এক্সপ্লোর

WB Election 2021: রাজনীতি নিয়ে মাথাব্যথা নেই, সিঙ্গুরের মানুষ দিন বদলের অপেক্ষায়

কেমন আছেন জমি আন্দোলনের আঁতুরঘরের বাসিন্দারা? নির্বাচনের দামামা বেজে যাওয়ার পরই সরেজমিনে খতিয়ে দেখে এল এবিপি লাইভ।

 

সিঙ্গুর: ইচ্ছুক চাষী। অনিচ্ছুক চাষী। এই দুই শব্দবন্ধের সঙ্গে বাংলার মানুষ পরিচিত হয়েছিলেন সিঙ্গুরে জমি আন্দোলনের সময়। শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ, উর্বর চাষের জমিতে কারখানা নির্মাণের বিরোধিতা করে আন্দোলন, অনশন – রাজ্য রাজনীতির মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল সিঙ্গুর। ২০১১ সালে রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের নেপথ্যেও অন্যতম বড় কারণ মনে করা হয় সিঙ্গুরকে। রাজ্যে পরিবর্তন হয়েছে। আদালতের নির্দেশে জমি ফেরত পেয়েছেন কৃষকেরা। কিন্তু ফিরেছে কি সুদিন? উর্বর জমিতে কি ফের শুরু হয়েছে চাষ আবাদ? কেমন আছে সিঙ্গুর? কেমন আছেন জমি আন্দোলনের আঁতুরঘরের বাসিন্দারা? নির্বাচনের দামামা বেজে যাওয়ার পরই সরেজমিনে খতিয়ে দেখে এল এবিপি লাইভ।

সাল ২০০৬। দ্বিতীয়বারের জন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেওয়ার পরেই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ঘোষণা করেন, হুগলির সিঙ্গুরে টাটার ছোট গাড়ি ন্যানো-র কারখানা হবে। কারখানা নির্মাণের জন্য সিঙ্গুরের গোপালনগর, বেড়াবেড়ি, বাজেমেলিয়া, খাসেরভেড়ি, সিংহেরভেড়ি অঞ্চলে ৯৮৭ একর জমি কৃষকদের কাছ থেকে অধিগ্রহণ করা হয়। তবে জমি দেখতে গিয়ে স্থানীয়দের বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন টাটা সংস্থার প্রতিনিধিরা। পরে জমি মালিকদের অনেকেই টাটা সংস্থাকে কারখানা তৈরির জায়গা দেওয়ার ব্যাপারে বেঁকে বসেন। জমির ক্ষতিপূরণ বাবদ যে চেক বিলি করা হচ্ছিল, তা নিয়েও অনেকে আপত্তি তোলেন। বিরোধী দল অভিযোগ করে, প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে শুরু হয় জমি আন্দোলন। তারই মাঝে সিঙ্গুর আন্দোলনের অন্যতম মুখ হিসেবে পরিচিত মনোরঞ্জন মালিকের মেয়ে তাপসী মালিকের রহস্যজনক মৃত্যু হয়। অর্ধদগ্ধ দেহ পাওয়া যায় প্রোজেক্ট এরিয়ায়। সিঙ্গুরের সিপিএম নেতা সুহৃদ দত্ত ও দেবু মালিকের বিরুদ্ধে মেয়েকে নির্যাতন করে খুনের অভিযোগ আনেন মনোরঞ্জন। নতুন করে চাঞ্চল্য তৈরি হয় এলাকায়। জমি ফেরানোর দাবিতে টানা ২৬ দিন অনশন করেন মমতা। শেষ পর্যন্ত ২০০৮ সালের ৩ অক্টোবর টাটা সংস্থার কর্ণধার রতন টাটা ঘোষণা করেন, সিঙ্গুর থেকে ন্যানো প্রকল্প সরিয়ে নিচ্ছেন তাঁরা।

