এক্সপ্লোর

London Tour : 'বাগানে নেমে এসে দেখি এক কোণে বসে মিটিমিটি হাসছেন আমাদের রবীন্দ্রনাথ'

Europe Travel : “বৃষ্টি পড়ে এখানে বারো মাস। এখানে মেঘ গাভীর মত চরে।” শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের এই লাইন দুটো যেন লন্ডন শহরের কথা ভেবেই লেখা।

১৮ মার্চ, ২০২৩
 যে ক’দিন এ শহরে ছিলাম রোজই বৃষ্টির ছোঁয়া পেয়েছি। আজও লন্ডন শহরে ঘোরার জন্য নির্ধারিত রয়েছে। একটু বেলা করেই বেরোনো হল। প্রথমে সেই বিগবেনের সামনে। ব্রিজের উপর পৌঁছতেই হঠাৎ যেন থেমে গেল যানবাহন। দেখি ব্রিজের অন্য দিক থেকে একটা মিছিল আসছে। সাংবাদিকের মন নেচে উঠল, দেখি তবে এদেশে প্রতিবাদের ভাষা কেমন। একটা বর্ণময় মিছিল, সঙ্গে ড্রাম বাজিয়ে কিছু মানুষ গান গাইছেন। ধীরে ধীরে মিছিল সামনে আসতে বুঝলাম এইচআইভি সংক্রান্ত সচেতনতা এবং আক্রান্তদের সামাজিক প্রতিষ্ঠার মত বেশ কিছু দাবিদাওয়া সম্বলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে মিছিল চলছে। স্লোগান, প্ল্যাকার্ড, ফ্ল্যাগ, ড্রামস সব মিলে এক বর্ণময় চেহারা সে মিছিলের। সামনে পিছনে পুলিশ এসকর্ট। মিছিল ব্রিজ অতিক্রম করে যেতেই যেন জাদু কাঠির ছোঁয়ায় আবার সব যানবাহন আগের মত সচল হয়ে উঠল।

আকাশে মেঘ রোদের খেলা চলছে। সামনে লন্ডন আই ঘুরে চলেছে মৃদু গতিতে। ব্রিজের উপর চলার পথে জটলা। উঁকি মেরে দেখি গ্লাসের তলায় বল চাপা দেওয়ার খেলা চলছে। যিনি খেলাচ্ছেন তিনি যারা খেলছেন তাদের হাতে মুঠো মুঠো টাকা দিচ্ছেন। এ কেমন খেলা ! সন্দেহের পলক পড়তেই না পড়তেই চোখের সামনে এক বিদেশির ১০০ পাউন্ড গচ্চা যেতে দেখলাম। বুঝলাম, আসলে যিনি খেলাচ্ছেন এবং যাঁরা খেলে টাকা পাচ্ছেন এঁরা সবাই একই দলের। আর এভাবেই লোক ঠকানোর খেলা চলছে বিগবেনকে সাক্ষী রেখে। চোখ কপালে তুলে ফিরে তাকাতে দেখি আরও একটি মিছিল। লন্ডনের আজ হল কী ? দাঁড়িয়ে পড়ে দেখলাম আরও একটি মিছিল আসছে। এবার যেন নিরাপত্তা আরও বেশি মনে হল। বুঝলাম এবার রাজনৈতিক মিছিল। ইরানের মানুষদের স্বাধীনতার দাবি নিয়ে মিছিল কয়েকশো মানুষের। রাজনৈতিক দাবি বলেই হয়তো মিছিলের চেহারা কিছুটা গম্ভীর। কিন্তু শালীনতায় কোন বিচ্যুতি নেই।

খানিকক্ষণ টেমসের ধারে ঘুরে টিউবে চড়লাম। গন্তব্য বেকার স্ট্রিট। এদিকের আন্ডারগ্রাউন্ড স্টেশনগুলো দেখে বোঝা যায় তার গঠনশৈলী বেশ পুরনো। তাই চকচকে ভাব নেই। স্টেশন থেকেই সেই বিখ্যাত পথের দিক নির্দেশ করা রয়েছে। ধন্য ব্রিটিশ বুদ্ধি। এক কাল্পনিক চরিত্রকে বাস্তব রূপ দিতে তারা একটা গোটা বাড়ি তৈরি করে উপন্যাসের মতো সাজিয়ে রেখেছেন। বেশ কিছু দক্ষিণা দিয়ে সেখানে প্রবেশের অনুমতি মেলে। সেই বিখ্যাত ঠিকানা হল

