Tapas Roy: ‘ও সাদা হাতি, অনুৎপাদক’, সুদীপকে বেনজির আক্রমণ তাপসের
Sudip Bandyopadhyay: তৃণমূলের অন্দরে নবীন-প্রবীণ দ্বন্দ্ব জারি। তার মধ্যেই ফের সুদীপকে আক্রমণ তাপসের।
কলকাতা: কেউ বলছেন মুষলপর্ব শুরু হয়ে গিয়েছে, কেউ আবার লোক দেখানো নাটক বলছেন। কিন্তু নতুন বছরে তৃণমূলের (TMC) অভ্যন্তরীণ কলহে বিরাম পড়ার লক্ষণ নেই। রাজ্য রাজনীতিতে সেই নিয়ে চর্চার মধ্যেই ফের প্রকাশ্য়ে পরস্পরকে আক্রমণে দলের নেতারা। আবারও দলের সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Sudip bandyopadhyay) তীব্র আক্রমণ করলেন বরাহনগরের তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায় (Tapas Roy)। জানিয়ে দিলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee) দেখে তৃণমূল করেন তিনি। সুদীপের জ্ঞান শুনবেন না তিনি।
সম্প্রতি নবীন-প্রবীণ দ্বন্দ্ব নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন সুদীপ। মমতা না থাকলে বাংলা 'ছাগলের তৃতীয় সন্তান' হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। সেই নিয়ে সুদীপের সমালোচনায় সরব হন তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। একদিন আগে সরব হন তাপসও। আবারও বুধবার এবিপি আনন্দে মুখ খুললেন তাপস। তাঁর কথায়, "ও নিজেকে হাতি ভাবে, কিন্তু ও মোটেই হাতি নয়। সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলতেন, 'দেখ, দেখ, কেমন পেঙ্গুইনের মতো হেঁটে আসছে!' আর যদি হাতি হয়ও, সেটা সাদা হাতি, অনুৎপাদক সবক্ষেত্রে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্ব নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলেনি, কারও এত ঔদ্ধত্য, স্পর্ধা এবং ক্ষমতা নেই। আমি যে আজও দলটা করি, তা-ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে।"
সুদীপকে নিশানা করে তাপস আরও বলেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য তৃণমূল করি। কিন্তু যদি সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে তুষ্ট করে যদি চলতে হয়, তাহলে নিশ্চয়ই ভাবতে হবে আমাকে। সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে আমি দল করি নাকি? আমাদের দলে তো ছয়-সাত বছর ছিল না ও! বলেছিল, দলটা নাকি উঠে যাবে! ওরা স্বামী-স্ত্রী মিলে কী কী করেছিল, আমার কাছে আছে। প্রয়োজনে আবারও তুলব। যারা দলের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করতে চাইছে, শীঘ্রই চিহ্নিত করা হবে। যারা মমতাপন্থী, যারা তৃণমূলপন্থী, যারা অভিষেকপন্থী, সুদীপ তাদের পছন্দ করে না।"
আরও পড়ুন: Sougata-Bratya: 'আমি নবীন নই, প্রবীণও নই..', ফের মুখ খুললেন সৌগত, ব্রাত্য বসু বললেন..
দলের নেতাদের বাদ দিয়ে, তাঁকে বাদ দিয়ে, উত্তর কলকাতায় সুদীপ নিজের মতো কিছু একটা করতে চাইছেন বলেও এদিন দাবি করেন তাপস। তাঁর বক্তব্য, "নিজের মতো করে উত্তর কলকাতার সাতটি ওয়ার্ডে নিজের মতো করে কিছু করতে চাইছে ও। আমাকে ডাকবে না বলে, কাউন্সিলর এবং ওয়ার্ড সভাপতিদের নিষেধ করে দেয়। ওর থেকে বেশিদিন তৃণমূল করছি। হিসেবে মাঝের ছ'-সাত বছর বাদ দেওয়া হোক, যে সময় ও ছিল না দলে। ১৫ বছর ধরে আমার উপর যে অত্যাচার, অন্যায়, অবিচার হয়েছে, যে অসভ্যতা, অসম্মানের শিকার হয়েছি, তার বিচার হোক।"
এ নিয়ে যদিও তৃণমূলকে কটাক্ষ করেছেন বিজেপি নেতা সজল ঘোষ। তিনি বলেন, "কী মিষ্টি ব্যাপার! ১৫ বছর ধরে অত্যাচার হচ্ছে। আর উনি যাঁর নাম ভজনা করেন, সেই দিদি বা ইদানীং যাঁর অনুগামী হয়েছেন, সেই ভাইপো ওঁকে একটা সুযোগ দিল না! তৃণমূলে এখনও যাঁরা সৎ লোক রয়েছেন, যাঁরা টাকার জন্য তৃণমূল করেন না, তাপস রায় তাঁদের মধ্যে একজন। সুদীপের মতো সারদা-নারদ, জেল খাটার ইতিহাস তাঁর নেই। কিন্তু যে দল করছেন, যাঁর জন্য করছেন, ১৫ বছর ধরে আপনার উপর এই অন্যায়, অত্যাচার হতে দেখলেন? ন্যূনতম নীতিবোধ থাকলে বেরিয়ে আসুন ওদের ছেড়ে। জানি, আপনি মাঠের নেতা। আমি একদিন আপনার নেতৃত্বে আন্দোলন করতাম। পারলে এখনও বেরিয়ে আসুন।"
সুদীপ এবং তাপসের মধ্যেকার এই দ্বন্দ্ব যদিও নতুন নয়। আগেও একাধিক বার প্রকাশ্যে সুদীপকে আক্রমণ করতে শোনা গিয়েছে তাপসকে। তমোঘ্ন ঘোষ উত্তর কলকাতায় বিজেপি-র সভাপতি হলে একযোগে সুদীপকে বেঁধেন কুণাল এবং তাপস। তমোঘ্নের বাবা তপন ঘোষ দীর্ঘ দিন সুদীপের সহকারী ছিলেন। সুদীপই বকলমে তমোঘ্নকে বিজেপি-তে পাঠিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন কুণাল। সেই সময় তাপসের দাবি ছিল, দলের মধ্যে নিবেদিত এবং খণ্ডিত অনুগামী, দুইটি ভাগ তৈরি হয়েছে। খণ্ডিত অনুগামীরা অন্য দলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছেন বলেও দাবি করেন। মঙ্গলবারও সুদীপকে আক্রমণ করেন তাপস। রাজনীতি না করে অভিনয় করলে, সুদীপ দাদাসাহেব ফালকে পেতেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।