Lok Sabha Election 2024: বাংলার পঞ্চম দফার ভোটে বিক্ষিপ্ত অশান্তির ছবি, 'আজ সেরকম কিছু হয়নি' বলছে নির্বাচন কমিশন
Fifth Phase Lok Sabha Election 2024: কোথাও বুথ জ্যাম, কোথাও ক্যাম্প অফিসে ভাঙচুর-এজেন্টকে হুমকি-ভোটারদের ভয় দেখানোর অভিযোগ, তো কোথাও প্রিসাইডিং অফিসারকে চড়-থাপ্পড় মারার অভিযোগ
কলকাতা : 'মর্নিং শোজ দ্য ডে।' আজ পঞ্চম দফায় ভোট শুরুর ২ ঘণ্টার মধ্যেই কমিশনে জমা পড়েছিল ৪৭১টি অভিযোগ। তখনই অশান্তির ইঙ্গিত মিলেছিল। হলও তাই। কোথাও বুথ জ্যাম, কোথাও ক্যাম্প অফিসে ভাঙচুর-এজেন্টকে হুমকি-ভোটারদের ভয় দেখানোর অভিযোগ, তো কোথাও প্রিসাইডিং অফিসারকে চড়-থাপ্পড় মারার অভিযোগ, এজেন্টকে রাস্তায় ফেলে পেটানোর অভিযোগ, প্রার্থীকে ঘিরে বিক্ষোভ- বাদ গেল না কিছুই। যদিও যদিও রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক আরিজ আফতাবের দাবি, আজ সেরকম কিছু হয়নি। কমিশন সব পদক্ষেপ নিয়েছে।
রাজ্যের বিভিন্ন কেন্দ্রে অশান্তির-চিত্র-
আজ রাজ্যের সাত কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ করা হয়। বনগাঁ, ব্যারাকপুর, হাওড়া, উলুবেড়িয়া, শ্রীরামপুর, হুগলি ও আরামবাগে। ভোটের শুরু থেকেই বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে একের পর এক অশান্তির ছবি সামনে আসতে শুরু করে।
এদিন ধনেখালিতে তৃণমূলকর্মীদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন লকেট চট্টোপাধ্যায়। গোলমালের মধ্যেই হাজির হন শাসক বিধায়ক অসীমা পাত্র। স্লোগান, পাল্টা স্লোগান উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায়। মইদিপুরের বুথে ভোট পরিদর্শনে এসেছিলেন হুগলির বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়। তখনই তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা। দু-পক্ষের মধ্যে চলে কথা কাটাকাটি। ভোটারের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজনও বিজেপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন। এরই মাঝে বিজেপি প্রার্থীকে দেখে একজন 'চোর চোর' স্লোগান দিতে থাকেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থলে আসেন ধনেখালির তৃণমূল বিধায়ক । একটা সময় একেবারে কাছাকাছি চলে আসেন যুযুধান দুই পক্ষ। একদিক থেকে উড়ে আসে 'চোর' স্লোগান, তো অন্যদিকে 'ডাকাত'। এনিয়ে চরম উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায়।
চন্দননগরে লকেট চট্টোপাধ্যায়, আর গোঘাটে মিতালি বাগ। পঞ্চম দফার ভোট চলাকালীন বিক্ষোভের মুখে পড়লেন বিজেপি ও তৃণমূলের প্রার্থীরা। অন্যদিকে বুথ জ্যামের অভিযোগে, লিলুয়ায় হাতাহাতিতে জড়াল তৃণমূল ও বিজেপি।
এদিন ধনেখালি থেকে চন্দননগরে যান হুগলির বিজেপির প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়। সেখানে ১৭৮ নম্বর বুথে তুমুল বিক্ষোভের মুখে পড়েন তিনি। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে কেউ কেউ আবার হাতে জুতোও তুলে নিয়েছিলেন। একদিকে যখন লকেট চট্টোপাধ্যায় বিক্ষোভের মুখে পড়েছেন, তেমনি গোঘাটে দফায় দফায় বিজেপির বিক্ষোভের মুখে পড়েন আরামবাগ লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী মিতালি বাগ।
