Tota Roy Choudhury Exclusive: বাংলা আমার শিকড়, একটা ছবিতে সাফল্য পেয়েছি বলে পাকাপাকিভাবে বলিউডে পাড়ি দেব না: টোটা
Actor Tota Roy Choudhury Exclusive: তাঁর নাচের মহড়ার ভিডিও দেখে রণবীর নাকি বলেছেন, তিনি পাল্লা দিয়ে নাচ করতে পারবেন না? টোটা বলছেন...
কলকাতা: মায়ানগরীতে তখন সন্ধে। ফোন ধরেই প্রথমে জেনে নেওয়া হল, সাক্ষাৎকারের জন্য ঠিক কতটা সময় বরাদ্দ? কাটা কাটা উচ্চারণে, হাসি মেশানো গলায় উত্তর এল, 'আমার হাতে ঠিক ২৫ মিনিট সময় আছে।' প্রথম ৫ মিনিট তাই ছবি নিয়ে গল্প আর আড্ডা দেওয়ার সময় চুরি করে নেওয়া গেল। মুম্বইতে বসে যিনি এখন ভাসছেন প্রশংসার বন্যায়, তিনি মনে-প্রাণে তো বাঙালি.. তাই ২৫ মিনিট সময়ের হিসেব কার্যত ভুলে যেতেই হয় গল্পের আমেজে। আরব সাগরের ওপারে বসে এপারের সঙ্গে অনায়াস আড্ডা দিলেন 'রকি অউর রানি কি প্রেম কাহানি' (Rocky Our Rani Ki Prem Kahani)-র চন্দন চট্টোপাধ্যায়। পুষ্পরাগ ওরফে টোটা রায়চৌধুরী (Tota Roychowdhury)
কর্ণ জোহরের (Karan Johar) পরিচালনায় প্রথম কাজ, আর সেখানে আলাদা করে দাগ কেটেছে চন্দন চট্টোপাধ্যায়ের চরিত্র। বাঙালি রুচিশীল পরিবারের চন্দনের ভালবাসা কত্থক নাচ। আলিয়া ভট্ট ওরফে রানির বাবার চরিত্রে অভিনয় করেছেন টোটা। ছবির সাফল্যের পরে কী বলছেন কর্ণ-রণবীররা? টোটা বলছেন, 'আমরা প্রায় ২ বছর ধরে ছবিটা শ্যুট চলেছে। আমাদের সবার মধ্যে একটা ভীষণ ভাল সম্পর্ক হয়ে গিয়েছিল। টিম হিসেবে কাজ করেছি আর সেই টিম জিতে গিয়েছে। কর্ণস্যার তো বলছেন, আমার ২৫ বছর পূর্তিতে এমন একটা উপহার পাব আশা করিনি। আমায় তো অনেকেই গালাগালি করে। এত ভাল প্রতিক্রিয়ায় আমি যেন অভ্যস্ত নই। আলিয়া-রণবীর সবাই ভীষণ খুশি।'
টোটা থেকে চন্দন চট্টোপাধ্যায়, কী কী চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন টোটা? অভিনেতা বলছেন, 'কর্ণস্যর নাকি আমাদের কাস্টিং ডিরেক্টরকে প্রথমেই বলেছিলেন, ' চন্দন চট্টোপাধ্যায়ের মধ্যে আমার তিনটে জিনিস দরকার। এক, তাঁর নাচ ও সুর-তালের জ্ঞান থাকা জরুরি। দুই, রণবীরের সঙ্গে নাচের দৃশ্য রয়েছে ফলে তাঁর চেহারা রণবীরের সঙ্গে মানানসই হওয়া আবশ্যক। স্থুলকার নয়, স্মার্ট বাবা চাই। তিন, কত্থকের তালিম নিতে হবে, কারণ ওই দৃশ্যে কোনওরকম মিথ্যে চলবে না।' আমায় বা আমার অডিশন দেখে ওঁর প্রথমেই পছন্দ হয়। তারপরে আমার নাচের মহড়ার ভিডিও দেখে কর্ণস্যর বলেছিলেন, 'আমি এর চেয়ে ভাল চন্দন চট্টোপাধ্যায় আর পেতাম না।'
