Durgapur News : হাতে-পায়ে বাঁধা দড়ি, বৃদ্ধকে পরিত্যক্ত আবাসনে ফেলে রেখেছিল ছেলেরাই, জানা গেল গোঙানির শব্দে
ভাঙা খাটে হাত পায়ে দড়ি বাঁধা অবস্থায় পড়ে রয়েছেন এক বৃদ্ধ । দুই চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে জল। বলার ক্ষমতা নেই। শুধুই বের হচ্ছে গোঙানির শব্দ।
মনোজ বন্দ্যোপাধ্যায়, পশ্চিম বর্ধমান : পরিতক্ত আবাসনের ভেতর থেকে গোঙানি শব্দ। তা শুনে ভেতরে ঢুকেই চোখ কপালে উঠলো স্বাস্থ্য কর্মীর। একটি ভাঙা খাটে হাত পায়ে দড়ি বাঁধা অবস্থায় পড়ে রয়েছেন এক বৃদ্ধ । দুই চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে জল। বলার ক্ষমতা নেই। শুধুই বের হচ্ছে গোঙানির শব্দ। খোঁজ নিয়ে দেখা গেল তিনি এক রাষ্ট্রায়ত্ত মিশ্র ইস্পাত কারখানার অবসরপ্রাপ্ত কর্মী।
ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই নিন্দার ঝড় উঠল দুর্গাপুর পুরসভার ৪নং ওয়ার্ডের জয়দেব অ্যাভিনিউতে। দুর্গাপুরের জয়দেব এভিনিউ এলাকার মাগারাম ঘোষ। বয়স ৮০ পেরিয়েছে। রয়েছে তাঁর তিন ছেলেও। এক ছেলে ইস্পাত কারখানার কর্মী আর দুই ছেলে বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত। দুর্গাপুরেই বিভিন্ন জায়গায় থাকেন তাঁরা। কিন্তু অসুস্থ বৃদ্ধ বাবার জায়গা হয়নি তাঁদের কারও বাড়িতেই। স্থানীয়দের অভিযোগ, ছেলেরাই দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার পরিত্যক্ত একটি আবাসন দখল করে খাটে শুইয়ে দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখে দেয়।
বর্ষার মুখে চারিদিকে বাড়ছে ডেঙ্গির প্রকোপ। তাই শুক্রবার সকালেই দুর্গাপুর পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সার্ভে করছিলেন। তখনই এই অমানবিক ঘটনা নজরে আসে। খবর দেওয়া হয় বিদায়ী পুরমাতা মণি দাশগুপ্তকে। এই খবর শুনেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে ওই বৃদ্ধর বড় ছেলে দয়াময় ঘোষকে ডেকে পাঠানো হয়। তাঁকে কার্যত তুলোধোনা করেন বিদায়ী কাউন্সিলর। খবর দেওয়া হয় দুর্গাপুর থানার পুলিশকেও।
এলাকাবাসীরাও ভিড় জমান সেখানে। তারপরেই সকলে মিলে অসুস্থ বৃদ্ধর হাত পায়ের দড়ি খুলে দেন। নিয়ে যাওয়া হয় দুর্গাপুর ইস্পাত হাসপাতলে। বড় ছেলে দয়াময় ঘোষ বলেন,'বাবা এখানেই পাশের আবাসনে থাকতেন,। সেই জন্য এখানেই রাখা হয়। বাবার চিকিৎসা চলছিল। তাই যাতে না পড়ে যায়, সেই জন্য দড়ি বেঁধে রাখা হয়। আমি নিয়মিত আসি বাবার দেখভাল করি। সংসারের অবস্থা খারাপ হওয়ায় বাবার আবাসন ভাড়া দেওয়া হয়েছে। সেই জন্য পাশের দখল করা এই ফাঁকা আবাসনে রাখা হয় বাবাকে । তবে অমানবিক কিছু ঘটেনি।'
বিদায়ী কাউন্সিলর বলেন, 'চরম অমানবিক ঘটনা। এমন নির্মম ঘটনা আগে কোনদিন দেখিনি। মাগারাম বাবু এলাকার খুব ভাল মানুষ। কিন্তু তাঁর ছেলেরা যে এরকম করতে পারে তা কল্পনাও করতে পারিনি। আমি পুলিশকে জানিয়েছি। প্রয়োজনে ছেলেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করব। এই ধরনের ঘটনা যাতে সমাজে না ঘটে সেই নিয়েও সচেতনতা বাড়াবো।'
আরও পড়ুন :