Covid Inspirational Story : গর্ভাবস্থায় সংক্রমণ, জীবন-মরণ লড়াই করে সদ্যজাতর কাছে ফিরলেন করোনাজয়ী মা
কী সর্বনাশ । প্রেগন্যান্সির ৩৩ তম সপ্তাহে করোনা বাসা বাঁধলো হবু মায়ের শরীরে ... তারপর
কলকাতা : এই দিনটার জন্যই কত দিনের অপেক্ষা ছিল । অবশেষে এলো সেই দিন । কিন্তু এভাবে ঝড়ের মধ্যে যে মেয়ে জন্ম নেবে, ভাবেনইনি শাক্য ।
কতদিন ধরে একটা মিষ্টি সন্তানের সঙ্গে খুনসুটি করার স্বপ্ন দেখেছিলেন শাক্যসিংহ মাইতি আর দেবলীনা চৌধুরী।
ছোট ছোট হাত, ছোট্ট ছোট্ট পায, আর গায়ের মিষ্টি গন্ধ - এসব নিয়ে কত ভেবেছেন দুজনে। কিন্তু এই তোলপাড়ের মধ্যে যে স্বপ্নের সন্তানকে পৃথিবীতে আসতে হবে, তা ভাবেননি দুজনের কেউই ।
সব ঠিকঠাকই চলছিল। সন্তান জন্মের আগে ছুটিতে ছিলেন ব্যাঙ্ক কর্মী দেবলীনা । তবে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যেতে হয়েছিল তাঁকে। এছাড়া বাইরের সঙ্গে তেমন কোনও সম্পর্ক ছিল না দেবলীনার। কিন্তু কী সর্বনাশ । প্রেগন্যান্সির ৩৩ তম সপ্তাহে করোনা বাসা বাঁধলো হবু মায়ের শরীরে।
প্রথমে হালকা সর্দি-কাশি । সময়টা ছিল মে মাসের মাঝামাঝি। ১৪ মে থেকে জ্বরের দাপট একটু বেড়েই গেল । সেই সময় আর দেরি করেননি শাক্য। স্ত্রীকে নিয়ে সোজা ভর্তি করান দক্ষিণ কলকাতার অরবিন্দ সেবা সদন হাসপাতালে। সেখানে প্রথমদিকে স্থিতিশীল থাকলেও পরে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার শুরু হয় দেবলীনার। সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে নির্ধারিত সময়ের আগেই প্রসব করানো হয় । ফুটফুটে মেয়ে হয় তাঁদের। এরপর মায়ের অবস্থা আরও খারাপ হয় ।
ছোট্ট মেয়েটাকে কোলে নিতে পারেননি মা । হয়ত ভালোভাবে দেখেননি মেয়ের মুখও। দেবলীনাকে স্থানান্তরিত করা হয় আইসিইউ-তে। শ্বাসকষ্ট ক্রমেই বাড় ছিল চিকিৎসকদের পরামর্শে একমো সাপোর্টের খোঁজ করতে শুরু করেন দেবলীনার স্বামী । অবশেষে মেডিকা সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এরপর ৮ দিন প্রায় যমে-মানুষে টানাটানি চলে। ফুসফুসের অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে চিকিত্সকরা কোনও কিছু আশ্বাস দিতে পারছিলেন না ।
এদিকে সদ্যোজাত ফুটফুটে মেয়েটিকে বাড়িতে আনার বড্ড প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সে-সময় চলে এলো ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। কিন্তু তার থেকেও বড় ঝঞ্ঝা চলছিল শাক্যর মনে। হাসপাতাল থেকে গ্রিন সিগন্যাল পেয়েও মেয়েকে বাড়ি আনতে বড্ড দেরী হয়ে গেল । সদ্যজাতের মা তখন লড়াই করছেন ভয়ঙ্কর ভাইরাসের সঙ্গে। কে দেখবে মেয়েকে, এই চিন্তায় মনের ভিতরটা ছটফট করছিল শাক্যর। সদ্যজাতর কাছে তার নিজের মায়ের বিকল্প কেই বা হতে পারেন !
অবশেষে ১ জুলাই মেয়েকে নিয়ে বাড়ি আসেন শাক্য। কিন্তু স্ত্রী দেবলীনার অবস্থা তখনও ইতিবাচক নয় । অবশেষে আট দিন পর কিছুটা সুস্থ হলে একমো থেকে বার করা হয় তাঁকে। এরপর বেশ কিছু দিন কাটাতে হয়েছে তাঁকে আইসিইউতে । সেই সময় ভিডিও কলে মেয়ের হাত পা নাড়া দেখেছেন দেবলীনা। আসলে বিরাট এক যুদ্ধ জয় করার জন্য এভাবেই মানসিক বল জুগিয়েছে এই চোখের-দেখাটা।
সেই সময়ের কথা খুব বেশি মনে না পড়লেও দেবলীনার মনে আছে, চোখ মেলে দেখতে পাওয়া সেইসব ভগবানের মতো চিকিৎসকদের কথা। এখনও ডা. দীপাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়, ডা. অর্পণ চক্রবর্তীদের কথা বলতে গেলে গলা ধরে আসে তাঁর। যাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রম ছাড়া কোনওভাবেই হয়তো নিজের সন্তানের সঙ্গ পাওয়া হত না দেবলীনার।
অবশেষে বড় যুদ্ধ জয় করে বাড়ি ফিরেছেন তিনি। কোলে নিয়েছেন ছোট্ট মেয়েকে। এখন আরও-আরও বেশি করে কাটাতে চান নতুন প্রাণের সঙ্গে। নবজাতক কন্যার সঙ্গে সঙ্গে নতুন জন্ম তো তাঁরও হয়েছে!
Check out below Health Tools-
Calculate Your Body Mass Index ( BMI )