RG Kar Case: ভোর ৩.৪৫-এ মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি, রাজনীতির খেলা নয় তো? প্রশ্ন চন্দ্রিমার, টানাপোড়েন চরমে
Junior Doctors Protest: সুপ্রিম কোর্ট কর্মবিরতি তুলে নেওয়ার জন্য যে নির্দেশ দিয়েছিল, তার সময়সীমা পার হয়ে গেলেও, এখনও অবস্থানে অনড় জুনিয়র চিকিৎসকরা।
কলকাতা: দফায় দফায় চিঠি। লাগাতার অবস্থান, বিক্ষোভ। কিন্তু আর জি কর কাণ্ডে জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে রাজ্য সরকারের টানাপোড়েনে ইতি পড়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না এখনও পর্যন্ত। শর্তসাপেক্ষে কোনও আলোচনা সম্ভব নয় বলে জুনিয়র চিকিৎসকদের পরিষ্কার জানিয়ে দিল রাজ্য সরকার। শুধু তাই নয়, জুনিয়র চিকিৎসকদের অনড় অবস্থানের নেপথ্যে 'রাজনীতির খেলা' আছে কি না, সেই প্রশ্নও তুলল রাজ্য। (RG Kar Case)
সুপ্রিম কোর্ট কর্মবিরতি তুলে নেওয়ার জন্য যে নির্দেশ দিয়েছিল, তার সময়সীমা পার হয়ে গেলেও, এখনও অবস্থানে অনড় জুনিয়র চিকিৎসকরা। রাজ্যের তরফে নবান্নে বৈঠকে আহ্বান জানানো হলেও, যাননি তাঁরা। বরং রাজ্যকে কিছু শর্ত ধরিয়েছেন। আর সেই নিয়েই চাপানউতোর চরমে পৌঁছল। নবান্ন থেকে সাংবাদিক বৈঠক করে জুনিয়র চিকিৎসকদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। (Junior Doctors Protest)
বুধবার সন্ধে ৬টায় জুনিয়র চিকিৎসকদের নবান্নে ডাকা হয়েছিল। তাঁরা না যাওয়ায়, সন্ধে ৭.৩০টা নাগাদ নবান্ন থেকে সাংবাদিক বৈঠক করেন চন্দ্রিমা, রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, এবং ডিজি রাজীব কুমার। সেখান থেকে চন্দ্রিমা বলেন, "যা ঘটেছে, তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক, বেদনাদায়ক। আমরা এর যথেষ্ট ভাবে নিন্দা করি। এই অপরাধীদের শাস্তি হোক। শুধু মুখে বলা নয়, তার জন্য বিধানসভায় বিলও পাস হয়েছে। তার পরও আলোচনা নিয়ে গতকাল থেকে টানাটানি চলছে।"
চন্দ্রিমা এদিন বলেন, "আমরা বার বার বলছি, এটা অন্য কোনও ক্ষেত্র নয়। এটা রোগীদের পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্র। সাধারণ মানুষ, গরিব মানুষ যাতে চিকিৎসা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত না হন, তার জন্যই বার বার অনুরোধ করা হচ্ছে। ৯ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্ট মঙ্গলবার বিকেল ৫টার মধ্যে কর্মবিরতি তুলে নিতে নির্দেশ দেয়। গতকাল বিকেল ৫টা পর্যন্ত দেখেছি আমরা। বিশ্বাস ছিল, আদালতের নির্দেশ মেনে কাজে ফিরবেন ওঁরা। নাগরিকরা দেশের আইন মেনে চলতে বাধ্য। সেই মতো মানিয়ে নিতে হয়। ভেবেছিলাম, ওঁরাও কর্মবিরতি তুলে নেবেন। সেই মতো চিঠি পাঠানো হয়। উল্টে নানা রকম কথা বলে বৈঠকে এলেন না কেউ।"
চন্দ্রিমা জানান, গতকাল বিকেল ৫টা পর্যন্ত দেখার পর ৬টা বেজে ১০ মিনিটে ইমেল পাঠানো হয় স্বাস্থ্যসচিবের তরফে। স্বাস্থ্য দফতরের সিনিয়র আধিকারিকরা আলোচনার জন্য অপেক্ষা করছেন বলে জানানো হয়। মুখ্যমন্ত্রী নিজে ৭.৩০টা পর্যন্ত বসেছিলেন। কিন্তু কেউ এলেন না। বরং ভোর ৩.৪৫-এ ইমেল এল তাকে কেন্দ্র করে। ভোর ৩টে বেজে ৪৫ মিনিটে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে ইমেল আসা কি আদৌ স্বাভাবিক? এই প্রশ্নও তোলেন চন্দ্রিমা।
এর পরই রাজনৈতিক ইন্ধনের প্রসঙ্গ তোলেন চন্দ্রিমা। তাঁর বক্তব্য, "এর পিছনে কি রাজনীতি লুকিয়ে রয়েছে? আসলে রাজনীতি লুকিয়ে রয়েছে বলেই এমন ঘটনাপ্রবাহ দেখছি আমরা। ৩.৪৫-এর ওই ইমেলের পর আজ দুপুর ৩টে বেজে ২১ বা ২৩ মিনিটে স্বাস্থ্যসচিব ইমেল পাঠান। আড়াই ঘণ্টা আগে ইমেল পাঠিয়ে ৬টায় আসতে বলা হয়। সেই ইমেলের উত্তর এল প্রায় দু'ঘণ্টা পর, তাও শর্ত দিয়ে। লাইভ সম্প্রচার, মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতি, শর্ত নিয়ে কথা বলার দাবি জানিয়ে। পরিষ্কার ভাবে বলতে চাই, রাজ্য সরকার খোলা মনে আলোচনায় বসতে চাইছে, কোনও শর্তসাপেক্ষে নয়। খোলা মন এবং শর্ত, পাশাপাশি চলতে পারে না।"
জুনিয়র চিকিৎসকদের সমালোচনা করে চন্দ্রিমা আরও বলেন, "অর্থাৎ খোলা মন নেই। নির্যাতিতা বিচার পান, তাঁর মায়ের কোল খালি হওয়া, এসব ব্যাপারই নয়। এর পিছনে রাজনীতির খেলা রয়েছে। চাই এত সময় লাগছে চিন্তাভাবনা করতে। খোলা মনে আলোচনা চান না বলেই শর্ত দেওয়া হচ্ছে। এখনও বলছি, আসুন খোলা মনে আলোচনা করি। দেশের নাগরিক হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সকলের মানা উচিত। গতকাল অপেক্ষা করে চলে যাওয়ার পরও নেগেটিভ কোনও পদক্ষেপ করেননি মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু আদালত যা বলেছে, তাকে মান্যতা দিয়ে সেই নির্দেশ কার্যকর করার পদ্ধতিগুলি এবার দেখতে হবে। আমরা লক্ষ্য রাখছি। আবারও বলছি, এটা রোগী পরিষেবার বিষয়। রোগীদের বঞ্চিত করা বোধহয় ঠিক হচ্ছে না। জুনিয়র চিকিৎসকরা ভাবুন। বলব, এটা রাজনীতির উস্কানি, তাতে না গিয়ে, আপনারা যে মহৎ পেশায় এসেছেন, তার কর্তব্য পালন করুন।"