Fake Voter Controversy: এক এপিকে দুই ভোটার ! 'ভূতেরাই' ছাব্বিশের ভবিষ্যৎ?
Suvendu Mamamta On Fake Voter Controversy :ছাব্বিশের আগে ভূতুড়ে ভোটার নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে, এক এপিকে দুই ভোটার ! 'ভূতুড়ে ভোটারাই' ছাব্বিশের ভবিষ্যৎ?

প্রদ্যোৎ সরকার, রাজীব চৌধুরী, করুণাময় সিংহ , কলকাতা: বাস্তবে তাঁর তিন ছেলে। কিন্তু ভোটার লিস্টে সেই তৃণমূল নেতাই আবার আবার চার ছেলের বাবা! না থেকেও, আরেক ছেলে এল কোথা থেকে? ভূতুড়ে ভোটারের অভিযোগ ঘিরে শোরগোল নদিয়ার কৃষ্ণনগরে। আবার, বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুর্শিদাবাদের রানিনগরের যে চারজন ভোটারের নাম বলেছিলেন, আমরা তাঁদেরও মুখোমুখি হয়েছিলাম। যাঁদের এপিক নম্বরেই রয়েছে হরিয়ানার বাসিন্দাদের নাম। গঙ্গারামপুরের এক সরকারি কর্মীর এপিক নম্বরে আবার নাম রয়েছে গুজরাতের এক বাসিন্দার।
তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এপিক কার্ডে বাইরের লোকের নাম তুলেছে। তার মানে বাংলার লোক যখন ভোট দিতে যাবে তার ভোটটা বাইরে থেকে এসে সে দিয়ে দেবে। ভোটের আগেই বেজে উঠেছে ভোটের দামামা। ভোটার তালিকায় 'ভূতুড়ে ভোটার'-এর দাপাদাপি নিয়েই এখন জোর চর্চা! আর বাস্তবে যে ছবিটা উঠে আসছে তাও খুব একটা সুখকর নয়। কোথাও ভোটার লিস্টে বেড়ে গেছে সন্তানের সংখ্যা। কোথাও আবার এক এপিক নম্বরেই একাধিক ভোটার।
নদিয়ার কৃষ্ণনগর উত্তর বিধানসভার পোড়াগাছা গ্রাম পঞ্চায়েত। এখাকার তৃণমূলের প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য হলেন বাহারালি মণ্ডল। বর্তমানে কৃষ্ণনগর এক নম্বর ব্লকের তৃণমূল সহ সভাপতি। সচিত্র ভোটার তালিকার একই পৃষ্ঠায় ৭২০ নম্বরে নাম রয়েছে তৃণমূল নেতা বাহারালি মণ্ডলের বড় ছেলে মালেক মণ্ডলের। আর ভোটার তালিকার ৫৫৩ নম্বরে বাহারালি মণ্ডলের ছেলে হিসেবে নাম রয়েছে জনৈক জসিম মণ্ডলের। বাহারালি মণ্ডলের বাড়ির যে নম্বর জসিমের ঠিকানাতেও একই নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু আদতে জসিম নামে বাহারালি মণ্ডলের কোনও ছেলেই নেই!কৃষ্ণনগর ১ নম্বর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস সহ সভাপতি বাহারালি মণ্ডল বলেন , জসিম আমার ছেলে না। আমার তিন ছেলে। বড় ছেলে মালেক মণ্ডল। মেজ ছেলে আতিয়ার মণ্ডল। ছোট ছেলে রাকেশ মণ্ডল। জসিম মণ্ডলকে আমি জানি না। ওর সঙ্গে আমার পরিচয় নেই, আমি চিনিও না।
বৃহস্পতিবার রীতিমতো তালিকা দেখে জেলাভিত্তিক ভূতুড়ে ভোটারের কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।গতকাল তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ধরুন একটা নাম মুর্শিদাবাদের রানিনগরে বাড়ি মহম্মদ শাহিদুল ইসলাম, এর এপিক কার্ড নম্বর যেটা আছে পশ্চিমবঙ্গে, তাঁর সঙ্গে নাম যুক্ত করেছে সোনিয়া দেবী। তাঁর বাড়ি কোথায়, তাঁর বাড়ি হচ্ছে হরিয়ানা। মহম্মদ আলি হোসেন, রানিনগরে বাড়ি তাঁর সঙ্গে নাম তুলেছে কার,মনজিৎ, তাঁর বাড়ি হরিয়ানা। বানেরা বিবি, রানিনগর তাঁর সঙ্গে নাম তুলেছে কার, দীপক। বাবার নামও আছে। বাড়ি কোথায়? হরিয়ানা। তাহলে পশ্চিমবঙ্গ ভোট দেবে না হরিয়ানা ভোট দেবে, পশ্চিমবঙ্গে? বুঝতে পারছেন খেলাটা? মাথায় কিছু ঢুকল?
