ABP Exclusive: কলেজ পত্রিকায় সৌমিত্রর কবিতা যত্ন করে রেখে দিয়েছেন পরাণ
তাঁরা দুজনেই সিটি কলেজের প্রাক্তনী। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের কলেজ ছেড়ে যাওয়ার বছরেই সেই কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
কলকাতা: বাস্তবে নয়, প্রথম দেখা হয়েছিল রুপোলি পর্দার এপাড়ে আর ওপাড়ে। 'অভিযান' এ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে (Soumitra Chatterjee) দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন থিয়েটারের মঞ্চের এক উঠতি অভিনেতা। তারপর সিটি কলেজে ভর্তি হয়ে হাতে পেলেন কলেজের এক পত্রিকা। সেখানে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের ১০-১২ লাইনের একটা কবিতা ছাপা হয়েছিল। যত্ন করে সেই বই নিজের কাছে রাখলেন তিনি। সেই বছরেই পাশ করে কলেজ ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। গুণমুগ্ধ থেকে বন্ধু হয়ে ওঠার পথে সেতু বেঁধেছিল সেই রুপোলি পর্দাই। প্রথমে একসঙ্গে ছবির কাজ, তারপর ছোটপর্দা.. সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সিটি কলেজের সেই সিনিয়র আর জুনিয়রই হয়ে উঠেছিলেন প্রাণের বন্ধু। ২ বছর আগে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় প্রয়াত হয়েছেন। কিন্তু পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মনে সৌমিত্র-স্মৃতি এখনও টাটকা। বুধবার পর্দায় বাঙালির প্রথম ফেলুদার জন্মদিন। বিশেষ এই দিনে বন্ধুত্বের ফেলে আসা সরণি বেয়ে হাঁটলেন পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায় (Paran Bandopadhyay)।
তাঁরা দুজনেই সিটি কলেজের প্রাক্তনী। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের কলেজ ছেড়ে যাওয়ার বছরেই সেই কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। কলেজের পত্রিকার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা আজও যত্ন করে রাখা আছে পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। বন্ধু চলে গিয়েছেন, আজও বিশ্বাস করতে চান না প্রবীণ অভিনেতা। কথা রেখে তাই কিছু গল্প এখনও গোপনই রাখতে চান।
শ্যুটিংয়ের কাজে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতে হয়েছে দুজনকেই। দুই বন্ধু একসঙ্গে থাকলে কেমন কাটত সময়? এবিপি লাইভকে পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, 'শ্যুটিংয়ের সময় আউটডোরে যেতাম। বোলপুরে গিয়েছি শ্যুটিংয়ের কাজে। মেকআপ ভ্যানে শুধু আমি আর ও (সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়) থাকতাম। সেসময় ও যৌবনের বিভিন্ন গল্প বলত ও, আমিও বলতাম। সে সব কথা কাউকে বলার নয়, সে সব শুধু আমাদের দুজনের। মানুষ হিসেবে ওঁর মতো বন্ধু পাওয়া ভাগ্যের। কতরকম গল্প করতেন, যেগুলো শুনে সত্যিই সমৃদ্ধ হওয়া যেত। অনেকেই জানেন না, কেবল নাটক, সিনেমা বা ভাষ্যপাঠ নয়, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় যাত্রাও করেছেন। আর লেখার গুণ তো ওঁর ছিলই। এমনকি উনি গানও গাইতে পারতেন। আর.. অসম্ভব অসম্ভব একজন রসিক মানুষ ছিলেন।'
বন্ধু চলে গিয়েছেন, এই কথা এখনও মেনে নিতে চান না পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, 'আমি মনে করি না পুলুদা নেই। আমি আমার প্রিয় মানুষের শেষযাত্রা কখনও দেখি না। সবচেয়ে প্রিয় মানুষ ছিলেন আমার মা, আর দ্বিতীয় পুলুদা। আমি এই বিশ্বাস নিয়েই জীবনের শেষদিন পর্যন্ত বাঁচব যে, একদিন না একদিন আমার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা হবে। আমি জানি, বোকার মত কথা বলছি, তবু এই বিশ্বাস নিয়েই আমি প্রত্যেকটা দিন বাঁচি। পুলুদা এসে আমার কাঁধে হাত দিয়ে বলবেন, 'চলো পরাণ, শ্যুটিং করে আসি।' অথবা, কোনও রসিকতা করার সময় হাসতে হাসতে বলে উঠবেন, 'উফ পরাণ, তুমি পারও বটে.. দেখি.. একটা গান ধরো তো দেখি..'