Lost Of Words Update: ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে নির্বাচিত ভারতীয় তথ্যচিত্র 'লস্ট ফর ওয়ার্ডস'
Lost Of Words Update: স্বাধীনতার পর ভারতে প্রায় দেড়শো ভাষা বিলুপ্ত। প্রতি চার মাসে একটি করে ভাষা হারিয়ে যায়। তার মধ্যে ৩০টি ভাষা বিলুপ্তপ্রায় অবস্থার মধ্যে আছে। যেগুলো যেকোনও দিন হারিয়ে যেতে পারে।
কলকাতা: বছর শুরুতেই সুখবর। ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে (Dhaka International Film Festival) নির্বাচিত হল রাজাদিত্যর তথ্যচিত্র (Documentary) 'লস্ট ফর ওয়ার্ডস।' (Lost For Words)
নতুন বছরে এমনই সুখবর দিলেন পরিচালক রাজাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়। বিংশ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে নির্বাচিত তাঁর তথ্যচিত্র 'লস্ট ফর ওয়ার্ডস।' আগামী ১৯ জানুয়ারি, পাবলিক লাইব্রেরি অডিটোরিয়ামে বেলা ৩টে থেকে দেখানো হবে এই ছবি। এছাড়া ২০ জানুয়ারি বাংলাদেশ শিল্পকলা অ্যাকাডেমির জাতীয় আর্ট গ্যালারিতেও প্রদর্শিত হবে এই ছবি। 'সিনেমা অফ ওয়ার্ল্ড' বিভাগে (LFW) প্রতিযোগিতায় রয়েছে এই ছবি। বছর শুরুতেই আসন্ন তথ্যচিত্র বিষয়ে এই আন্তর্জাতিক স্তরের সম্মান পেলেন রাজাদিত্য। এই ছবিতে বিলুপ্তপ্রায় টোটো ভাষা ও সেই ভাষাভাষী মানুষদের জীবনযাপন তুলে ধরেছেন রাজাদিত্য।
আরও পড়ুন: Sudipa Corona Positive: 'কবে তোকে কোলে নেব..' আদিদেবের ছবি শেয়ার করে মনখারাপের পোস্ট সুদীপার
স্বাধীনতার পর ভারতে প্রায় দেড়শো ভাষা বিলুপ্ত হয়েছে। প্রতি চার মাসে একটি করে ভাষা হারিয়ে যায়। তার মধ্যে ৩০টি ভাষা বিলুপ্তপ্রায় অবস্থার মধ্যে আছে। যেগুলো যেকোনও দিন হারিয়ে যেতে পারে। ভারত-ভুটান সীমান্তের শেষ গ্রামে টোটো পাড়ায় একটি ভাষা যাতে ১,৫৮৫ জন কথা বলেন। এঁদের মধ্যেও ৩০০ থেকে ৪০০ জন বাইরে চলে গেছেন। মোট ১০০০ থেকে ১,৩০০ জন এই ভাষায় কথা বলছেন বর্তমানে। ইউনেস্কো এই ভাষাকে 'ক্রিটিকালি ইন ডেঞ্জার' হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
কেন টোটো ভাষা অবলুপ্তির পথে ধীরে ধীরে? কেনই বা ভাষা রক্ষার লড়াই করে যেতে হচ্ছে এই জনজাতিকে? তিনজন ভাষা যোদ্ধা কীভাবে যুদ্ধ করে এই ভাষাকে হারিয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে লড়াই করে চলেছেন প্রতিনিয়ত? মূলত এই সমস্তই দেখানো হয়েছে এই ছবিতে।
ধনীরাম টোটোই প্রথম টোটো ভাষায় উপন্যাস লেখেন। টোটো ভাষায় এর আগে কোনও বর্ণমালা ছিল না। ধনীরাম টোটো প্রথম ২০১৪ সালে টোটো ভাষার বর্ণমালা আবিষ্কার করেন। ধনীরাম টোটো ভাষাতত্ত্ব, ফোনেটিক, লিপির বিজ্ঞান সংক্রান্ত নানা বই সংগ্রহ করতে ভালবাসেন। সেই লিপির স্বীকৃতির জন্য ভাষা দিবসের প্রাক্কালে ভাষা রক্ষার শপথ নেন তিনি। ধনীরামের বক্তব্য, 'একটা জাতি যে ভাষায় কথা বলে, সেই ভাষায় কোনও লিপি নেই। যারা এই পরিস্থিতিতে আছেন একমাত্র তারাই এই অসুবিধের কথা বুঝতে পারবেন। কী করে টিকবে সেই জাতি?' ধনীরামের বক্তব্য, 'বুদ্ধিজীবীরা কী জানেন না, ইংরেজি ভাষা শিখেও ছেলেমেয়েরা চাকরি পাচ্ছে না? টোটো ভাষা চাকরি আনতে পারবে কি না জানি না। কিন্তু এতো আমাদের জাতিসত্ত্বার প্রশ্ন। একটা ভাষাকে বাঁচানোর প্রক্রিয়া।'
অন্যদিকে পরিচালক রাজাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'এই ছবিটি বেশ অন্যরকম কারণ ভাষা আমাদের বৈচিত্রের এক প্রতিচ্ছবি। আমাদের জীবনের এক একটা প্রতিবিম্ব। আমাদের সেই বৈচিত্র্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বিশ্বায়নের দাপটে ছোট্ট গ্রামের কিছু মানুষেরা, যারা তিব্বত থেকে এসেছিল, তারা টোটো ভাষা রক্ষা করে চলেছে প্রাণপণে। তার মধ্যে অনেকেই বাধ্য হচ্ছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কাজের খোঁজে বেরিয়ে পড়তে। শুধু বৃদ্ধরাই এই ভাষায় কথা বলছে। নতুন প্রজন্ম পড়াশুনোর জন্যে, কাজের জন্য অন্য ভাষা শিখতে বাধ্য হচ্ছে। ভাষাটার অবস্থা খুবই সঙ্কটজনক। বহুবছর ধরে গবেষণা করার পর সিনেমাটি তৈরি করা হয়েছে। ধনীরাম টোটো, সত্যজিৎ টোটো ও বিপ্লব নায়ক এই তিনজনের আপ্রাণ প্রচেষ্টা ভাষাটিকে বাঁচিয়ে রাখার। সিনেমাটির মূল উদ্দেশ্যই এই বিপন্ন ভাষার লড়াইকে জনসমক্ষে নিয়ে আসা।'
৯০ মিনিটের এই তথ্য চিত্রের সিনেমাটোগ্রাফি করেছেন তন্ময় কর্মকার, অতিরিক্ত সিনেমাটোগ্রাফির দায়িত্বে রয়েছেন গীরিধারী গড়াই ও শুভজিৎ রায়। শব্দ গ্রহণ ও সুরারোপে রয়েছে ব্যাকবেঞ্চার্স ও ছবির সম্পাদনা করেছেন সুমন্ত সরকার।