লিলুয়ার দেবীপাড়ায় এদিন বুথ জ্যামের অভিযোগে, তৃণমূল ও বিজেপি কর্মীদের মধ্যে হাতাহাতি বেঁধে যায়। বিজেপির ক্যাম্প অফিস ভেঙে দেয় তৃণমূল কর্মীরা। পরিস্থিতি সামাল দেয় কেন্দ্রীয় বাহিনী ও পুলিশ। কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে।
উলুবেড়িয়া কেন্দ্রের বিভিন্ন জায়গায় দফায় দফায় উত্তেজনা ছড়ায়। এদিন পুলিশের সামনেই বুথের বাইরে তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন উলুবেড়িয়ার কংগ্রেস প্রার্থী (Uluberia Congress Candidate) আজহার মল্লিক (Azhar Mallick)। কানপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘোড়াদহ উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৬৯ নম্বর বুথের ঘটনা। কংগ্রেস প্রার্থীর অভিযোগ, সকাল থেকে বারবার বুথ বের করে দেওয়া হচ্ছে তাঁর এজেন্টকে। বুথে গেলে কংগ্রেস প্রার্থীকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন তৃণমূল কর্মীরা। কংগ্রেস প্রার্থীর সঙ্গে হাতাহাতি বেধে যায়। নিজেকে বাঁচাতে বুথের মধ্যে আশ্রয় নেন কংগ্রেস প্রার্থী।
এদিকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সামনেই সিপিএমের এজেন্টকে রাস্তায় ফেলে পেটানোর অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তার আগে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বুথ থেকে বার করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। ডোমজুড়ের মোল্লাপাড়া অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের ২৪৬ নম্বর বুথের ঘটনা। শ্রীরামপুর লোকসভার সিপিএম প্রার্থী দীপ্সিতা ধরের এজেন্ট ছিলেন আলি হোসেন গাজি। ডোমজুড়ের বাঁকড়ায় ১২০ নম্বর বুথে এজেন্টকে বসান শ্রীরামপুরের সিপিএম প্রার্থী দীপ্সিতা ধর। অভিযোগ, রাস্তায় মারধর করা হয় সিপিএম এজেন্টকে। জেলা হাওড়া হলেও ডোমজুড় বিধানসভা শ্রীরামপুর লোকসভার অন্তর্গত। মুন্সিডাঙা বোর্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সিপিএম এজেন্টকে মেরে বার করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এমনকী, তাঁর চেয়ারও তুলে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে বুথে গিয়ে এজেন্টকে বসান শ্রীরামপুরের সিপিএম প্রার্থী দীপ্সিতা ধর। এখানে এতদিন ভোটই হত না, এবার বাধা দিলে প্রতিরোধ হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন দীপ্সিতা।
গোঘাটের ৩টি জায়গায় আরামবাগের তৃণমূল প্রার্থীকে ঘিরে বিক্ষোভ, জয় শ্রীরাম স্লোগান ওঠে। সাতবেড়িয়ার ৪৩ নম্বর বুথে তৃণমূল প্রার্থী মিতালি বাগকে দেখে ওঠে জয় শ্রীরাম স্লোগান। বুথের ১০০ মিটারের মধ্যে বিজেপি কর্মীদের জমায়েতের অভিযোগ তোলেন মিতালি। এরপর পুখুরিয়ার ৪৫ নম্বর বুথেও একই ঘটনা ঘটে। তৃণমূল প্রার্থীকে জয় শ্রীরাম স্লোগান দেওয়া নিয়ে উত্তেজনা ছড়ায়। তাঁর গাড়ি আটকে পড়ে। পরে কেন্দ্রীয় বাহিনী ও পুলিশ গিয়ে আরামবাগের তৃণমূল কর্মীকে এলাকা থেকে বার করে নিয়ে যায়।
বাকি তিন কেন্দ্র থেকেও কমবেশি অশান্তি ছড়ায় এদিন। বিভিন্ন জায়গায় অশান্তির পরিপ্রেক্ষিতে আজ প্রিভেনটিভ অ্য়ারেস্ট করা হয় ৯০জনকে।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।