Durga Puja 2021: দুশো চল্লিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে হচ্ছে বনহাট গ্রামের মোঘল আমলের জাগ্রত পুজো
রাজপুরহাট থানার বনহাটে মুসলিম প্রধান গ্রামে স্বমহিমায় পুজো হয়ে আসছে দাস পরিবারে। এই পরিবারের প্রচলিত বিশ্বাস, পুজোর দায়িত্ব কাঁধে নিতেই বংশ পরম্পরায় চারপুরুষ ধরে একটি করেই সন্তান জন্মগ্রহণ করে আসছে।
গোপাল চট্টোপাধ্যায়, বীরভূম : পুজো ঠিক কবে থেকে শুরু হয়েছিল, তার সঠিক দিনক্ষণ জানা নেই। বহু বছর ধরে প্রাচীন রীতি মেনেই চলে আসছে বনহাট গ্রামের মোঘল আমলের পুজো। ২৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে দুর্গাপুজো (Durga Puja 2021) হচ্ছে রামপুরহাট থানার বনহাটের দাস পরিবারে।
রাজপুরহাট থানার বনহাটে মুসলিম প্রধান গ্রামে স্বমহিমায় পুজো হয়ে আসছে দাস পরিবারে। এই পরিবারের প্রচলিত বিশ্বাস, পুজোর দায়িত্ব কাঁধে নিতেই বংশ পরম্পরায় চারপুরুষ ধরে একটি করেই সন্তান জন্মগ্রহণ করে আসছে। শুধু হিন্দুরাই নয়, এই গ্রামে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অনেকেও পুজোয় মানত করেন বলে জানাচ্ছেন পুজো উদ্যোক্তারা। পুজো কবে থেকে প্রথম শুরু হয়েছিল, জানা না থাকলেও উদ্ধার হওয়া পুরনো নথি থেকে জানা যায়, ১১৮৯ সালে বাংলাদেশ থেকে আসা তৎকালীন জমিদার পুজোর আয়োজক ধর্মদাস চৌধুরীর পুজোর প্রতি নিষ্ঠা দেখে প্রশংসাপত্র দিয়েছিলেন। পুঁথি ঘেঁটে পরিবারের সদস্যরা জানতে পেরেছেন যে, এই পুজো হয়ে আসছে মোঘল সাম্রাজ্যের আমল থেকে। তবে বহু পুঁথির ভাষা এখনও উদ্ধার করা যায়নি বলে জানাচ্ছেন দাস পরিবাররে সদস্যরা।
পরিবারের সদস্যরা জানাচ্ছেন যে, সেই সময়ে জমিদারির কিছু অংশ বহু মানুষকে দান করা হয়েছিল। সেই দান করা অংশের আদায়কৃত খাজনায় পুজোর জাঁকজমক আরও বাড়ে। পরবর্তীকালে ধর্মদাস চৌধুরীর একমাত্র সন্তান মুকুন্দলাল দাসচৌধুরী পুজোর দায়িত্বভার নিজের কাঁধে তুলে নেন। এরপর বংশ পরম্পরায় পুজো চালিয়ে আসছেন বংশধররা। তখন মাটির চালাঘরে দেবীর আরাধনা করা হলেও এখন মায়ের পাকা মন্দির তৈরি হয়েছে। পরিবারের সদস্য ষাটোর্ধ্ব কৃষ্ণদুলাল বাবু বলেন, 'এখানে মা চান না তাঁর পুজো ভাগ হয়ে যাক। তাই বংশ পরম্পরায় আমাদের একটি করে সন্তান। দাদুর সময়ে একবার আর্থিক দুরবস্তা দেখা দিয়েছিল। তবে তার মধ্যেই পুজো বন্ধ হয়নি। বাপ ঠাকুরদার চিরাচরিত রীতি মেনে বৈষ্ণবমতে আমাদের পুজো হয়ে আসছে। এই দেবী খুবই জাগ্রত। মূর্তি গড়া যেমনই হোক না কেন, বেদীতে বসার পর যেন মা নিজ মূর্তি ধারণ করেন। যা একেবারেই অলৌকিক। তাই এখানে মায়ের মূর্তির কোনও পরিবর্তন হয় না। মা এখানে মৃন্ময়ী। সন্তানদের সঙ্গে নিয়েই আসেন। বেনেবাড়ির পুজো হলেও ঘট ভরার সময় স্থানীয় পুকুর ঘাটে গোলা নিয়ে যান গ্রামেরই কোনও ব্রাহ্মন সন্তান। আবার শোভাযাত্রায় অংশ নেন গ্রামের মুসলিম বাসিন্দারাও। কোনও ভেদাভেদ নেই এখানে।'
তিনি আরও বলছেন, 'অনেক মুসলিম পরিবারের সদস্যরা অষ্টমীর দিন উপবাস করে থাকেন। মায়ের পুজো শেষ হওয়ার পর তাঁরা খাওয়া দাওয়া করেন। এখানে তাঁরা মানতও করেন। পুজোর চারদিন এই মন্দির চত্বর সম্প্রীতির মিলনস্থল হয়ে ওঠে। আত্মীয়সজনরাও এই সময়ে গ্রামে আসেন। ৬ কিমি দূরের রামপুরহাট শহর থেকেও বহু ধর্মপ্রাণ মানুষের ঠিকানা হয়ে ওঠে এই গ্রাম।'