RG Kar Murder Case: 'অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত টিউশন ছিল না, ৩৬ ঘণ্টা ডিউটির পরও রোগী দেখা চলত', কান্না চাপতে পারছেন না RG করের নির্যাতিতার মা
RG Kar Doctor Death Case: দুই সপ্তাহ আগের বৃহস্পতিবার রাতের ডিউটি করতে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন নির্যাতিতা।
কলকাতা: এমন এক বৃহস্পতিবারই বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন মেয়ে, তার পর দু'সপ্তাহ পেরিয়ে গিয়েছে। বাড়ি ফেরা হয়নি আর জি করের ৩১ বছর বয়সি তরুণী চিকিৎসকের। বরং তাঁকে নৃশংস ভাবে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় এই মুহূর্তে তোলপাড় দেশ। কিন্তু ওই চিকিৎসক তরুণীর বাড়িতে এই মুহূর্তে শূন্যতা, স্তব্ধতা, বিচারের জন্য হাহাকার। মেয়ের কথা বলতে গিয়ে চোখের জল ধরে রাখতে পারছেন না মা। (RG Kar Murder Case)
দুই সপ্তাহ আগের বৃহস্পতিবার রাতের ডিউটি করতে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন নির্যাতিতা। মেয়ে যে আর বাড়ি ফিরবে না, এমনটা দুঃস্বপ্নেও তাঁর মনে আসেনি বলে জানিয়েছেন ওই তরুণীর মা। এবিপি আনন্দকে দেওয়া এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, "এই বৃহস্পতিবার ঘর থেকে বেরিয়েছিল। আর ফিরে আসেনি। পড়াশোনা, বেড়ে ওঠা সব আমার হাতে। ক্লাস এইটের আগে টিচারই দিইনি। আমার হাতে মেয়ে গড়ে উঠেছে। নিজে পড়াতাম।" (RG Kar Doctor Death Case)
কাপড় সেলাই করে এবং জামা-কাপড় ফেরি করেই মেয়েকে চিকিৎসক করে তুলেছিলেন বাবা। তাঁদের নয়, মেয়েরই ছোট থেকে চিকিৎসক হওয়ার ইচ্ছে ছিল বলে জানিয়েছেন মা। কান্না চেপে বলেন, "আমার ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু ও ডাক্তার হতে চাইত। একবারেই মেডিক্যালে চান্স পেয়ে যায়। সারাদিন পড়াশোনা নিয়ে থাকত। মা-বাবাকে ভালবাসত ভীষণ, ঘেঁষে থাকত মায়ের সঙ্গে। একটু মোবাইল দেখত। কোথাও যেত না।"
হাসপাতালে ৩৬ ঘণ্টা ডিউটি নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তরুণী চিকিৎসকের মায়ের বক্তব্য, "এত নামকরা হাসপাতাল। খুব খুশি হয়েছিলাম মেয়ে ভর্তি হওয়ায়। অন ডিউটি এভাবে প্রাণটা চলে গেল, মেনে নিতে পারছি না। ডিউটির চাপ ছিল। কিন্তু ও চাপ নিতে অভ্যস্ত ছিল। ৩৬ ঘণ্টা ডিউটি করে এসেও রোগী দেখত, আবার রাতে পড়াশোনা করত।"
ঘটনার রাতে ১১টা বেজে ১৫ মিনিটে শেষ বার মেয়ের সঙ্গে কথা বলেন তরুণী চিকিৎসকের মা। সেই রাতে অনলাইনে চিকেন বর্তা, রুমালি রুটি এবং আরও কিছু আনিয়েছিলেন মৃতা। গরম গরম খেয়ে নিতে বলেছিলেন মা। মেয়ে মাকে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়তে বলেছিলেন। মনে করে ওষুধ দিতে বলেছিলেন বাবাকে। সেই শেষ কথা। আর মেয়ের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাননি তিনি। চোখের জল ধরে রাখতে পারলেন না তরুণী চিকিৎসকের মা। তিনি জানিয়েছেন, তাঁরা সিবিআই, সিআইডি, সুপ্রিম কোর্ট বোঝেন না। শুধু বিচার চান। দ্রুত বিচার চান তাঁরা।
আর জি করের নির্যাতিতার মা জানিয়েছেন, হাসপাতালে কারও সঙ্গে তাঁদের মেয়ের বিবাদ ছিল না। বহিরাগতদের আনাগোনা বা অসাধু কাজকর্ম নিয়েও কখনও কিছু তাঁদের জানাননি মেয়ে। কিন্তু মেয়েকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় যে ভুয়ো খবর ছড়াচ্ছে, তাতে তাঁরা আহত হয়ে জানিয়েছেন মা-বাবা। তাঁদের মেয়েকে নিয়ে ভুয়ো খবরের ব্যবসা বন্ধ করতে আর্জি জানিয়েছেন নির্যাতিতার বাবা। এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রশাসনের কাছে পদক্ষেপ চেয়ে আবেদন জানিয়েছেন তাঁরা। তাঁরা জানিয়েছেন, রোগী দেখা, নিজের পড়াশোনা ছাড়া কোনও দিকে মাথা ঘামাতেন না তাঁদের মেয়ে। বাড়িতে যেটুকু কথা হতো হাসপাতাল নিয়ে, তা কোন রোগীর কী সমস্যা, কীভাবে বেঁচে রয়েছেন বহু মানুষ, তা-ই জানাতেন মেয়ে।
তরুণী চিকিৎসকের বাবা বলেন, 'ডায়েরিতে মেয়ে লিখেছিল, এমডি-তে গোল্ড মেডেল পেতে হবে। ভাল রাখতে হবে মা-বাবাকে'। ওইটুকুই তাঁরা দেখেছেন, সেই পাতা কোথায় গেল, কী হল, তা জানেন না বলে জানিয়েছেন তরুণী মা-বাবা। ডায়েরিটি হাসপাতালেই ছিল বলে জানিয়েছেন তাঁরা। হাসপাতালের সর্বত্র সিসিটিভি ক্য়ামেরা থাকলে, নিরাপত্তা কড়া হলে, এই ঘটনা ঘটত না, তাঁদের মেয়েকে চলে যেতে হতো না বলে জানিয়েছেন মা-বাবা। ডিপার্টমেন্ট সব জানে, কিন্তু গত দুই সপ্তাহে ডিপার্টমেন্টের তরফে কোনও যোগাযোগ করা হয়নি বলে অভিযোগ তাঁদের।