RG Kar Protest: আরজি কর কাণ্ডে তুমুল ক্ষোভের নিশানায় পুলিশ! কেন এত রাগ? রইল তালিকা
Junior Doctor Protest: সোমবার জুনিয়র ডাক্তারদের লালবাজার অভিযান ছিল। দুপুরে এসে পৌঁছেছিলেন সেখানে। পুলিশ কমিশনারের পদত্যাগ চেয়েছিলেন তাঁরা। সোমবার রাতভর রাস্তায় চলেছে প্রতিবাদ।
পার্থপ্রতিম ঘোষ, কৃষ্ণেন্দু অধিকারী ও অর্ণব মুখোপাধ্য়ায়, কলকাতা: পুলিশ কমিশনারের পদত্যাগ চেয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনে গর্জে উঠল রাজপথ। কিন্তু পুলিশের বিরুদ্ধে কেন এত ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলেন তারা? অনেকেই বলছেন, ধৃত সঞ্জয় রায়কে সিভিক ভলান্টিয়ার না বলা, পুলিশের সামনেই আর জি কর মেডিক্যালে তাণ্ডব, FIR নিয়ে বিতর্ক---একের পর এক ঘটনায় প্রশ্নের মুখে পড়েছে পুলিশের ভূমিকা। এমনকী এ নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেছে হাইকোর্ট ও সুপ্রিমকোর্টও।
আরজি কর-কাণ্ডের প্রেক্ষিতে, এবার কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের ইস্তফার দাবিতে রাজপথে আন্দোলনের ঝড় তুললেন জুনিয়র ডাক্তাররা। রাতে বসেও চলছে অবস্থান-আন্দোলন। ভিড় বেড়েছে আরও। কলকাতার পুলিশ কমিশনারের পদত্য়াগের দাবিতে চিকিৎসকদের নজিরবিহীন লালবাজার অভিযান হল সোমবার। সরাসরি মেরুদণ্ডের জোর নিয়ে কটাক্ষ করেছেন ডাক্তাররা। কিন্তু, পুলিশের ওপর আন্দোলনকারীদের এই পাহাড় প্রমাণ ক্ষোভের কারণ কী? অনেকে বলছেন, কারণ একটা নয়, সেই তালিকাটা দীর্ঘ। যেমন আরজি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসক ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় সঞ্জয় রায় গ্রেফতার হওয়ার পরও তিনি যে কলকাতা পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ার তা বলতে চাননি কলকাতার পুলিশ কমিশনার।
এরপর ১৪ অগাস্ট রাতের ঘটনা। আরজি কর মেডিক্য়াল কলেজে দুষ্কৃতী-তাণ্ডব চালিয়ে তছনছ করা হয়। সেই সময় পুলিশ কার্যত নিষ্ক্রিয় হয়ে বসেছিল। আর সেই ঘটনায় আরজি কর কাণ্ডে তথ্য়প্রমাণ নষ্ট করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
তদন্ত নিয়ে পুলিশকে ভর্ৎসনা করেছে কলকাতা হাইকোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্টও। ময়নাতদন্তের পর কী করে অস্বাভাবিক মৃত্যুর অভিযোগে FIR দায়ের হতে পারে, সেই প্রশ্ন তুলেছে স্বয়ং সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। ভাইরাল হওয়া ছবিতে দেখা গেছে, FIR-এ ‘ফার্স্ট কন্টেন্টস’ কলমে লেখা ‘আননোন মিসক্রিয়েন্টস কমিটেড উইলফুল রেপ উইথ মার্ডার’। কিন্তু, ইচ্ছাকৃত ধর্ষণ ও খুন বলতে কী বোঝানো হয়েছে, সেই উত্তর নেই কারও কাছে।
