিত শর্মাদের জয়ের পথ মসৃণই ছিল। ঠিক তার পরের দিনই, দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ইডেনে যখন অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ২১২ রানে অল আউট হয়ে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা, মনে হয়েছিল, ক্রিকেট রোমান্টিকদের ফের হতাশই হতে হবে। যে আশঙ্কা দ্বিগুণ হয়ে গেল, যখন রান তাড়া করতে নেমে অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও ট্র্যাভিস হেড ৬ ওভারে ৬০ রান তুলে দিলেন।
ক্রিকেট ঈশ্বর কি তখন মনে মনে হেসেছিলেন?
না হলে কেনই বা পরের ৭৭ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে বসবে অস্ট্রেলিয়া! বিনা উইকেটে ৬০ থেকে পরের এক ঘণ্টা ১৩ মিনিটে ১৩৭/৫ হয়ে যাবেন প্যাট কামিন্সরা! দেখে কে বলবে যে, অস্ট্রেলিয়া পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। আর দক্ষিণ আফ্রিকা কোনওদিন বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেনি। চারবার সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছে। বৃহস্পতিবারের ম্যাচ প্রোটিয়াদের পঞ্চম সেমিফাইনাল। প্রত্যেকবারই হতাশাই সঙ্গী হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার।
বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়াকে সামনে দেখলেই অবশ্য জ্বলে ওঠেন প্রোটিয়ারা। রেকর্ড বলছে, বিশ্বকাপে সাতবার দুই দেশ মুখোমুখি হয়েছে। তিনবার জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। তিনবার দক্ষিণ আফ্রিকা। একটি ম্যাচ টাই। মাঠে বল হাতেও যেন বাড়তি সংকল্প দেখালেন প্রোটিয়া বোলাররা। ২১২ রানের পুঁজি নিয়েও প্রাণ ওষ্ঠাগত করে দিলেন অস্ট্রেলিয়ার।
তবু শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হল প্রোটিয়াদের লড়াই। যে লড়াই শুরু হয়েছিল ডেভিড মিলারের ব্যাটে। মেঘলা আবহাওয়ায় ইডেনে যখন অজ়ি পেসাররা দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২৪/৪ করে দিয়েছেন, তখন একা কুম্ভ হয়ে লড়াই করলেন মিলার। বিধ্বংসী ব্যাটিং করেন বলে ক্রিকেট বিশ্বে যাঁকে কিলার মিলার বলে ডাকা হয়। ইডেনে অবশ্য ধরা দিলেন নতুন ছাঁচে। ১১৬ বলে ১০১। যা একেবারেই মিলার সুলভ নয়। তবে ধৈর্যশীল সেঞ্চুরিতে প্রোটিয়া শিবিরে প্রথম আশার প্রদীপটা জ্বাললেন মিলারই। পরে যে রানের ওপর লগ্নি করে দুই প্রোটিয়া স্পিনার কেশব মহারাজ ও তাবারেজ় শামসি ঘূর্ণিজাল বুনলেন। আর লেংথ ও গতির হেরফের করে, আগুনে মেজাজের সংস্পর্শে প্রতিপক্ষ শিবিরকে কোণঠাসা করলেন পেসার জেরাল্ড কোয়েৎজ়ে।
দক্ষিণ আফ্রিকার রান তাড়া করতে নেমে একটা সময় অস্ট্রেলিয়ার স্কোর দাঁড়াল ৩৯.৫ ওভারে ১৯৩/৭। ম্যাচ জিততে তখনও ৬১ বলে প্রয়োজন ২০ রান। কিন্তু এক একটা রান তখন যেন ১০ রানের সমান। গ্যালারি জুড়ে মেক্সিকান ওয়েভ। দর্শকদের স্মৃতিতে হয়তো ঘোরাফেরা করছিল বাংলাদেশ বনাম নেদারল্যান্ডস ম্যাচ। এই ইডেনেই তো মাত্র ২২৯ রান তুলে বাংলাদেশকে হারিয়ে দিয়েছিলেন ডাচরা। তাহলে কি পারবেন না প্রোটিয়া বোলাররা?