মুর্শিদাবাদের রানিনগরের সেই সব ভোটারদের খোঁজ করেছিলাম আমরা। তাঁদের মধ্যেই একজন পরিযায়ী শ্রমিক মহম্মদ আলি হোসেন। তার যে এপিক নম্বর, সেই একই এপিক নম্বরে নাম রয়েছে জনৈক মনজিৎ নামে একজনের।যার ঠিকানা আবার হরিয়ানার হিসার।মুর্শিদাবাদের রানিনগরের ভোটার মহম্মদ আলি হোসেন, আমি মোটামুটি ৩-৪ মাসে আগে জানতে পারলাম, আমার নামের একজন রয়েছে হরিয়ানাতে...ভোটার। ছবির সাথে মিল আছে...কোথাও আমি কোনও দরখাস্ত করিনি...খুবই আশঙ্কা হচ্ছে, ভয় লাগছে।
ঠিক একই ঘটনা ঘটেছে রানিনগরের বানেরা বিবির ক্ষেত্রেও।
আবার নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে ওই একই এপিক নম্বরে রয়েছে জনৈক দীপকের নাম। তাঁরও ঠিকানা হরিয়ানার হিসার। বৃহস্পতিবার গঙ্গারামপুরের একটি ঘটনার কথা তুলে ধরেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।আপনার নাম যে দুই জায়গায় রয়েছে, এটা জানতেন? এবিপি আনন্দ এর প্রশ্নে মুর্শিদাবাদের রানিনগরের ভোটার বানেরা বিবি বলেন, না জানতাম না...ভোটার কার্ড তো সব জায়গাতেই তো রয়েছে, ভয় তো একটা থাকবেই, স্বাভাবিক... একটা স্বাভাবিক ভয় তো হবেই।'
বৃহস্পতিবার গঙ্গারামপুরের একটি ঘটনার কথা তুলে ধরেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, গঙ্গারামপুরে সব ঢুকিয়েছে গুজরাত, আর হরিয়ানা। আমেদাবাদ থেকে এখানে ভোট দিতে আসবে। মজাটা বুঝুন। ' দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরের বাসিন্দা সরকারি কর্মী তসলিম মিয়া, তাঁরও এপিক নম্বরে রয়েছে গুজরাতের এক বাসিন্দার নাম। দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরের ভোটার তসলিম মিয়া বলেন , কিছুদিন আগে জানতে পারি...আমি আমারটা চেক করি...একই আমার এপিক নম্বর আর গুজরাতের একজনের এপিক নম্বর একই...এটা আমি মেইল করেছি...উচ্চপদস্থ যেমন আধিকারিকগুলো আছেন...রেসপন্স আসেনি।এ তো দুশ্চিন্তার বিষয়।
আরও পড়ুন, 'ট্যাংরাকাণ্ডে বৌদি ও স্ত্রীকে গলা কেটেছিল প্রসূনই' ! তাহলে প্রণয়ের নাবালিকা কন্যাকে খুন করল কে?
মালদাতেও হানা দিয়েছে হরিয়ানার ভূতুড়ে ভোটার।মালদা শহরের রামকৃষ্ণপল্লির বাসিন্দা জাভেদ মিয়াঁদাদ। তাঁর এপিক নম্বরে আবার নাম রয়েছে, গুজরাতের গান্ধীনগরের এক বাসিন্দার নাম।মালদার রামকৃষ্ণপল্লির বাসিন্দা জাভেদ মিয়াঁদাদ বলেন, আমার পূর্বপুরুষ, তাঁর পূর্বপুরুষও সব আমার এই দেশেরই লোক...আমি সত্যি কথা বলতে গেলে আমি ভীষণ আতঙ্কে আছি...NRC বা এরকম কিছু চালু হলে, তখন আমাদের গুলোই আগে স্ক্যানারে আসবে...গুজরাতে আমি কোনওদিনও যাইনি...এখন উনি যদি কোনও দিনও কিছু করে বসেন, তার দায়টা যদি আমার এখানে চলে আসে...)
একই এপিক নম্বরে দুই ভোটার হল কীভাবে? এটাই প্রশ্ন।






















