Howrah: সাঁতরাগাছি ঝিলের জল এখন নিকাশি নালার মতো, এই কারণেই হয়তো পাখি কম, বলছেন সুভাষ দত্ত
Santragachhi Jheel: গত কয়েক বছর ধরেই সাঁতরাগাছি ঝিলে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা কম। পরিবেশবিদরা এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন। তাঁরা দূষণ রোখার উপর জোর দেওয়ার কথা বলছেন। এ বিষয়ে পরিবেশবিদ সুভাষ দত্তও উদ্বিগ্ন।
হাওড়া: শীতকালে হাওড়ার অন্যতম আকর্ষণ সাঁতরাগাছি ঝিল। প্রতিবার শীতে এখানে পরিযায়ী পাখিদের ঝাঁক আসে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরেই সাঁতরাগাছি ঝিলে কম পাখি আসছে। এবারও পরিযায়ী পাখির সংখ্যা কম। পরিবেশবিদ ও পক্ষী বিশারদরা সাঁতরাগাছি ঝিলের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাঁদের মতে, ঝিলকে বাঁচাতে গেলে জল দূষণমুক্ত রাখতেই হবে। না হলে পাখি আসবে না।
এ প্রসঙ্গে পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত জানিয়েছেন, ‘আমার ছেলেবেলা কেটেছে সাঁতরাগাছিতে। ফলে এই জায়গাটির প্রতি আমার বিশেষ ভালবাসা রয়েছে। আমি দীর্ঘদিন ধরেই সাঁতরাগাছি ঝিলে পাখি আসতে দেখছি। তবে গত কয়েক বছর ধরেই এই ঝিলে পাখি কম আসছে। এবার অবশ্য বেশিরভাগ জায়গাতেই পরিযায়ী পাখি কম এসেছে। উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জায়গাতেও পাখি কম এসেছে। জলবায়ু পরিবর্তন এর একটা কারণ হতে পারে। এছাড়া দূষণও একটা কারণ।’
সাঁতরাগাছি ঝিলের বিষয়ে সুভাষ দত্ত আরও বলেছেন, ‘সাঁতরাগাছি ঝিলের জল এখন নিকাশি নালার মতো। ঝিলের আশেপাশের ঝুপড়ি, বাড়ি, ফ্ল্যাটের যাবতীয় আবর্জনা ফেলা হয় জলে। ফলে জল প্রচণ্ড দূষিত হয়ে গিয়েছে। সেই কারণেই হয়তো পাখির সংখ্যা কমে গিয়েছে। দূষিত জলে মাছ এবং অন্যান্য জলজ প্রাণীদের পক্ষে বেঁচে থাকা কঠিন। ফলে পরিযায়ী পাখিদের খাবারের অভাব হচ্ছে। ঝিল পরিষ্কার করার নামে কচুরিপানা সাফ করে উল্টে পাখিদের অসুবিধাই করা হয়েছে। সাঁতরাগাছি ঝিলের একটা বৈশিষ্ট্য আছে। এরকম জনবহুল জায়গা, সবসময় ট্রেনের হর্ন সত্ত্বেও এখানে বছরের পর বছর ধরে পাখি আসছে। এই ঝিল যাতে নষ্ট না হয়ে যায়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।’
পক্ষী বিশারদ অশোক ঘোষাল জানিয়েছেন, ‘সাঁতরাগাছি ঝিলের আশেপাশের কারখানা, বাড়ি, ঝুপড়ি, ফ্ল্যাটের আবর্জনা যাতে জলে না মেশে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া পাখি শিকারও বন্ধ করতে হবে। অনেকে থার্মোকলের সঙ্গে চিনা মাঞ্জার সুতোয় বড়শি আটকে ঝিলে ভাসিয়ে রাখে। পাখিরা ওই সুতোয় আটকে যায়। ভোরবেলা সেই সুতো টেনে এনে পাখিগুলিকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। বাজারে অনেক দামে এই পাখিগুলির মাংস বিক্রি হয়। এটা বন্ধ করতে হবে। তাছাড়া কচুরিপানা সাফ করাও চলবে না। পাখিরা কচুরিপানার উপর বসে থাকে, ডিম পাড়ে। ফলে গোটা ঝিলেই কচুরিপানা থাকা জরুরি। কয়েক বছর আগে যখন গোটা ঝিলের কচুরিপানা সাফ করে দেওয়া হয়েছিল, সেবার কোনও পাখিই আসেনি। পাখিরা যাতে সাঁতরাগাছি ঝিল থেকে মুখ ফিরিয়ে না নেয়, সেটা দেখতে হবে।’
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ২০-২৫ বছর আগেও সাঁতরাগাছি ঝিল শীতকালে পাখিতে ভরে থাকত। কিন্তু কয়েক বছর ধরেই পাখির সংখ্যা কম। ঝিলের জল যাতে পরিষ্কার থাকে, সেটা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।