কলকাতা : তিনি বলেছিলেন এই আন্দোলন আসলে উৎসব, সমাজ শোধনের উৎসব। তিনি মোনালিসা মাইতি। হাওড়ার তারাসুন্দরী বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষিকা । আরজি করের ঘটনার প্রেক্ষিতে তিনি তাঁর বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের যেভাবে প্রতিবাদের ভাষা শিখিয়েছিলেন, তা ইন্টারনেটের ভাষায় 'ভাইরাল' ! আগেও এবিপি আনন্দর প্ল্যাটফর্মে এসে তিনি বক্তব্য রেখেছিলেন। আর এবার কথা বললেন - 'কতদূর যায় নাগরিক-স্বর, বুঝিয়ে দিল আর জি কর। পথে প্রতিবাদের ঝড়, ভাঙতে পারবে দানব-গড়? ' বিষয় নিয়ে, এবিপি আনন্দ 'যুক্তি - তক্কো' র মঞ্চে ।
মোনালিসা মাইতি বললেন, ৯ অগাস্ট, একটি হত্যা-ধর্ষণ অথবা ধর্ষণ-হত্যা হয়েছে। শাসক সেখানে জড়িত কি জড়িত নন, সে প্রমাণ তথ্য জোগাড় করবে সিবিআই। আদালত শোনাবে বিচার। এই মৃত্যু প্রমাণ করে আমাদের শাসনতন্ত্র আজ কিন্তু আর নিরপেক্ষ নয়। সে রক্তের দাগ মোছে। ধর্ষণকারীকে আড়াল করে, মালা পরায়। তাই আমরা ক্ষোভে, দুঃখে , কষ্টে বেরিয়ে এসেছিলাম। আমাদের শোক পৌঁছেছে দ্রোহে। এতে আমাদের দোষ কোথায়। আমরা বেরিয়ে এলাম কেন, কী ছিল, একটা মৃত্যুই তো ছিল? না, এটা কোনও একটা মৃত্যু ছিল না। এটা একটি মেধা তার রাষ্ট্রকে , রাষ্ট্রব্যবস্থাকে প্রশ্ন করেছে, কী কেন এসব হচ্ছে, কেন মেনে নেব? আমরা যারা এই মেধার শিক্ষক শিক্ষিকা, মা -বাবা, নানা - নানি, কাকা- কাকি, আমরাই তো সেই মেধাকে শিখিয়ে এসেছি...তারা তো এই মেধাকেই শিখিয়ে এসেছি, সব সময় চোখে চোখ রেখে কথা বলবে, প্রশ্ন করবে, বি সফট, নট উইক। আমরা এটা শিখিয়েছি, শিরদাঁড়া সোজা করে প্রশ্ন করতে। সে তো সেটাই করেছে। তাহলে কেন তাঁকে ৩৬ ঘণ্টা পরিষেবা দেওয়ার পর নিথর হয়ে পড়ে থাকতে হল ? তার চোখে শুধু জল ছিল না রক্ত ছিল। আমরা বেরব না ? এটা তো আমার ঐতিহ্যের অধিকার। আমরা যদি আজ না বেরই , তাহলে তো আমাদের বিদ্যাসাগর লজ্জা পাবেন। রামমোহন লজ্জা পাবেন। আমাদের রবীন্দ্রনাথ নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু এসে দাঁড়াবেন না, বলবেন না ? তাহলে আমরা মুখ লুকবো কোথায় ? আমাদের বেরতেই হত, আমরা তাই বেরিয়েছি। মনে রাখবেন এই লড়াই বুঝিয়ে দেয়, মানুষকে তুমি মেরে ফেলতে পারে, কিন্তু পরাজিত করতে পারো না। তাই আমরা বেরিয়েছি। আমাদের খুব ভাল লেগেছিল, যখন আমরা দেখেছিলাম, যে মাননীয়া এল্ডার সিস্টার হিসেবে আমাদের জুনিয়র ডাক্তারদের ধর্না মঞ্চে এসে পৌঁছে গেছিলেন, আমরা আশায় বুক বেঁধে ছিলাম, নতুন কিছু পাব বলে। কিন্তু আমরা পরবর্তী কালে দেখলাম, যারা আন্দোলনে হেঁটেছে, বেছে বেছে প্রশাসনকে দিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে কেস করা হচ্ছে, তাঁদের অপদস্থ করা হচ্ছে। কেন ! আমরা ভোট দিয়েছি ঠিকই, কিন্তু আমরা কি দাসখত লিখে দিয়েছি যে আমরা অন্যায় করে অন্যায় বলব না, দোষকে দোষ বলব না ! সাদাকে সাদা বলব না, কালোকে কালো বলব না ! আমাদের ভাবতে হবে।'
অনুষ্ঠানের অপর বক্তা জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধি দেবাশিস হালদারের কথার প্রসঙ্গ টেনে বলেন,সমাজের শোধন দরকার। একটা শাসককে বদলে কী হবে, সমাজতন্ত্রকে উপড়ে ফেলতে হবে। তার খোলনোলচেকে বদলাতে হবে।
'এই আন্দোলন অনেক কিছু দিয়েছে। তাতে আমাদের ঝুলি ভরে গেছে ' বললেন মোনালিসা। তিনি বললেন, এই আন্দোলন দেখেছে ১৩ বছরের মেয়েকে উই ওয়ান্ট জাস্টিস স্লোগান তুলতে, এই আন্দোলনে বাড়ির গোপালকে সঙ্গে নিয়ে মিছিলে পা মিলিয়েছেন ৮০ বছরের বৃদ্ধা। যৌনকর্মীরা বলেছেন, আমার দুয়ার থেকে দুর্গার জন্য মাটি যাবে না। এখন মিছিল আমাদের খোঁজে না, আমরা মিছিল খুঁজেছি। এখানেই এই আন্দোলনের সার্থকতা। '
তিনি তাঁর বক্তব্য শেষ করলেন এই বলে, 'আমরা কেউ আশা করে আসিনি সমাজ মন্থন করে অমৃত পাব। আমরা আশা রেখেছি যদি বিষটুকু তুলে আমরা কেউ কেউ নীলকণ্ঠ হতে পারি। তাহলেই অনেকটা পাওয়া হবে। ....ভাঙতে হবে আমাদের, কিন্তু সেই ভাঙা যেন গড়ার থেকেও সুন্দর হয়'
জেলার(District) লেটেস্ট খবর এবং আপডেট জানার জন্য দেখুন এবিপি লাইভ। ব্রেকিং নিউজ এবং ডেলি শিরোনাম দেখতে চোখ রাখুন এবিপি আনন্দ লাইভ টিভিতে