Howrah Crime:দেড় বছরের সন্তানকে খুনে মাকে ফাঁসির সাজা হাওড়ার আদালতের, মৃত্য়ুদণ্ড পেল প্রেমিকও
Death Sentence By Howrah Court:দেড় বছরের শিশুসন্তানকে খুনের অপরাধে মা ও তার প্রেমিককে মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ হাওড়ার আদালতের। বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের জেরেই মর্মান্তিক পরিণতি হয়েছিল শিশুর।
সুনীত হালদার, হাওড়া: দেড় বছরের শিশুসন্তানকে (Child Murder) খুনের অপরাধে মা ও তার প্রেমিককে মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ হাওড়ার আদালতের (Howrah Court Gives Death Sentence)। তদন্তে উঠে এসেছে, বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের জেরেই মর্মান্তিক পরিণতি হয়েছিল শিশুর। সেই মামলায় আজ, বৃহস্পতিবার দুজনকে ফাঁসির সাজা শোনান হাওড়া জেলা আদালতের প্রথম ফাস্ট ট্র্যাক এবং অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালতের বিচারক সন্দীপ চক্রবর্তী। তবে অভিযুক্তের আইনজীবী জানান, এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আবেদন করা হবে।
যা যা ঘটল...
হাওড়া জিআরপি থানার অন্তর্গত ওই মামলায় হাসিনা সুলতানা ও তার প্রেমিক ভান্নুর শা ভারতীয় দন্ডবিধির ৩০২, ২০১ ও ৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল। এদিন তাদের শাস্তি ঘোষণা করা হয়। নির্দেশ শোনার পর সরকারি আইনজীবী অরিন্দম মুখোপাধ্যায় জানান, ঘটনার সূত্রপাত অন্ধ্রপ্রদেশের গুন্টুর জেলায়। সেখানকার টেনালি থানার অন্তর্গত রাইসমিল কলোনিতে মা রশিদা বিবির-এর কাছে দেড় বছরের ছেলে শেখ জিশান আহমেদকে নিয়ে থাকত হাসিনা সুলতানা। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় শ্বশুরবাড়িতে ঝগড়া করে স্বামীকে নিয়ে মায়ের কাছে এসে উঠেছিল সে। তবে জিশানের জন্মের স্বামীর সঙ্গেও বনিবনা হয়নি তার। ফলে মায়ের বাড়ি থেকে স্বামীকে বের করে দেয়, এমনই জানা যাচ্ছে। অন্য দিকে, আবার ছোটবেলার প্রেমিক ভান্নুর শায়ের সঙ্গে নতুন সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল হাসিনার।
সরকারি তরফের আইনজীবীর বক্তব্য, এমন পরিস্থিতিতে একদিন হঠাতই মায়ের বাড়ি ছেড়ে ছেলেকে নিয়ে বেরিয়ে আসে হাসিনা। সেটি ২০১৫ সালের ২২ ডিসেম্বরের ঘটনা। সটান চলে যায় হায়দ্রাবাদে। সেখানে গিয়ে নিজেদের স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দেয় হাসিনা ও ভান্নুর। শিশুটিকে তাদেরই সন্তানের পরিচয় দিয়ে বাঞ্জারা হিলস এলাকায় এক মহিলার কাছ থেকে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করে। কয়েকদিন কেটে যাওয়ার পরও মেয়ে বা নাতি না ফিরে আসায় টেনালি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন দিদিমা রশিদা বিবি। টেনালি থানা থেকে মা ও ছেলের ছবি দিয়ে লুক-আউট নোটিশ জারি করা হয়। তবে মর্মান্তিক পরিণতি এড়ানো যায়নি। পুলিশ জানতে পারে, দেড় বছরের ছেলের কারণে তারা ঘনিষ্ঠ হতে পারছিল না। সেখান থেকেই খুন করা হয় তাকে। ২০১৬ সালের ২২ জানুয়ারির রাতে হাসিনা ও ভান্নুর মিলে কাজ হাসিল করে। পর দিন সকালে একটি ট্র্যাভেল ব্যাগের ভিতর জিশানের দেহ ভরে ভান্নুর সেকেন্দ্রাবাদ স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা ফলকনামা এক্সপ্রেসের সিটের নীচে রেখে আসে। ২৪ জানুয়ারি ফলকনামা এক্সপ্রেস এসে হাওড়া স্টেশনে পৌঁছয়।
তার পর...
ট্রেন পরীক্ষা ও পরিষ্কার করার সময় রেলকর্মীদের নজরে আসে ব্যাগটি। খুলতেই শিশুটির দেহ মেলে। তার শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন ছিল। হাওড়া জি আর পি থানার পুলিশ স্বতোঃপ্রণোদিত হয়ে অজ্ঞাতপরিচিত দুষ্কৃতিদের বিরুদ্ধে খুন ও প্রমাণ লোপাটের মামলা শুরু করে। তদন্ত শুরু হয়। দেহ পাঠানো হয় ময়নাতদন্তের জন্য। ময়নাতদন্তে পাওয়া যায় শিশুটির শরীরে ১২টিরও বেশি গভীর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে শিশুটিকে খুন করার কথা বলা হয়েছিল। তদন্ত চলাকালীন পুলিশের নজরে আসে অন্ধ্রপ্রদেশের টেনালি থানার জারী করা লুক-আউট নোটিশটি। সেই নোটিশ ধরে তদন্ত এগোন পুলিশকর্মীরা। টেনালি থানায় গিয়ে খোঁজখবর শুরু করেন। শুরু হয় দুইয়ে দুইয়ে চার করারা পালা। পুলিশের সামনে অপরাধ কবুল করে দুজনই। তদন্ত চলাকালীন শিশুটির বাবা শেখ রিয়াজ ও আসামি হাসিনা আদালতের কাছে গোপন জবানবন্দি দেয়।সেখানেও হাসিনা তার দোষ স্বীকার করে। জানা যায় যে, গ্রেফতারির সময় হাসিনা আবার তিনমাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল। জেলে থাকাকালীন সে একটি পুত্রসন্তানের জন্মও দিয়েছে যার পিতৃত্ব ভান্নুরের। তবে যে নৃশংসতায় শিশুটিকে খুন করা হয়েছিল, তাতে চমকে গিয়েছেন দুঁদে আধিকারিকরাও।