দক্ষিণ আফ্রিকা পারেনি। ১৬ বল বাকি থাকতে লক্ষ্যপূরণ অস্ট্রেলিয়ার। তবে ২১৩ তোলার জন্য অজ়িদের লাগল ৪৭.২ ওভার। যা প্রোটিয়া লড়াইয়ের প্রতিচ্ছবি হয়েই থেকে যাবে ক্রিকেটের ইতিহাসে।
ওয়ার্নারের নাচ
সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁকে ফলো করলে ভারত-প্রীতির ছবি দেখতে পাবেন যে কেউই। বলিউডের হোক বা দক্ষিণী কোনও সিনেমা, গান জনপ্রিয় হওয়া মানেই তার তালে তিনি পা মিলিয়ে রিল বানাবেন। কখনও সখনও তাঁর সঙ্গে যোগ দেন স্ত্রী ক্যান্ডিস ও সন্তানেরাও।
তিনি, ডেভিড ওয়ার্নার (David Warner)। ভারত যাঁর অন্যতম পছন্দের জায়গা। অধিনায়ক হিসাবে সানরাইজার্স হায়দরাবাদকে আইপিএল চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন। নিজামের শহরে দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন। দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমাও তাঁর পছন্দের। অল্লু অর্জুন কে, চোখ বন্ধ করে দিয়ে বলে দিতে পারবেন। এমনকী, পুষ্পা রাজ, ঝুঁকেগা নহী শালা-র মতো জনপ্রিয় সংলাপও বলে দেন গড়গড় করে।
আর ভারতের মাটিতে খেলা থাকলেই বিভিন্ন গানের তালে পা মেলান মাঠেই। যে তালিকায় নবতম সংযোজন শ্রীবল্লি। পুষ্পা, দ্য রাইজিং সিনেমার প্রবল জনপ্রিয় গান। আর সিনেমায় সেই গানে যেভাবে নেচেছিলেন অল্লু অর্জুন, হুবহু সেভাবেই নাচতে পারেন ওয়ার্নারও। যেন পেশাগতভাবেই নাচেন তিনি।
বৃহস্পতিবার যে দৃশ্যের সাক্ষী থাকল ইডেন গার্ডেন্স (Eden Gardens)। ক্রিকেটের নন্দনকাননে একটা সময় গ্যালারির দাবি মেনে চার-ছক্কা হাঁকিয়েছেন একনাথ সোলকাররা। যে কাহিনি ভারতীয় ক্রিকেটে রূপকথার মতো হয়ে রয়েছে। এদিন গ্যালারির আব্দারে নাচলেন ওয়ার্নার। জিতে নিলেন সকলের মন।
বিরাট-মুগ্ধতা উইলিয়ামসনের
দুর্ভাগ্য যেন তাঁর পিছু ছাড়ছে না। আইপিএল খেলতে গিয়ে এসিএল টিয়ার। বিশ্বকাপে (ODI World Cup) শেষ মুহূর্তে দলে অন্তর্ভুক্তি। আর প্রথম ম্যাচে নেমেই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ফিল্ডারের থ্রোয়ে ভাঙল আঙুল। ফের প্রত্যাবর্তন ঘটিয়েছিলেন কেন উইলিয়ামসন (Kane Williamson)। তবে ভারতের বিরুদ্ধে (IND vs NZ) সেমিফাইনালে হেরে বিশ্বকাপ থেকে খালি হাতেই ফিরতে হচ্ছে কিউয়ি অধিনায়ককে।
তবে সেমিফাইনালে বিরাট কোহলির ওয়ান ডে সেঞ্চুরির হাফসেঞ্চুরি দেখে মুগ্ধ উইলিয়ামসন। একটা সময় বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ব্যাটার কে, সেই আলোচনায় কোহলির সঙ্গেই উচ্চারিত হতো তাঁর নামও। বিশ্বকাপ থেকে বিদায়ের পর সেই উইলিয়ামসনের গলায় কোহলিকে নিয়ে উচ্ছ্বাস। বলেছেন, 'কেউ পঞ্চাশটি ওয়ান ডে ম্যাচ খেললেই মনে করা হয় দারুণ কেরিয়ার। সেখানে পঞ্চাশটি সেঞ্চুরি। কীভাবে ব্যাখ্যা করব আমি শব্দ হাতড়ে বেড়াচ্ছি।'
