(Source: ECI/ABP News/ABP Majha)
India Club Close: দীর্ঘ ৭০ বছরের পথ চলার অবসান, বন্ধ হচ্ছে লন্ডনের 'ইন্ডিয়া ক্লাব'
London News: লন্ডনের স্ট্র্যান্ডে, রাস্তার ধারের এই বোর্ডটা আর বেশিক্ষণ দেখা যাবে না,থাকবে না, এই নেমপ্লেটও। একেবারের জন্য শান্ত হয়ে যাবে এই কোলাহল।
সৌমিক সাহা, লন্ডন: থেমে যাচ্ছে দীর্ঘ ৭০ বছরের পথ চলা। বন্ধ হচ্ছে লন্ডনের ঐতিহাসিক 'ইন্ডিয়া ক্লাব'। স্মৃতি আঁকড়ে রইলেন বহু প্রবাসী ভারতীয় ও লন্ডনবাসী। যদিও এর মধ্যে আশার কথাও শুনিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
লন্ডনের স্ট্র্যান্ডে, রাস্তার ধারের এই বোর্ডটা আর বেশিক্ষণ দেখা যাবে না,থাকবে না, এই নেমপ্লেটও।একেবারের জন্য শান্ত হয়ে যাবে এই কোলাহল।কারণ, দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর আজ, ১৭ সেপ্টেম্বর বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, ৭০ বছর ধরে ভারতের স্মৃতি জড়িয়ে থাকা 'ইন্ডিয়া ক্লাব'। ১৯৫১ সালে স্ট্র্যান্ডে, তৈরি হয়েছিল 'ইন্ডিয়া ক্লাব'।শুধু নামে নয় লন্ডনের বুকে এই বাড়ি এই রেস্তোরাঁর সঙ্গে পরতে পরতে জড়িয়ে আছে ভারতের ইতিহাস। এর শিকড় বহু প্রাচীন, ১৯২৮ সালে ভি কে কৃষ্ণ মেননের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠা হয়েছিল, ভারতের স্বাধীনতাকামী সংগঠন 'ইন্ডিয়া লিগ'। স্বাধীনতার পর, ইন্ডিয়া ক্লাব তৈরি হলে সেখানকার নিয়মিত অতিথি-তালিকায় ছিলেন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। তাঁর পাশাপাশি, এই ক্লাবের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন লেডি এডউইনা মাউন্টব্যাটেন। এখানেই শেষ নয়, একটা সময় - দ্য ইন্ডিয়ান জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, ইন্ডিয়ান ওয়ার্কার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং ইন্ডিয়ান সোশ্যালিস্ট গ্রুপেরও মিলনস্থল হয়ে উঠেছিল ইন্ডিয়া ক্লাব।
কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুরের বাবা, এই ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। ইন্ডিয়া ক্লাব বন্ধের খবর পেয়ে, বোন স্মিতা তারুরের ছবি সহ, সোশাল মিডিয়ায় লিখেছেন, আমি এটা শুনে দুঃখিত যে, লন্ডনের 'ইন্ডিয়া ক্লাব' বন্ধ হচ্ছে। এই ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতাদের একজনের ছেলে হিসাবে, আমি এমন একটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার আগে, দুঃখ প্রকাশ করছি। যে প্রতিষ্ঠান প্রায় ৭৫ বছর ধরে অসংখ্য ভারতীয়কে (শুধুমাত্র ভারতীয়দের নয়) পরিষেবা দিয়ে এসেছে। লেখিকা স্মিতা তারুর বলেন, “আমি বাকরুদ্ধ! আমি অত্যন্ত দুঃখিত এবং নস্টালজিক হয়ে পড়েছি। আমার বাবা ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। কয়েকদিন আগে, যখন আমি প্রথম 'ইন্ডিয়া ক্লাব' বন্ধ হওয়ার কথা শুনতে পাই, তখন শুধু তাঁর কথাই ভাবছিলাম। এই দুঃখজনক, খারপ খবরটা বলার জন্য তিনি আর আমার পাশে নেই।’’
লন্ডনে এলে, এই ক্লাবে আসতেন আনন্দবাজার পত্রিকার প্রধান সম্পাদক ও কর্ণধার অশোককুমার সরকারও। নামে যেমন ইন্ডিয়া, তেমনি মেনুতেও। এক ঝলক দেখলে মনে হবে, এ যেন ভারতেরই কোনও রেস্তোরাঁ।আর এই সমস্ত খাবারের স্বাদ চেখে দেখতে, প্রবাসী ভারতীদের পাশাপাশি লন্ডনবাসীদের আনাগোনাও চলে এসেছে দশকের পর দশক।প্রিয় ক্লাব বন্ধ হয়ে যাবে শুনে ব্যথিত তাঁরাও। ইন্ডিয়া ক্লাবের পৃষ্ঠপোষক কিথ বয়ফিল্ড বলেন, “এটি একটি ভয়ানক ট্র্যাজেডি! খাবার এবং সাজসজ্জা ঠিক 50 বছর আগে যেমন ছিল, তেমনই আছে। জায়গাটা নিয়ে আমার অনেক সুন্দর স্মৃতি আছে। আমি শোকে বিহ্বল ।’’
গত ২৬ বছর ধরে, ঐতিহাসিক এই ক্লাব চালিয়ে আসছেন ইয়াদগার মার্কার ও তাঁর মেয়ে ফিরোজ়া। ২০১৮-এ রেস্তোরাঁর সংস্কার ও আধুনিকীকরণ করার জন্য ইন্ডিয়া ক্লাব ভেঙে ফেলার প্রস্তাব দিয়েছিল নির্মাণকারী সংস্থা মার্সটন প্রপার্টিস। যে প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছিল ওয়েস্টমিনস্টার কাউন্সিল। ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনা করে বাড়িটি ভাঙার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল তারা। যার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যায় নির্মাণকারী সংস্থা। শেষমেশ তাদের পক্ষেই রায় দেয় আদালত।তবে আশার আলোও আছে। এই বাড়িতে না থাকলেও, লন্ডনের বুকে অন্য কোথাও নতুন রূপে দরজা খুলতে পারে ইন্ডিয়া ক্লাব। ইন্ডিয়া ক্লাব কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যে তারা ইতিমধ্যেই জায়গা খোঁজা শুরু করেছেন, ইন্ডিয়া ক্লাবকে স্থানান্তরিত করার জন্য। ইন্ডিয়া ক্লাব হয়ত শীঘ্রই নিউ ইন্ডিয়া ক্লাব হিসেবে খুলবে লন্ডনে।
আরও পড়ুন: Kolkata News: কাঁকুড়গাছির নিহত বিজেপি কর্মী অভিজিৎ সরকারের দাদাকে 'মারধর'