Venomous Snake Bite : স্থান ভেদে পাল্টে যায় সাপের বিষ ! বিষধর সাপের কামড়ে চিকিৎসা করাবেন কীভাবে ?
ABP Live Exclusive : ভারতে সব রকমের সাপের কামড়ের জন্যই একটি মাত্র অ্যান্টিভেনাম ব্যবহৃত হয়। যার নাম পলিভ্যালেন্ট অ্যান্টিভেনাম (Polyvalent Antivenum)।
কলকাতা : ২০ টি কখনও ৩০ টি অ্যান্টিভেনাম প্রয়োগের পরও হয় না কাজ ! বিষধর সাপের কামড়ে ভর্তি রোগীর কিডনি বিকল হয়ে যায় একাধিক পলিভ্যালেন্ট অ্যান্টিভেনাম (Polyvalent Antivenum) প্রয়োগের পরও। বাংলায় বিষধর সাপের (Venomous Snake) কামড়ে মৃত্যুর সংখ্যা যথেষ্ট। তারমাঝেই চিন্তা বাড়াচ্ছে সাপের চরিত্র বদল ! ভৌগলিক অবস্থানের পার্থক্যের জেরে তারতম্য হয় সাপের বিষেও। আর তার জেরেই কিছুক্ষেত্রে তৈরি হয় সমস্যা। তামিলনাড়ুর মহাবলীপূরমের ইরুলা সোসাইটিতে একমাত্র কয়েকটি সেন্টারে তৈরি হয় সাপের কামড়ের পর মানুষকে বাঁচানোর প্রতিষেধক অ্যান্টিভেনাম। সব ধরণের বিষধর সাপের কামড়ের ক্ষেত্রেই প্রয়োগ করা হয় একমাত্র পলিভ্যালেন্ট অ্যান্টিভেনাম।
বাংলায় ১২০ থেকে ১২৫ ধরণের সাপ থাকলেও মাত্র ৪ ধরনের বিষধর সাপ রয়েছে। কেউটে, গোখরো, চন্দ্রবোড়া ও কালাচ (কালাচিতি) এই চার ধরনের বিষধর সাপ পাওয়া যায় বাংলায়। প্রথম দুই ধরনের সাপ ফণা-যুক্ত। পরের দুটি ফণা-বিহীন। কেউটে, গোখরো ও কালাচ সাপের বিষ মূলত নিউরোটস্কিক (Neuro Toxic)। যা প্রভাব ফেলে মানুষের স্নায়ুতন্ত্রে। আর চন্দ্রবোড়ার বিষ হেমাটস্কিক (Hema Toxic)। যার ফলে সাপে নিউরোটস্কিক ধরণের বিষধর সাপ কাটার (Snake Bite) ক্ষেত্রে রোগীর চোখের পাতা পড়ে আসতে থাকে। চোখ খুলে রাখতে গেলেও প্রচণ্ড সমস্যা হয়। বাংলায় যাকে বলে শিবনেত্র। ইংরেজি প্রতিভাষা টসিস (Tosis)। আর চন্দ্রবোড়ার কামড়ের জেরে ঘণ্টাদেড়েক পর থেকেই বিকল হতে শুরু করে রোগীর কিডনি। বিষ রক্তের মাধ্যমে ঘুরতে ঘুরতে কিডনিতে পৌঁছনোর পর কিডনি বিকল (Kidney Malfunction) করতে শুরু করে। প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যায়। তাতে রক্ত আসতে শুরু করে। এভাবে দিন কয়েক পরে রোগী মারা যান। আর নিউরো টস্কিকের ক্ষেত্রে বুকের স্নায়ুও বিকল হয়ে গেলে রোগীদের ভেন্টিলেশনে ভর্তি করতে হয়। তাহলে কীভাবে হবে চিকিৎসা ? সাপে কাটলে করবেনই বা কী ?
কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের সিনিয়র মেডিক্যাল অফিসার ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সর্পদংশন বিভাগের পরামর্শদাতা চিকিৎসক দয়ালবন্ধু মজুমদারের (Dayal Bandhu Majumdar) কাছে বিভিন্ন জিজ্ঞাসা নিয়ে এবিপি লাইভ বাংলা পৌঁছে গিয়েছিল। বাংলার সাপের ডাক্তার হিসেবে পরিচিত চিকিৎসক জানালেন, 'ভৌগলিক দূরত্বের জেরে অনেক সময়ই দেখা যায় তামিলনাড়ু বা দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলিতে সাপে কাটা রোগী যেখানে ১০ টি অ্যান্টিভেনামেই সেরে উঠছে, সেখানে বাংলায় ২০ কখনও ৩০ টি অ্যান্টিভেনাম দেওয়ার পরই রোগীর কিডনি বিকল হয়ে যাচ্ছে।' রাজ্যের প্রশাসনিক কর্তাদের কাছে যে বার্তা পৌঁছনোর পর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও সুখবর শোনান তিনি। 'সমস্যার জেরেই পশ্চিমবঙ্গেও বিষ সংগ্রহ কেন্দ্রের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আশা করছি দ্রুতই পশ্চিমবঙ্গের সাপের বিষ দিয়ে অ্যান্টিভেনাম তৈরি হবে।'
কেউটে (Cobra) ও গোখরো এই দুই ধরনের সাপের কামড় মাত্রই শুরু হয়ে যায় ভয়ঙ্কর জ্বালা-যন্ত্রণা। ঘুমের মধ্যে কাউকে কামড়ালে বা নেশাগ্রস্থ কাউকে কামড়ালে ঘুম বা নেশা ছুটে যেতে পারে বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসক দয়ালবন্ধু মজুমদার। আর ফণা-হীন দুই ধরণের বিষধর সাপের মধ্যে চন্দ্রবোড়ার দাঁত খুবই ধারাল, সেক্ষেত্রেও দাগ বা খানিক পর থেকে জ্বালা-পোড়া শুরু হতে পারে। জায়গাটা আস্তে আস্তে ফুলতে শুরু করে। কিন্তু কালাচ বা কালা-চিতি সাপের ক্ষেত্রে তেমনটা হয় না। 'মশার মতো সুক্ষ্ম এমন কামড় হয় যে দাগই পাওয়া যায় না কালাচের কামড়ে', বলেই জানালেন বাংলার সাপ ডাক্তার। কোনও কিছু বোঝা না গেলেও পরের দিকে শুরু হয় নানা সমস্যা। যেমন গাঁটে গাঁটে ব্যথা বা পেটে ব্যথা।
দয়ালবন্ধু মজুমদারের কথায়, প্রথমেই সাপে কাটার বিষয়টি বুঝতে পারলে বা সন্দেহ করলে বাড়তি কোনও ছোটাছুটি করবেন না। আর দ্রুত কাউকে বলে পৌঁছে যেতে হবে কাছের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে (Primary Health Centre)। বাংলার প্রত্যেকর স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই সাপে কাটা রোগীকে সুস্থ করার জন্য চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে। যেখানে রাতে রোগী ভর্তি রাখার ব্যবস্থা রয়েছে, সেখানে নিয়ে গেলেই সাপে কাটার ক্ষেত্রে রোগীর চিকিৎসা হবে। দয়ালবন্ধু মজুমদার জানিয়েছেন, 'সাপ দেখে চিকিৎসা করা হয় না। মাত্র ২ শতাংশ ক্ষেত্রে কোন সাপ কামড়েছে, সেটাকে ধরা যায়। তাই সাপ ধরে নিয়ে হাসপাতালে ছুটতে হবে এই ধারণা ভ্রান্ত। তাতে সময় নষ্টের পাশাপাশি অন্য আরও কারোর সাপের কামড় খাওয়ার আশঙ্কা থাকে।' সাপে কামড়ালে ভয় না পেয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছে গেলেই সম্পূর্ণ চিকিৎসা সম্ভব বলেই জানাচ্ছেন তিনি। যদিও সাপের ভৌগলিক অবস্থানের জেরে বিষের ধরনের পার্থক্যের জেরে চন্দ্রবোড়ার কামড়ের ক্ষেত্রে সুস্থ হয়ে উঠলেও রোগীকে কিডনির চিকিৎসকের পরামর্শে থাকার কথা জানানো হয় বলেই জানান চিকিৎসক দয়ালবন্ধু মজুমদার।
আরও পড়ুন- বিষধর সাপ কামড়েছে কি না বুঝবেন কীভাবে ? কী করবেন ? উত্তর দিচ্ছেন বাংলার 'সাপ ডাক্তার'
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম টেলিগ্রামেও। যুক্ত হোন