পাততাড়ি গুটিয়ে চলে গিয়েছে টাটা। ন্যানো কারখানার শেড এখন ধূলিসাৎ। সিঙ্গুরের প্রকল্প এলাকায় গিয়ে বোঝাই যায় না, এখানেই একদিন এত বড় কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছিল। প্রস্তাবিত ন্যানো কারখানার এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, চাষবাসের চিহ্নমাত্র নেই। চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে সিমেন্টের পিলার। জমির রং পাল্টে গিয়েছে। আগাছাগুলোও যেন রোদে পুড়ে তামাটে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জমি ফেরত পেয়েছেন চাষীরা। তবে, ফসলের দেখা নেই। স্থানীয় চাষীরা জানালেন, তাঁরা জমি ফেরত পাওয়ার পর ফসল ফলানোর চেষ্টা করেছিলেন। লাভ হয়নি। উর্বর জমি এখন নাকি কংক্রিটের মতো। মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে কৃষকদের থেকে। সিঙ্গুরের প্রকল্প এলাকা এখন তাই কার্যত পরিত্যক্ত। নির্জন।

 

স্থানীয় বাসিন্দা ক্ষুদিরাম সাহানা জমি দিয়েছিলেন কারখানার জন্য। চেকও তুলেছিলেন। পরে অবশ্য জমি ফেরত পেয়েছেন। কিন্তু চাষবাস আর করতে পারেননি। প্রকল্প এলাকার পাশেই রয়েছে তাঁর বিশাল কলাবাগান। সেখানে কলার কাঁদি কাটার ফাঁকে তিনি বললেন, ‘রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের কথায় আমরা বিভ্রান্ত হয়েছিলাম। উনি প্রথমে বলেছিলেন, কারখানা হবে। পরে বললেন হবে না। সেই তিনিই আবার তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েছেন। প্রার্থী হয়েছেন। এখন আবার তাঁর মুখে কারখানার কথা।’ ঝাঁঝালো সুরে ক্ষুদিরাম বললেন, ‘বিজেপিতে গিয়ে উনি বলছেন, কারখানা হোক। ওঁর লজ্জা করে না!’ যোগ করলেন, ‘আমার মেয়ে কারখানার কাজে ট্রেনিং নিয়েছিল। টাটা সংস্থা ওকে মাসে তিন হাজার টাকা করে স্ট্রাইপেন্ড দিত। কারখানা চালু হলে চাকরি পাওয়ার কথা ছিল। আমরা প্রকল্প এলাকায় বালি, পাথর সরবরাহ করে হাজার হাজার টাকা রোজগার করেছি। এখন সবই অতীত। ফেরত পাওয়া জমি মরুভূমির মতো হয়ে রয়েছে। চাষবাস করা যায় না।’

গোপালনগরের বাসিন্দা আদিত্য পাঁজা কারখানার জন্য ১৪ কাটা জমি দিয়েছিলেন। চেক তুলেছিলেন। পরে জমি ফেরত পেলেও, আর ফসল ফলাতে পারেননি। আপাতত পাশের একটি জমিতে চাষ করেন। মাটি কোপানোর ফাঁকে আদিত্য বললেন, ‘জমি ফেরত পাওয়ার পর ধানচাষ করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু মাটির নীচে বড় বড় পাথর। চাষের অযোগ্য হয়ে রয়েছে। সরকার আর কোনও ব্যবস্থা নিল না।’

সিঙ্গুরের যে সমস্ত জায়গায় চাষবাষ হচ্ছে, সেখানকার ছবিও ইতিবাচক নয়। যেমন, এখন আলু ওঠার মরসুম। গোটা রাজ্যে আলুর জোগান দেয় যে সমস্ত এলাকা, সিঙ্গুর তার অন্যতম। সিঙ্গুরের বিভিন্ন কৃষিজমিতে গিয়ে দেখা গেল, ডাঁই করে রাখা আলু। মাথার ওপর চড়া রোদ। তার মধ্যেই চটের বস্তায় আলু ভরার কাজ চলছে। চাষীরা জানালেন, আলুর দাম মিলছে না। যা বাজারদর, তাতে সার, ওষুধ-সহ চাষের খরচই উঠছে না। তাই লাভের মুখ দেখা যাচ্ছে না।