শার্লক হোমসের ঠিকানায়
শার্লক হোমসের ঠিকানায়

২২১ বি বেকার স্ট্রিট। যার বাসিন্দা ছিলেন শার্লক হোমস। সঙ্গের স্যুভেনির শপটিও বেশ আকর্ষণীয়।


এ বাড়ির কাছেই রয়েছে আরো এক বিখ্যাত ঠিকানা, অ্যাবে রোড স্টুডিও। ইংরেজি পপ গানের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া বিটলস্ এর আস্তানা। বিটলস্ শপও বেশ লোভনীয়। ইউরোপের নানা জায়গায় ঘুরে দেখলাম দর্শনীয় স্থানগুলোকে স্মরণীয় করে রাখতে এই স্মরণিকা বা স্যুভেনির শপগুলোর সত্যিই জুড়ি নেই।


১৯ মার্চ, ২০২৩
আমার ছোটবেলায় একদিন হঠাৎ শুনি বাড়ির পাশে থিয়েটার রোডের নাম বদল হয়ে শেক্সপিয়র সরণি হল। সেই প্রথম এই নামটার সঙ্গে পরিচয়। ময়দানে বইমেলার যুগে ‘বিশ্ব ক্লাসিকস সম্ভার’ নামে বাবা একটা বই কিনে দিয়েছিলেন। তাতে বিশ্ব সাহিত্যে আলোড়ন ফেলা বেশ কিছু লেখার বাংলা অনুবাদ ছিল। সেখানেই পড়া ‘মার্চেন্ট অফ ভেনিস’। অলংকরণে ছুরি হাতে শাইলকের ছবি দেখে বেশ ভয় করত।


আমি যখন মাঝে ইস্কুলে তখন দূরদর্শনে দেখলাম সপ্তপদী। ছবির মাঝে ওথেলো আর ডেসডিমনার সঙ্গে পরিচয় হল। বাম সরকারের সিদ্ধান্তে প্রাথমিকে ইংরেজি তুলে দেওয়ায় মাধ্যমিক পর্যন্ত শেক্সপিয়র পড়তে হল না ঠিকই কিন্তু ওই নামের জাদু কেমন যেন টানত। তাই স্কুল পেরিয়ে বইমেলা থেকে বই কিনে পড়া ‘মিড সামার নাইটস্ ড্রিম’ বা ‘জুলিয়াস সিজার’। এবার তাঁর মূল ভাষার সঙ্গে আলাপ। পরে বুঝেছিলাম এটি প্রাচীন ইংরেজি। প্রথমে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল। মেজ জেঠু বেশ কিছুটা সাহায্য করেছিলেন। এভাবেই প্রাচীন ইংরেজি সাহিত্যের প্রথম রসাস্বাদন।
এত কথা লেখার কারণ আজ সকালেই গৌরব আর ঐশ্বর্য একটা মস্ত বড় গাড়ি নিয়ে এল। আমরা পাঁচজন তাতে চেপে বসলাম। গন্তব্য অ্যাভন নদীর তীরে স্ট্রাটফোর্ড। সেখানেই শেক্সপিয়ারের বাড়ি। গাড়ি ছুটল হাইওয়ে ধরে। লন্ডন শহর থেকে দূরত্ব প্রায় ১০০ মাইল। এখনো এ দেশে দূরত্ব মাপতে মাইলের একক ব্যবহৃত হয়। শহর ছাড়াতেই দুদিকে দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ। ঐশ্বর্য আমাদের জন্য নানারকম খাবার এবং চা, কফি, জুস নিয়ে এসেছে। পিকনিকের মেজাজে আমরা খেতে খেতে এবং গল্প করতে করতে চলেছি। মাঝে মাঝে ছোট ছোট কিছু জনপদ। ঘন্টা দুয়েক পরে গন্তব্যে পৌঁছে গাড়ি থেকে নামতেই ঠান্ডা হাওয়ায় কাঁপিয়ে দিল আমাদের। আকাশে মেঘ, ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টির মধ্যেই যত গরম জামা ছিল সব পরে নিয়ে হাঁটা দিলাম।

 

