(Source: ECI/ABP News/ABP Majha)
Suvendu Adhikari: 'এই বাড়ি থেকেই মুখ্যমন্ত্রী হওয়া, নইলে দিদি থেকে দিদিমা হতেন', মমতাকে তীব্র কটাক্ষ শুভেন্দুর
Sukanta Majumdar:রবিবার সন্ধেয় কাঁথির শান্তিকুঞ্জে পৌঁছন সুকান্ত। শিশিরের সঙ্গে সাক্ষাৎই উদ্দেশ্য বলে জানান। সেখানে দরজার বাইরে তাঁকে স্বাগত জানান শুভেন্দু।
কাঁথি: একই দলের সদস্য দুই জন। অথচ পাশাপাশি দেখা মেলে কদাচিৎ। তা নিয়ে নানা জল্পনাও রয়েছে। কিন্তু কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর দিন কাঁথিতে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu Adhikari) বাড়িতে পা রেখে সেই জল্পনায় জল ঢাললেন রাজ্য বিজেপি-র (BJP) সভাপতি সুকান্ত মজুমদার (Sukanta Majumdar)। মূলত শুভেন্দুর বাবা শিশির অধিকারীর সঙ্গে দেখা করতেই সেখানে যান বলে জানান সুকান্ত। তবে বাড়িতে ঢোকার মুখে শুভেন্দুকে আলিঙ্গন করতে দেখা যায় তাঁকে। আর সুকান্তকে পাশে নিয়ে তৃণমূল (TMC) নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee) তীব্র আক্রমণ করেন শুভেন্দু। তাঁদের বাড়ি থেকেই মমতার মুখ্যমন্ত্রী হয়ে ওঠা বলে দাবি করেন।
কাঁথিতে অধিকারী বাড়িতে হাজির সুকান্ত মজুমদার
রবিবার সন্ধেয় কাঁথির শান্তিকুঞ্জে পৌঁছন সুকান্ত। শিশিরের সঙ্গে সাক্ষাৎই উদ্দেশ্য বলে জানান। সেখানে দরজার বাইরে তাঁকে স্বাগত জানান শুভেন্দু। সুকান্তর আগমনের নেপথ্যে রাজনৈতিক পটচিত্রের কথা জানতে চাইলে, উড়িয়ে দেন তিনি। শুভেন্দু বলেন, "এর মধ্যে রাজনীতি খোঁজার দরকার নেই। আমার পিতৃদেব এবং মাতৃদেবীর সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করতে এসেছেন উনি। উনিও তাঁদের কাছে পুত্রসমানই।"
এর পরই সুকান্তকে পাশে নিয়ে মমতাকে ঝাঁঝালো আক্রমণ করেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে (এই) বাড়ি থেকে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন, এই বাড়িতেই ছিলেন উনি। ২০০৭ সালের ১৪ মার্চ নন্দীগ্রাম হয়। ২০০৮ সালের ১৩ মার্চ রাতে এই বাড়ির ছাদে ছিলেন। নন্দীগ্রাম না হলে দিদি থেকে দিদিমা হতেন উনি। কোনও দিন মুখ্যমন্ত্রী হতেন না। সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন এই বাড়িতে সিআইডি, পুলিশ পাঠিয়েছেন। সামনে-পিছনে সিসিটিভি ক্যামেরা বসিয়েছেন। ভাইপোর কোম্পানি রয়েছে, ওই ভাটাংশু আর যাদের দেখেন। এই বাড়ির সামনে দিয়ে মিছিল করে আমার ৮৪ বছরের পিতৃদেব এবং ৭৫ বছরের মাতৃদেবী, যাঁরা নার্সের নজরদারিতে থাকেন, গত এক বছর ধরে তাঁদের বিব্রত করা হচ্ছে।"
সম্প্রতি শুভেন্দু অধিকারীর ভাই সৌমেন্দু অধিকারীকে ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। দুর্নীতি এবং বেনামী সম্পত্তি সংক্রান্ত অভিযোগে প্রায় ১০ ঘণ্টারও বেশি তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।তৃণমূলে থাকাকালীন প্রায় প্রায় ১০ বছর কাঁথি পুরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। পুরসভার মেয়াদ ফুরনোর পরও প্রশাসকের দায়িত্ব সামলেছেন সৌমেন্দু। কাঁথি পুরসভার দায়িত্বে থাকাকালীন পুরসভার পথবাতি বসানো থেকে শুরু করে, রাঙামাটি শ্মশানের জমি বিক্রি করে স্টল বিলি, সারদার ফাইল উধাও, কাঁথি প্রভাত কুমার কলেজে টেন্ডারে কারচুপি, পুরসভার ত্রিপল চুরি-সহ একাধিক দুর্নীতির অভিযোগে সৌমেন্দুর বিরুদ্ধে মামলায় দায়ের হয়।