স্থানীয় কৃষক কার্তিক দাস, জয়দেব দাসরা বললেন, ‘আলু প্যাকেট প্রতি দাম পাচ্ছি মাত্র তিনশো টাকা। অথচ সার-ওষুধের যা দাম বেড়েছে, খরচ ওঠাই দায়। পাশাপাশি এক বস্তা বীজ আলু কিনেছি ৪-৫ হাজার টাকা দাম দিয়ে। ফসল তোলার পর বাজারে খরিদ্দারই হচ্ছে না। স্টোরে আলু রাখারও বিস্তর খরচ। সব মিলিয়ে আলুচাষীরা ঘোর বিপাকে।’ সামনে নির্বাচন। তবে চাষীদের অভিযোগ, কোনও রাজনৈতিক দলই তাঁদের খবর রাখেন না বা তাঁদের উন্নতির জন্য কিছু করেন না।। রাজ্যে রাজনৈতিক পরিবর্তন হয়েছে দশ বছর আগে। এখন আবার পরিবর্তনের পরিবর্তন করার দাবিতে সরব বিরোধীরা। যদিও সিঙ্গুরের চাষীরা বলছেন, তাঁরা যে তিমিরে ছিলেন, সেখানেই রয়েছেন।

দরজায় কড়া নাড়ছে আর একটি বিধানসভা নির্বাচন। সিঙ্গুর কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী বেচারাম মান্না। তাঁর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিজেপির বাজি সিঙ্গুরের বিদায়ী বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী সৃজন ভট্টাচার্য। অবশ্য ভোট নিয়ে সিঙ্গুরের সাধারণ মানুষ বেশ নির্লিপ্ত। রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করার খুব একটা আগ্রহ নেই। স্থানীয় চায়ের দোকানে জমায়েত হওয়া লোকজন, প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, ফুটপাথের পোশাক বিক্রেতা, সাধারণ গৃহবধূ, সিঙ্গুরের একাধিক বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, নির্বাচনী হাওয়া থেকে তাঁরা দূরে সরে থাকতেই স্বচ্ছন্দ বোধ করছেন। সকলের সম্মিলিত সুর, ‘আমাদের জীবন কোনওরকমে চলে যাচ্ছে। বাংলার ক্ষমতায় যে রাজনৈতিক দলই আসুক না কেন, আমাদের রোজনামচা একই থাকবে। বদলাবে না। জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি থেকে শুরু করে এলাকার নানা সমস্যা, সব কিছু প্রতিবন্ধকতা নিয়েই আমাদের পথ চলতে হবে।’

রাজ্য রাজনীতিতে পালাবাদল হবে? নাকি ক্ষমতায় থাকবে তৃণমূলই? চাষী হোক বা ব্যবসায়ী, চাকুরিজীবী হোক বা গৃহবধূ, সিঙ্গুরের আমআদমির মাথাব্যথা নেই। তাঁরা শুধু দিন বদলের অপেক্ষায়।

আরও দেখুন
Advertisement
Advertisement
Advertisement

সেরা শিরোনাম

UK Election Results : ব্রিটেনে ধরাশায়ী কনজারভেটিভরা, হার মানলেন সুনক, প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে এবার স্টার্মার
ব্রিটেনে ধরাশায়ী কনজারভেটিভরা, হার মানলেন সুনক, প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে এবার স্টার্মার
Rath Yatra Weather : বৃষ্টিতে ভিজে মাসির বাড়ি যাবেন জগন্নাথ? দক্ষিণের ৫ জেলায় প্রবল বৃষ্টির সঙ্কেত দিল আবহাওয়া দফতর
বৃষ্টিতে ভিজে মাসির বাড়ি যাবেন জগন্নাথ? দক্ষিণের ৫ জেলায় প্রবল বৃষ্টির সঙ্কেত দিল আবহাওয়া দফতর
India-Britain Relationship : ব্রিটেনের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে কিয়ের স্টার্মার, ভারতের লাভ না ক্ষতি ?
ব্রিটেনের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে কিয়ের স্টার্মার, ভারতের লাভ না ক্ষতি ?
Weather Today : প্রচণ্ড দুর্যোগের পূর্বাভাস, বেসামাল পাহাড়ে এবার হড়পা বানের সতর্কতা
প্রচণ্ড দুর্যোগের পূর্বাভাস, আগামী ৪-৫ দিন ধরে চলবে প্রবল বৃষ্টি ৫ জেলায়
Advertisement
ABP Premium