শেক্সপিয়রের বাড়ি
শেক্সপিয়রের বাড়ি

ছোট্ট সাজানো জনপদ। শেক্সপিয়ারের বাড়িকে ঘিরে বেশ কয়েকটা দোকানপাট। তার মধ্যে কিছু স্যুভেনির শপ, কিছু অ্যান্টিকের দোকান। আমার দুই অ্যান্টিক প্রিয় বন্ধু প্রথমেই সেখানে ঢুকে পড়ল। খুঁজে পেতে বেশ কিছু জিনিস কিনে দোকানিকে প্যাকিং করে রাখতে বলে আমরা ঢুকে পড়লাম শেক্সপিয়ারের বাড়ি ও সংগ্রহশালায়। প্রথমের অংশটি নতুন। শেক্সপিয়ারের বংশ পরিচয়, জীবনী, তাঁকে নিয়ে নানাজনের লেখা, নানা শিল্পকর্ম দেখে একটা বাগানে গিয়ে পড়লাম। এরপর ডানদিকে ঘুরে একটা কাঠ আর পাথরের দু'তলা বাড়ি। এটাই শেক্সপিয়রের জন্মস্থান। ১৫৬৪ তে তাঁর জন্ম। সে যুগে তাঁর পরিবার বেশ অবস্থাপন্ন ছিল। দু’তলা মিলিয়ে গোটা আটেক ঘর। সে যুগের মত করে সাজানো। প্রতিটি ঘরের গাইড বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন সে যুগের সমাজ চিত্র এবং সে ঘরের বৈশিষ্ট্য।

 

শেক্সপিয়রের বাড়ির ভিতরে
শেক্সপিয়রের বাড়ির ভিতরে

চারশো থেকে সাড়ে চারশো বছরের পুরনো ইতিহাসকে ছুঁয়ে দেখা। আজও যে মানুষটার লেখা এই বিশ্বের নানা প্রান্তে পড়া ও পড়ানো হচ্ছে, আজও যে মানুষটার লেখা প্রতিদিন বিশ্বের কোন না কোন  রঙ্গালয়ে অভিনীত হচ্ছে তিনিই তো কালোত্তীর্ণ তিনি তো প্রকৃত অর্থে লিভিং লেজেন্ড। আপামর মানবজাতির হয়ে তাঁর উদ্দেশে শ্রদ্ধা জানিয়ে বাগানে নেমে এসে দেখি কোণে বসে মিটিমিটি হাসছেন আমাদের রবীন্দ্রনাথ।

 

স্ট্র্যাটফোর্ডে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
স্ট্র্যাটফোর্ডে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

এখানে তাঁকে দেখে মনে হল অচেনা দূর দেশে বেড়াতে এসে হঠাৎ এক প্রাণের বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয়েছে। দেখা হল, ছবি তোলা হল। বাইরে যখন বেরিয়ে এলাম বেশ কড়া রোদ উঠেছে, সেই সঙ্গে কনকনে ঠান্ডা হাওয়া বইছে। সামনের এক কফি শপে ঢুকে গরম কফি আর কিছু কুকি দিয়ে শরীরে কিছুটা উষ্ণতা সঞ্চার করে হাঁটা লাগালাম অ্যাভন নদীর পথে। কানে বাজছে জীবনানন্দের বনলতা সেন, ‘হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে…’। কোন অনাদিকাল থেকে এ পথ দেখেছে মানুষকে হেঁটে যেতে। কত লক্ষ কোটি পায়ের চিহ্ন ছড়িয়ে রয়েছে এ পথে। প্রতিটা বাড়ি যেন তাদের সৌন্দর্য দিয়ে পথিকদের অভিবাদন করে চলেছে। নদীর জলে এক ঝাঁক মরাল গলা তুলে ভেসে চলেছে সেও তো আমাদেরই জন্য। পড়ন্ত আলোয় গাড়িতে উঠে হিটার অন করে বসে অনেকটা সময় কেউ কথা বলতে পারলাম না। মুগ্ধতার রেশ যেন সবাইকে আবিষ্ট করে রেখেছে।

আরও পড়ুন : যামিনী রায়, সত্যজিৎ রায়, গুরু দত্ত, পণ্ডিত রবিশঙ্করের উজ্জ্বল উপস্থিতি ব্রিটিশ মিউজ়িয়ামে; নজর কাড়বে কালী মূর্তিও

চলবে...