আরও পড়ুন: Anubrata Mandal: হাওয়ালা মাধ্যমে টাকার লেনদেন! ভাগ যেত BSF, পুলিশ,নেতাদের কাছে, আদালতে সিবিআই
তার পর অধিকারী বাড়িতে সুকান্তর আগমন রাজনৈতিক ভাবেও অর্থবহ বলে মনে করা হচ্ছে। সৌমেন্দুকে জিজ্ঞাসাবাদের কথা তুললে শুভেন্দু বলেন, "আমি তো বলেইছি, সুদ, আসল এবং দণ্ডসুদ-সহ সব কিছু ফেরত পাবেন।"
কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো উপলক্ষে এ দিন অধিকারী বাড়ি আলোয় সেজে উঠেছিল। সেখানে পৌঁছে শিশির এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে প্রায় একঘণ্টা কথা বলেন সুকান্ত। তাঁর বক্তব্য, "যাঁদের হাত ধরে বাংলায় বাম শাসনকে উত্খাত করতে পেরেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তাঁদের মধ্যে অন্যতম একজন শিশির অধিকারী। তাঁর মতো রাজনৈতিক ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করা, বিজয়ার প্রণাম করা আমার কাছে সৌভাগ্যের।"
কিন্তু অধিকারী বাড়িতে সুকান্তর পদার্পণ নিয়ে কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছে তৃণমূল। দলের রাজ্য় সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষের কথায়, "এতেই প্রমাণ হচ্ছে, শিশির-শুভেন্দু সব দলবদলু। এতদি দেখাই হয়নি তাঁদের মধ্যে। সুকান্ত এতদিন বিজেপি করে এখন লোক চিনছেন। তৎকাল বিজেপি হওয়াদের সঙ্গে দেখা করছেন গিয়ে। তবে সুকান্ত শুধু মনে রাখুন, যাঁকে এত কথা বলছেন, সেই শিশির অধিকারী একবার মাত্র কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়েছেন, তাও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দয়ায়। তৃণমূলের প্রতীকচিহ্ন ছাড়া কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হতে পারেননি। শুভেন্দু সাংসদ হয়েছেন মমতার দয়ায়, সৌমেন্দু চেয়ারম্যান হয়েছেন মমতার দয়ায়, দিব্যেন্দু সাংসদ হয়েছেন, তা-ও মমতার দয়ায়। তৃণমূল কর্মীদের আবেগ, শহিদদের আত্মত্যাগ এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লড়াইকে ব্যবহার করে, দলের প্রতীকে জেতেন ওঁরা। এখন বিজেপি-র মঞ্চে বসেও সেই প্রতীক ছাড়তে পারছেন না।"
মমতার দয়াতেই অধিকারীদের পসার! পাল্টা কুণাল
উল্লেখ্য, ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি-তে যোগ দেন শুভেন্দু। তার পর সৌমেন্দুও পদ্মশিবিরে গিয়ে ওঠেন। শিশির এবং দিব্যেন্দুর অবস্থান এখনও স্পষ্ট নয়। তবে নির্বাচনী প্রচারে অমিত শাহের পাশে, বিজেপি-র মঞ্চে দেখা গিয়েছে শিশিরকে। এমনকি ভোটদানের পর, পদ্ম বোতামই টিপিছেন বলেও জানান শিশির। তাতে তাঁর সাংসদ পদ বাতিলে উদ্যোগী হয়েছে তৃণমূল। দলত্যাগ বিরোধী আইনে এ নিয়ে সংসদেও গিয়েছে তারা। সংসদে সেই নিয়ে ডাকও পড়েছে শিশিরের। তবে তাঁর দাবি, তিনি তৃণমূলেই আছেন। বিজেপি-তে যাননি। সেই আবহেই সুকান্ত-সাক্ষাৎ নিয়ে তৃণমূল শিশিরের সাংসদ বাতিলের উপর আরও জোর দেবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।