ভিডিও

Kolkata News: ভর সন্ধেয় অভিজাত লেক অ্যাভিনিউ এলাকায় ঘরে ঢুকে লুঠপাটের চেষ্টা | ABP Ananda LIVEGhanta Khanek Sange Suman(০৪.০৭.২০২৪) পর্ব ২: সরকারি অফিসে BDO-কে আইবুড়ো ভাত খাওয়ালেন তৃণমূলনেত্রী, পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলেন BDO | ABP Ananda LIVESiliguri News:শিলিগুড়িতে পরিত্যক্ত বাড়িতে হানা দিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র-সহ ৫দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করল পুলিশGhanta Khanek Sange Suman(০৪.০৭.২০২৪) পর্ব ১: মা-ছেলেকে মারধরের ৩ দিন পর অবশেষে জালে জয়ন্ত সিংহ | ABP Ananda LIVE

ফটো গ্যালারি

ব্যক্তিগত কর্নার

সেরা প্রতিবেদন
সেরা রিল
UK Election Results : ব্রিটেনে ধরাশায়ী কনজারভেটিভরা, হার মানলেন সুনক, প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে এবার স্টার্মার
ব্রিটেনে ধরাশায়ী কনজারভেটিভরা, হার মানলেন সুনক, প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে এবার স্টার্মার
Rath Yatra Weather : বৃষ্টিতে ভিজে মাসির বাড়ি যাবেন জগন্নাথ? দক্ষিণের ৫ জেলায় প্রবল বৃষ্টির সঙ্কেত দিল আবহাওয়া দফতর
বৃষ্টিতে ভিজে মাসির বাড়ি যাবেন জগন্নাথ? দক্ষিণের ৫ জেলায় প্রবল বৃষ্টির সঙ্কেত দিল আবহাওয়া দফতর
India-Britain Relationship : ব্রিটেনের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে কিয়ের স্টার্মার, ভারতের লাভ না ক্ষতি ?
ব্রিটেনের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে কিয়ের স্টার্মার, ভারতের লাভ না ক্ষতি ?
Weather Today : প্রচণ্ড দুর্যোগের পূর্বাভাস, বেসামাল পাহাড়ে এবার হড়পা বানের সতর্কতা
প্রচণ্ড দুর্যোগের পূর্বাভাস, আগামী ৪-৫ দিন ধরে চলবে প্রবল বৃষ্টি ৫ জেলায়
Kolkata Robbery : চেনা সাফাই কর্মীকে সামনে রেখে বাড়িতে দুষ্কৃতী দল, চলল গুলি, কলকাতায় ভয়াবহ ঘটনা
চেনা সাফাই কর্মীকে সামনে রেখে বাড়িতে দুষ্কৃতী দল, চলল গুলি, কলকাতায় ভয়াবহ ঘটনা
Share Market Opening: রেকর্ড ব়্যালি ভেঙে ধস নামল বাজারে, ব্যাঙ্কিং সেক্টরে সবথেকে বেশি পতন, সেনসেক্স পড়ল ৪৬০ পয়েন্ট
রেকর্ড ব়্যালি ভেঙে ধস নামল বাজারে, ব্যাঙ্কিং সেক্টরে সবথেকে বেশি পতন, সেনসেক্স পড়ল ৪৬০ পয়েন্ট
Stock To Watch: এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক থেকে বাজাজ অটো, আজ বাজারে এই স্টকগুলিতে রয়েছে বড় খবর, কেনা উচিত ?
এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক থেকে বাজাজ অটো, আজ বাজারে এই স্টকগুলিতে রয়েছে বড় খবর, কেনা উচিত ?
Team India Flight: ঘরে ফেরার সময়েও নজির! বিশেষ রেকর্ড গড়ল রোহিত-বিরাটদের বিমানও
ঘরে ফেরার সময়েও নজির! বিশেষ রেকর্ড গড়ল রোহিত-বিরাটদের বিমানও
Embed widget