এই তো ছিল চন্দন চট্টোপাধ্যায়ের জুতোয় পা গলানোর গল্প। কিন্তু তারপরে তাঁর নাচের মহড়ার ভিডিও দেখে রণবীর নাকি বলেছেন, তিনি পাল্লা দিয়ে নাচ করতে পারবেন না! টোটা বলছেন, 'রণবীর নিজেকে ছোট করে দেখায় কিন্তু ও ভীষণ ভাল নৃত্যশিল্পী। ভীষণ তাড়াতাড়ি স্টেপস তোলে ও, মনেও রাখে। ওর সঙ্গে যখন রিহার্সাল করছিলাম, আমারই ভয় লাগছিল যে, রণবীর আমার থেকে ভাল নাচ করবে না তো! গল্পে তো আমি ওর শিক্ষক। শিক্ষকের থেকে ছাত্র যদি ভাল নাচে, তাহলে কেমন দেখাবে ভাবুন! শেষ ৩ দিন ৩ ঘণ্টা ধরে রিহার্সাল করলাম। রণবীর এক সময়ে দুটো নাচের অনুশীলন করছিল, 'ডোলা রে' আর 'ঢিন্ডোরা বাজে রে'-র। আমরা কেবল ওদের বাড়ি, গাড়ি, পারশ্রমিক দেখি.. কিন্তু ওদের অমানুষিক পরিশ্রমটা দেখি না। ৭ দিন টানা ১২ ঘণ্টা ধরে নাচ করা, তার আগে ৭ দিন টানা রিহার্সাল ২টো নাচের.. সোজা নয়। কর্ণ জোহরের ছবি মানেই স্বপ্নের মতো। কিন্তু ওই বড় ছবির জন্য যে কী পরিশ্রম করতে হয়.. ভাবা যায় না। আমার চোখ খুলে গেল।'
প্রশংসার বন্যায় ভাসছেন টোটা, আগামী ছবি টলিউডে না বলিউডে? হেসে ফেলে অভিনেতা বললেন, 'আমি পরিচালকের অভিনেতা আমার কাছে পরিচালক ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। তবে পারে তিনি প্রথিতযশা পরিচালক নন, তবে তাঁর সঙ্গে আত্মীক যোগ অনুভব করলে তবেই ছবিটা করতে পারব আমি। আর, অবশ্যই চরিত্রটা গুরুত্বপূর্ণ। ছবি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে টলিউড বা বলিউড ভাবব না বটে, কিন্তু বাংলা আমার শিকড়। এই ইন্ডাস্ট্রিই তো আমায় পরিচিতি দিয়েছে, ভালবাসা দিয়েছে। একটি হিন্দি ছবিতে সাফল্য পেয়েছি বলে পত্রপাঠ আরব সাগর পাড়ে পাড়ি দেব না। এটুকু দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি, বছরের অনেকটা সময় বাংলাতেই কাজ করতে চাই। জীবিকা নির্বাহের জন্য বাংলা ছেড়ে একেবারে অন্য শহরের বাসিন্দা হব না।'
টোটা ব্যক্তিগত জীবনে কী কোনও চন্দন চট্টোপাধ্যায় লুকিয়ে রয়েছেন? পুষ্পরাগ বলছেন, 'ছোটবেলা থেকে খেলাধূলোর সঙ্গে যুক্ত আমি। সবাই আমায় একটু ভয়ই পেত আর আমিও বেশ ঠোঁটকাটা স্বভাবের ছিলাম। ফলে সামনে কেউ কিছু বলার সাহস না পেলেও পিছনে অনেক কথা শুনেছিলাম। তখন আমি নাচের অনুষ্ঠান করছি, ফুটবল খেলছি, মার্শাল আর্ট শিখছি। সবাই বলত, ব্যবসায়ী পরিবারের ছেলে, পারিবারিক ব্যবসা ছেলে বাউন্ডুলে করছে। অভিনয়ে আসার পরে শুনেছি, আমি নাকি ভবিষ্যৎ নষ্ট করছি। কখনও এই পিছনে বলা কথাকে প্রাধান্য দিইনি। যাঁর সামনে কথা বলার মতো সৎ সাহসই নেই, তার কথাকে প্রাধান্য দেব কেন! বয়স যখন কম ছিল, তখন যে একেবারে বিচলিত হতাম না তা নয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বুঝেছি, যে সামনে কথা বলেন, একমাত্র তাঁর কথা একটু শোনার মতো। এমনিতেই আমি সবচেয়ে প্রাধান্য দিই নিজের অন্তরের কথাকে, আর অবশ্যই পরিবারের মতামতকে। তাই কেউ যদি পিছনে কথা বলে, তাঁর কথা কেন শুনব! তবে এমন শুধু আমি নয়, আমার চেনাজানা অনেকে রয়েছেন যাঁরা ছকভাঙা শিল্পকে বেছে নিতে গিয়ে প্রচুর কথা শুনেছেন। কিন্তু ছক না ভাঙলে নতুন কিছু সৃষ্টি হবে কীভাবে!'