SSC Scam: ‘দুর্নীতি ইস্যুই নয়’, দাবি পার্থর, বললেন, 'আনুগত্যই আমার পতনের জন্য দায়ী'
Partha Chatterjee: মঙ্গলবার জামিনে মুক্তি পেয়েছেন পার্থ। আর বুধবার এবিপি আনন্দের মুখোমুখি হন।

কলকাতা: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি তৃণমূলের সর্বেসর্বা হোন, তিনি ছিলেন নেত্রীর বিশ্বস্ত সঙ্গী, তথা সৈনিক। রাজ্য রাজনীতিতে দলকে দাঁড় করানো থেকে, অপরাজেয় শক্তি হওয়ার নেপথ্য়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিল তাঁর। কিন্তু নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পর তৃণমূলে এখনও ব্রাত্য পার্থ চট্টোপাধ্যায়। গ্রেফতারির পর পরই সাসপেন্ড করা হয়েছিল তাঁকে। প্রকাশ্যে তাঁর নামও কার্যত মুখে আনেন না শীর্ষ নেতৃত্ব। কিন্তু তিন বছর তিন মাস জেল খেটে জামিনে বেরিয়ে এসেছেন পার্থ। এখনও নিজেকে তৃণমূল বলেই দাবি করছেন তিনি। দল না নিলেও, তিনি দল ও মমতার পাশে আছে বলে জানাচ্ছেন। এমনকি দুর্নীতি কোনও বড় বিষয় নয় বলেও দাবি করছেন। (Partha Chatterjee)
মঙ্গলবার জামিনে মুক্তি পেয়েছেন পার্থ। আর বুধবার এবিপি আনন্দের মুখোমুখি হন। নিয়োগ দুর্নীতিতে নাম জড়ানো, বান্ধবীর বাড়ি থেকে টাকার পাহাড় গয়না উদ্ধার নিয়ে প্রশ্ন করা হয় তাঁকে। তাঁর জন্য যে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় দলকে, সেই নিয়ে প্রশ্ন করলে বলেন, "ভূরি ভূরি টাকা, আমার থেকে, আমার বাড়ি থেকে তো পায়নি! বান্ধবীই তার উত্তর দেবে। আমি মনে করি না। দুর্নীতি কোনও ইস্যুই নয়। তাহলে জয়ললিতা ফিরতে পারত না, স্ট্যালিন ফিরতে পারত না, এমনকি বিজেপি-ও ফিরতে পারত না।" (SSC Scam)
পার্থ আরও বলেন, "দুর্নীতি একটা বিষয়, আর একটা বিষয় হল, রাজ্যের উন্নয়ন। উন্নয়নটাই হচ্ছে ম্যাক্সিমাম। ৮০ শতাংশ আমরা ব্যয় করি অকাজে, ২০ শতাংশ ব্যয় করি কাজে। এখানেও তাই। সবটাই দুর্নীতিতে ব্যয় করলে, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কেন্দ্রীয় প্রকল্প,১০০ দিনে দুর্নীতি বলে যদি সময় ব্যয় করি...এটা তো আজ থেকে নয়। চিরকাল চলে আসছে। শিক্ষায় দুর্নীতি হয়েছে কি না, আমার সময় তো কেউ বলেনি! আমি তো সর্ববৃহৎ সময়, দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষামন্ত্রী ছিলাম। '২১ আমি চলে এলাম, তার পরই এসব দুর্নীতি আরম্ভ হল!"
কিন্তু স্কুল সার্ভিস কমিশন যেখানে দুর্নীতির অভিযোগ স্বীকার করেছে, তালিকা প্রকাশ করেছে, সেখানে দুর্নীতি বড় কিছু নয় বলে কী ভাবে দাবি করছেন পার্থ? পার্থর দাবি, স্কুল সার্ভিস কমিশন একটি স্বয়ংশাসিত সংস্থা। তাদের নিজেদের বিধিনিয়ম রয়েছে। সেখানে শিক্ষামন্ত্রীর কোনও কাজ নেই। নিজেকে এখনও তৃণমূল বলেই দাবি করছেন পার্থ। কিন্তু তিনি ফিরতে চাইলেই কি ফিরিয়ে নেবে দল? সাসপেনশন কি তুলে নেবে? পার্থ জানান, দল দলের কাজ করবে। তিনি নিজের মানসিক এবং শারীরিক শক্তি ফিরিয়ে আনার কাজ করবেন।
জামিনে বেরনোর পর দলের সঙ্গে এখনও যোগাযোগ না হলে, অনুগামীদের একাংশ যে তাঁর পাশে ছিলেন, সেকথা জানাতে ভোলেননি পার্থ। বলেন, "দলের কারও সঙ্গেই যোগাযোগ হয়নি। বহু কর্মী আছেন দলের, তাঁরা যোগাযোগ রেখেছেন, কেউ মিষ্টি পাঠিয়েছেন, কেউ ফল নিয়ে দাঁড়িয়েছেন। কেউ কোর্টে গিয়ে চোখের জল ফেলেছেন। তাঁদের তো আমি চিনি, জানি! অনেকেই এই কেন্দ্রীয় সংস্থার শাস্তি, যদি যাই, আবার আমায় ধরে! সেই ভয়ে অনেকেই আসেনি।" নিজের কেন্দ্র বেহালা পশ্চিমে যেতে আগ্রহী পার্থ। তবে বিধানসভায় যেতে এখনই আগ্রহী নন তিনি। বলেন, " সাড়ে তিন বছর যখন যাইনি, সাড়ে তিন মাস গিয়ে কী হবে? বিধানসভা তো জনপ্রতিনিধিদের বলার জায়গা। সাড়ে তিন বছর ধরে বলতে পারিনি। আমায় বলতে দাও বলে চিৎকার করেছি। কিন্তু কেউ তো আমার কাছে আসেনি! শোনেনি! বলতেও পারিনি আমি। আমি আমার বিধানসভা কেন্দ্র, বেহালা পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রের প্রত্যেক মানুষের কাছে দায়বদ্ধ। তাঁরা কি একটা অসৎ লোককে ২৫ ধরে জিতিয়েছেন? "
তৃণমূলের গোড়া থেকে রয়েছেন তিনি। মন্ত্রী হয়েছেন, বিধায়ক হয়েছেন, বিরোধী দলনেতা হয়েছেন, দলের মহাসচিব পদে ছিলেন, শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির দায়িত্বও ছিল তাঁর কাঁধে। সেই পার্থর এমন পরিণতির জন্য দায়ী কে? এ প্রশ্নও এড়াননি তিনি। বলেন, "আমি নিজেই (দায়ী) দায়ী আমার আনুগত্য। আমার আনুগত্যই আমার পতনের জন্য দায়ী, এই পরিণতির জন্য দায়ী।"
কিন্তু আর কেউ কি আছেন, যাঁর কথা মাথায় আসছে তাঁর? ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেন পার্থ। তাঁর বক্তব্য, "জেলে মাওবাদীদের দেখেছি, কথা হয়েছে। আমার কোনও কষ্ট হয়নি এমনিতে। কষ্ট হয়েছে এই ভেবে যে, ব্রুটাস তুমিও?" জুলিয়াস সিজ়ারের হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত মার্কাস জুনিয়াস ব্রুটাসের উল্লেখ কেন করলেন পার্থ? বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে তাঁর রাজনৈতিক কেরিয়ারকে আঁধারে পাঠিয়ে দেওয়ার নেপথ্যেও কি কেউ আছেন? তাঁর জীবনে ব্রুটাস কে? পার্থ বলেন, "খুঁজে বের করব।"