চিকিৎসকের মৃতদেহ যেখানে উদ্ধার হয়েছিল, সেই সেমিনার হলে ভিড় নিয়েও প্রশ্নের মুখে পড়েছে পুলিশ। পুলিশের তরফে সেমিনার হলে ৪০ ফুট ও ১১ ফুটের হিসেব দিয়ে কর্ডনের দাবি করা হলেও তা সরাসরি উড়িয়ে দিয়েছেন খোদ নির্যাতিতার বাবা-মা। তাঁরা যখন গিয়েছিলেন তখন কর্ডন ছিল না বলে জানিয়েছেন। যে ঘটনা ঘটেছে, তাতে সেমিনার রুম গোটাটাই কর্ডন করা উচিত ছিল বলে দাবি করেছেন একাধিক বিশেষজ্ঞ।
ছবি দেখিয়ে, কয়েকজনের পরিচয় দিয়ে পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তা ব্য়াখ্য়া দেওয়ার চেষ্টা করলেও, তাতে বিতর্ক কমেইনি উল্টে বেড়েছে। কারণ, সেমিনার হলের ভাইরাল ছবিতে যাঁদের দেখা গিয়েছে পুলিশের দেখানো ছবিতে তাঁদের কয়েকজনের ছবি নেই। লাল বা বেগুনি জামা পরা লোক পুলিশের ছবিতে ছিল না যেমন, ভাইরাল ছবিতে এক ব্য়ক্তিকে সেমিনার হলে দেখা গিয়েছিল, যাঁর পরিচয় মিলেছিল বিরূপাক্ষ নামে। কিন্তু, পুলিশের দেখানো ছবিতে তিনি নেই।
IMA-র পক্ষ থেকে সেমিনার হলের ভাইরাল ছবি দেখিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, ওই ব্য়ক্তি কি বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের সিনিয়র রেসিডেন্ট ডক্টর বিরূপাক্ষ বিশ্বাস? পাশাপাশি প্রশ্ন উঠছে, পুলিশের ছবিতে এই ব্য়ক্তিকে দেখা যাচ্ছে না কেন? পুলিশ কি ক্রপ করা ছবি দেখিয়েছে? তারা কি তাহলে কাউকে আড়াল করতে চাইছে? এই বিরূপাক্ষ বিশ্বাস আবার সন্দীপ ঘোষের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত।
পুলিশ ছবি দেখিয়ে কয়েকজনের যে পরিচয় দিয়েছিল, তা নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ভাইরাল ছবিতে, সেমিনার হলের ঠিক যেখানে চিকিৎসকের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছিল, তার একদম কাছে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় লাল জামা পরা এক ব্যক্তিকে। কলকাতা পুলিশের তরফে এই ব্যক্তিকে, ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্টের ফিঙ্গার প্রিন্ট এক্সপার্ট বলে দাবি করা হলেও IMA-র পাল্টা বক্তব্য়, এই ব্য়ক্তি SSKM মেডিক্যাল কলেজের সার্জারি বিভাগের প্রথম বর্ষের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনি অভীক দে। এরপর কলকাতা পুলিশ ফের দাবি করে, অভীক দে বলে যাঁকে দাবি করা হচ্ছে, তিনি আসলে আনিসুর রহমান। ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্টের ফিঙ্গার প্রিন্ট বিশেষজ্ঞ। কিন্তু, IMA নিজেদের অবস্থানে অনড়। ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য শাখার তরফে সোশাল মিডিয়ায় স্পষ্ট দাবি করা হয়েছে, 'আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে পারি ওই ব্যক্তি অভীক দে'।
এই পরিস্থিতিতে আন্দোলনকারী চিকিৎসদের ক্ষোভ আছড়ে পড়ল লালবাজারের ওপর। সব মিলিয়ে লাগাতার আন্দোলনে কার্যত বেসামাল প্রশাসন।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।
আরও পড়ুন: রাতদখলে রাস্তায় ডাক্তারেরা, পৌঁছলেন সোহিনী-চৈতি-সুদীপ্তা-দেবলীনা