২০১৫ সালের বিশ্বকাপের ফাইনালে ক্রিকেটার হিসাবে হেরেছেন। অধিনায়ক হিসাবে হেরেছেন ২০১৯ সালের বিশ্বকাপের ফাইনাল ও ২০২৩ সালের সেমিফাইনাল। তবে ভারতকে কৃতিত্ব দিচ্ছেন উইলিয়ামসন। বলেছেন, 'ভারত দারুণ ক্রিকেট খেলছে। অসাধারণ দল। আর গোটা টুর্নামেন্টে যা করেছে, সেমিফাইনালেও সেটা করে দেখানোয় বোঝা যায় কীরকম দল ওরা। প্রথমার্ধেই ওরা আমাদের বেজায় চাপে ফেলেছিল। যেভাবে খেলেছে, ওদের কৃতিত্ব দিতেই হয়।'
বাবাকে স্মরণ সিরাজ়ের
বিশ্বকাপের (ODI World Cup 2023) সেমিফাইনালে নিউজ়িল্যান্ডকে ৭০ রানে হারিয়ে ফাইনালের টিকিট পাকা করেছে ভারতীয় ক্রিকেট দল (IND vs NZ)। আর মাত্র এক ম্যাচ জিতলেই বিশ্বখেতাব নিজেদের নামে করে ফেলবে টিম ইন্ডিয়া। তবে ভারতীয় দল ম্যাচ জিতলেও মহম্মদ সিরাজের (Mohammed Siraj) জন্য ব্যক্তিগতভাবে দিনটা কিন্তু খুব একটা সুখকর কাটেনি। সিরাজ নিজের নির্ধারিত নয় ওভারে ৭৮ রান খরচ করে মাত্র একটি উইকেট নেন। সেই ম্যাচের পরের দিনই নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় এক আবেগঘন পোস্ট করেন সিরাজ।
বাবা লেখা এক ফোন কলের ছবি দিয়ে সিরাজ লেখেন, 'আমি এই ফোনটাই দেখতে চাই।' সিরাজের বাবা তাঁর টেস্ট অভিষেকের আগেই মারা গিয়েছেন। তবে তাঁর ক্রিকেটার হয়ে উঠার পিছনে তাঁর বাবার অবদান অনস্বীকার্য। বিশ্বকাপ ফাইনালে পৌঁছনোটা নিঃসন্দেহে যে কোনও ক্রিকেটারের কেরিয়ারের বড় সাফল্য। এই সাফল্য পেয়েই তাই বাবার কথা স্মরণ করেন সিরাজ।
খুঁতখুঁতে রোহিত
বিশ্বকাপে (ODI World Cup 2023) ভারতের বিজয়রথ অব্যাহত। নাগাড়ে দশম ম্যাচ জিতে নিয়েছে ভারতীয় দল । পৌঁছে গিয়েছে ফাইনালে। বিশ্বকাপ থেকে আর মাত্র একধাপ দূরে টিম ইন্ডিয়া। ওয়াংখেড়েতে দুরন্ত সেমিফাইনালে টিম ইন্ডিয়া ৭০ রানে হারায় নিউজ়িল্যান্ডকে (IND vs NZ)। ম্যাচের পর কিন্তু রোহিত শর্মা (Rohit Sharma) মেনে নিচ্ছেন ভারতীয় দলের ওপর চাপ ছিলই।
ম্যাচ শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত বলেন, 'আজ সেমিফাইনাল ম্যাচ ছিল। চাপ তো সব ম্যাচেই থাকে। তবে সেমিফাইনালে বাড়তি একটু চাপ থাকেই। তবে এই বিষয়ে আমরা বেশি ভাবনাচিন্তা করতে চাইনি। প্রথম নয় ম্যাচে যেমন খেলেছি, সেইভাবেই খেলা চালিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে জিনিসপত্র বেশ ভালভাবেই আমাদের পক্ষেই যায়।'
ম্যাচে ৩৯৭ রানের পুঁজি নিয়েও একসময় ডারিল মিচেল এবং কেন উইলিয়ামসনের অনবদ্য ব্যাটিংয়ে বেষ খানিকটা চাপেই পড়ে গিয়েছিল ভারতীয় দল। দুরন্ত শতরান হাঁকান মিচেল, কেন করেন হাফসেঞ্চুরি। নিজের ঘরের মাঠ হাতের তালুর মতো চেনেন রোহিত। এই মাঠে যে কোনও রানই নিরাপদ নয়, সেই বিষয়ে কিন্তু ভারতীয় অধিনায়ক অবগত ছিলেনই। দলের ফিল্ডিং নিয়েও হতাশা প্রকাশ করেন রোহিত।