শিক্ষক দিবসে ফুটবল ম্যাচ, স্যারেরা বলতেন, 'মারিস না, বলটা দিয়ে দে'
৪৫ বছরে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করলে স্মরণজিৎ চক্রবর্তী-র মনে পড়ে যায় ছোটবেলায় কাটানো শিক্ষক দিবসের দিনগুলো।
কলকাতা: ছোটবেলা থেকেই চশমা পড়তেন আর প্রচণ্ড কথা বলছেন। স্কুলের শিক্ষিকারা তাই নাম দিয়েছিলেন, 'শিয়াল পণ্ডিত'। আর বসার জায়গা ছিল এক্কেবারে শিক্ষিকাদের হাতের সামনে। স্কুলের এক শিক্ষক একবার সাহস জুগিয়ে বলেছিলেন, 'ও কেমিস্ট্রি পারে না তাতে কী হয়েছে, কবিতাটা তো পারে..' বড় হয়ে সেই ছাত্রই কলম ধরে গল্প লিখেছেন, উপন্যাস বুনেছেন, মন জয় করেছেন বাঙালির। ৪৫ বছরে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করলে স্মরণজিৎ চক্রবর্তী-র মনে পড়ে যায় ছোটবেলায় কাটানো শিক্ষক দিবসের দিনগুলো।
ছোটবেলার স্কুল ছিল বাটানগরে। তারপর নঙ্গী হাইস্কুলে পড়াশোনা। স্মরণজিৎ বলছেন, 'আমার কাছে শিক্ষক মানে কেবল যিনি পাঠ্যবইয়ের পড়া বোঝাবেন এমন নয়। শিক্ষক যেন মনের মধ্যে উপযুক্ত প্রশ্ন জাগিয়ে তুলতে পারেন। আমার শিক্ষক ভাগ্য চিরকাল ভীষণ ভালো। বাংলা মিডিয়ামে স্যারেদের বাবু বলার চল আছে। আমরাও তাই বলতাম। দিলীপ পাল বাবু, অজিত বরণ সিংহ রায় বাবু, শশাঙ্ক শেখর নস্কর বাবু, সন্দীপ বাবু.. সব শিক্ষকেরাই বন্ধুর মত ছিলেন আমাদের। আবার বেত দিয়ে মারও খেয়েছি। স্যারেদের বাড়িতে পড়তে গিয়ে সেখানেই খাওয়া দাওয়া করেছি, সারাদিন থেকেছি। স্যারেদের পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলেছি। সেইসব সোনালি সময় ছিল।'
কেবল পড়ার বই নয়, স্মরণজিৎকে বাংলা ইংরাজির বিভিন্ন সাহিত্য এমনকি আইরিশ কবির কবিতা পড়ার উৎসাহ দিতেন শিক্ষকেরাই।স্কুলে শিক্ষক দিবসে আয়োজন করা হত বিশেষ অনুষ্ঠানের। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর আয়োজন করা হত ফুটবল ম্যাচের। কখনও আবার ক্রিকেট খেলাও হত। স্মরণজিৎ বলছেন, 'ছাত্রদের দম বেশি। ফুটবল খেলা হলে ছাত্ররাই জিতত প্রত্যেকবার। স্যারেরা এসে বলতেন, বাবু, বল মেরো না দিয়ে দাও.. আর কিছু কিছু দুষ্টু ছাত্র আবার বলত, আসুন না বল নিতে..। তবে ক্রিকেট খেলা হলে শিক্ষকেরা জিততেন কখনও সখনও।'
শুধু স্কুল নয়, স্কুলের বাইরেও ছড়িয়ে রয়েছে ছাত্র-শিক্ষক স্মৃতি। একবার শিক্ষকদের সঙ্গে ম্যাসাঞ্জোর ঘুরতে গিয়েছিলেন স্মরণজিৎরা। লেখক বলছেন, 'বাসে করে যেতে যেতে প্রথমে কিছুক্ষণ রবীন্দ্রসঙ্গীত চলল। তারপর শুরু হল হিন্দি গান আর তার তালে নাচ। একটা সময় আর সহ্য করতে না পেলে একজন শিক্ষক রেগে গিয়ে বললেন, 'তোমাদের রুচি উন্নত কর'। গন্তব্যে পৌঁছে পরেরদিন সকালে সবাই খেতে বসেছে। স্যারেরা লুচি ভেজেছেন আর ছাত্ররা তরকারি বানিয়েছে। প্রায় সব লুচিই অর্ধেক কাঁচা। একজন ছাত্র দলের মধ্যে থেকে হঠাৎ বলে উঠল.. স্যার, আগে লুচি উন্নত করুন।' কথা থামিয়ে সেই স্মৃতি মনে করে হেসে ফেললেন স্মরণজিৎ।
স্কুলে শিক্ষকদের নকল করতেন লেখক। একজন শিক্ষকের কোডনেম ছিল, 'হ্যালোজেন'। স্মরণজিৎ বলছেন, 'ওনার মাথায় টাক ছিল। সেটা রোদে চকচক করত বলেই ওই নামকরণ।' স্কুলের একটা দিনের বদমাইশি মনে থাকবে তাঁর। লেখক বলছেন, 'আমি কাগজের প্লেন ওড়াতে ভালোবাসতাম। একদিন অঙ্ক ক্লাসে বসে বসে সবাইকে প্লেন বানানো শেখাচ্ছিলাম। স্যার বোর্ডে অঙ্ক করাচ্ছিলেন। হঠাৎ পিছন ঘুরে দেখলেন, গোটা ক্লাসে কাগজের প্লেন উড়ছে। তারপর সাতদিন গোটা ক্লাসকে সাসপেন্ড করেছিলেন হেডস্য়ার। কিন্তু এখনও কেউ জানে না, সেদিনের ঝামেলাটা শুরু করেছিলাম আমিই।'