আরও দেখুন
Advertisement
Advertisement
Advertisement

সেরা শিরোনাম

Bird Flu : চিন্তা বাড়াচ্ছে বার্ড ফ্লু ?  মুরগি কেনার সময় মাথায় রাখুন এই বিষয়গুলি
চিন্তা বাড়াচ্ছে বার্ড ফ্লু ?  মুরগি কেনার সময় মাথায় রাখুন এই বিষয়গুলি
Universal Pension Scheme : এবার সবাই পাবে পেনশন ! মোদি সরকার আনতে চলেছে নতুন স্কিম 
এবার সবাই পাবে পেনশন ! মোদি সরকার আনতে চলেছে নতুন স্কিম 
Multibagger Stocks : ২১ টাকা থেকে ৪১৫০ টাকায়, মাল্টিব্যাগার পেনি স্টকে এক লাখ হয়েছে ২ কোটি 
২১ টাকা থেকে ৪১৫০ টাকায়, মাল্টিব্যাগার পেনি স্টকে এক লাখ হয়েছে ২ কোটি 
Provident Fund:  পিএফ অ্যাকাউন্টে কত টাকা জমা পড়েছে ? এই পদ্ধতিগুলির মাধ্যমে জানতে পারবেন আপনি
পিএফ অ্যাকাউন্টে কত টাকা জমা পড়েছে ? এই পদ্ধতিগুলির মাধ্যমে জানতে পারবেন আপনি
Advertisement
ABP Premium

ভিডিও

Panagarh News: 'ধাওয়া করে ইভটিজিং' পানাগড়কাণ্ডে এখনও রহস্যPanagarh Incident : পানাগড়কাণ্ডে কোথায় বাবলু যাদব? আড়ালের চেষ্টা দেখছে নিহতের পরিবারCM Mamata Banerjee: 'যাঁরা বলছেন ১৪৪ বছর পর মহাকুম্ভ হচ্ছে, এটা ঠিক নয়', আক্রমণ মমতারChhok Bhanga Chota: পানাগড় থেকে কুমোরটুলি, প্রশ্ন মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে

ফটো গ্যালারি

ব্যক্তিগত কর্নার

সেরা প্রতিবেদন
সেরা রিল
Bird Flu : চিন্তা বাড়াচ্ছে বার্ড ফ্লু ?  মুরগি কেনার সময় মাথায় রাখুন এই বিষয়গুলি
চিন্তা বাড়াচ্ছে বার্ড ফ্লু ?  মুরগি কেনার সময় মাথায় রাখুন এই বিষয়গুলি
Universal Pension Scheme : এবার সবাই পাবে পেনশন ! মোদি সরকার আনতে চলেছে নতুন স্কিম 
এবার সবাই পাবে পেনশন ! মোদি সরকার আনতে চলেছে নতুন স্কিম 
Multibagger Stocks : ২১ টাকা থেকে ৪১৫০ টাকায়, মাল্টিব্যাগার পেনি স্টকে এক লাখ হয়েছে ২ কোটি 
২১ টাকা থেকে ৪১৫০ টাকায়, মাল্টিব্যাগার পেনি স্টকে এক লাখ হয়েছে ২ কোটি 
Provident Fund:  পিএফ অ্যাকাউন্টে কত টাকা জমা পড়েছে ? এই পদ্ধতিগুলির মাধ্যমে জানতে পারবেন আপনি
পিএফ অ্যাকাউন্টে কত টাকা জমা পড়েছে ? এই পদ্ধতিগুলির মাধ্যমে জানতে পারবেন আপনি
Stock Market Today : পাঁচ দিনের পতন থেকে মুক্তি, আজ বাজারের ১০ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়  
পাঁচ দিনের পতন থেকে মুক্তি, আজ বাজারের ১০ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়  
BSNL Recharge Plan : ৮০০ টাকার কমে ৩০০ দিনের ভ্য়ালিডিটি, BSNL-এর এই ফ্রি কলিং প্ল্যানে বাড়ছে আগ্রহ 
৮০০ টাকার কমে ৩০০ দিনের ভ্য়ালিডিটি, BSNL-এর এই ফ্রি কলিং প্ল্যানে বাড়ছে আগ্রহ 
Kolkata  News : 'চালচলন খারাপ, মায়ের চুরি করার অভ্যেস', কুমোরটুলিকাণ্ডের ২ মহিলাকে নিয়ে তিতিবিরক্ত পড়শিরাও
'চালচলন খারাপ, মায়ের চুরি করার অভ্যেস', কুমোরটুলিকাণ্ডের ২ মহিলাকে নিয়ে তিতিবিরক্ত পড়শিরাও
Panagarh News:'আসছি ঠাম্মি বলে চলে গেল...' পানাগড়ে তরুণীর মৃত্যুতে শোকে পাথর ঠাকুরমা
'আসছি ঠাম্মি বলে চলে গেল...' পানাগড়ে তরুণীর মৃত্যুতে শোকে পাথর ঠাকুরমা
Embed widget