'Article 370' Review: ইয়ামি গৌতম অভিনীত 'আর্টিকল ৩৭০' কাশ্মীরের জটিল রাজনৈতিক ইস্যুকে পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে পারল?
'Article 370': নাম থেকেই স্পষ্ট এই ছবির বিষয় কী হবে। ভারত সরকার জম্মু কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা '৩৭০ ধারা' বিলোপ করে ২০১৯ সালে। সেই প্রেক্ষাপটেই তৈরি এই ছবি।
আদিত্য সুহাস জাম্বেলে
ইয়ামি গৌতম, প্রিয়মণি, কিরণ কার্মার্কার, অরুণ গোভিল
প্রেক্ষাগৃহ
প্রিয়া হাজরা, নয়াদিল্লি: ছবির নাম যখন 'আর্টিকল ৩৭০' (Article 370 Review), তখন প্রেক্ষাগৃহে প্রবেশের আগে থেকেই দর্শক আন্দাজ করতে পারবেন যে ছবির বিষয় ঠিক কী। ২০১৯ সালের অগাস্ট মাসে, ভারতীয়দের জন্মভূমির অভ্যন্তরে এবং বাইরে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিনে পরিণত হয়েছিল। ওই দিনেই ভারত সরকার জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বা স্বায়ত্তশাসন বিলুপ্ত করে, যা ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদের অধীনে তাদের মঞ্জুর করা হয়েছিল। এই পদক্ষেপ দেশের কিছু অঞ্চলে আনন্দের উদযাপন থেকে শুরু করে কিছু অঞ্চলে ভয়ঙ্কর অশান্তির মতো চরম পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল। উল্লাস থেকে অস্থিরতা, দেশজুড়ে আবেগের ঘনঘটা তৈরি হয়। ইয়ামি গৌতম (Yami Gautam) এবং প্রিয়মণি (Priyamani) অভিনীত সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত অ্যাকশন ড্রামা ঘরানার 'আর্টিকল ৩৭০' ছবিতে ভারতের সেই ঐতিহাসিক সময়ের অধ্যায়গুলিকে ফ্রেমবন্দি করার চেষ্টা করা হয়েছে।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে, ভারত ও পাকিস্তান উভয়েরই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হিমালয় অঞ্চলের কাশ্মীরের উপর কিছু কর্তৃত্ব রয়েছে। এর পর থেকে প্রতিবেশীদের মধ্যে চারটির মধ্যে তিনটি যুদ্ধ হয়েছে এই নিয়েই। ইতিমধ্যে, কাশ্মীরকে ৩৭০ অনুচ্ছেদ দ্বারা অভ্যন্তরীণ প্রশাসনের উপর স্বায়ত্তশাসন দেওয়া হয়েছিল, যা ১৯৪৯ সালের অক্টোবরে কার্যকর হয়েছিল। এটি কাশ্মীরকে অর্থ, প্রতিরক্ষা, বৈদেশিক বিষয় এবং যোগাযোগ ছাড়াও সমস্ত ক্ষেত্রে তার আইন পাস করার অনুমতি দেয়।
ফিল্মটি জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা বাতিল করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গোপন কাজের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে, যার ফলস্বরূপ জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ উভয়কেই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসাবে ঘোষণা করেছে। এই ছবির পরিচালনা করেছেন নবাগত ফিচার নির্মাতা আদিত্য সুহাস জাম্বেলে এবং লিখেছেন ‘উরি’ খ্যাত আদিত্য ধর। প্রচার বা বিপুল দেশাত্মবোধক কোনও দিকেই না গিয়ে, এই জুটি ভারতের ইতিহাসের রাজনৈতিক ঘটনাগুলি ধরার জন্য তাঁদের যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। সিনেমায় কিছু অত্যন্ত নাটকীয় মুহূর্ত রয়েছে, যদিও সেগুলি পূর্বে উল্লিখিত কোনও দিককে প্রশ্রয় না দেওয়ার জন্য প্রবল চেষ্টা করে। অনুমান করা যায় যে এই দৃশ্যগুলি দেখে কারও কোনও অভিযোগ নেই কারণ সেই সময় প্রেক্ষাগৃহের ভিতরে উত্তেজনায় ভরা উল্লাস এবং হুল্লোড় দেখা যায়। গল্প বলার ধরন, ক্যামেরার কাজ বা গল্পের সুরের কথা বললে সিনেমাটি কিছুটা আদিত্য ধরের আগের কাজ, ভিকি কৌশল অভিনীত দেশাত্মবোধক ছবির অনুকরণ করে।
'আর্টিকল ৩৭০', ছবির ২ ঘণ্টা এবং ৩০ মিনিট দৈর্ঘ্যের কারণে মাঝে মাঝে খানিক লম্বা মনে হলেও, এটি একটি সুবিন্যস্ত অধ্যায় যা জটিল রাজনৈতিক উদ্বেগগুলিকে আরও গভীরে গিয়ে এমনভাবে বলে যা সাধারণ দর্শকের বোঝার পক্ষে অনেক সহজ। বোঝার সুবিধার জন্য ছবিটিকে একাধিক অধ্যায়ে ভাগ করা হয়েছে। ২০১৬ সালে জঙ্গি বুরহান ওয়ানির উত্থানের ফলে কাশ্মীরি অস্থিরতা থেকে ২০১৯ সালে ৩৭০ ধারার বিতর্কিত অপসারণ পর্যন্ত, এই ছবি সেই সময়ে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলির একটি সুন্দর ধারা বজায় রাখে। ওয়ানির হত্যার পরে এবং এই ঘটনার ফলে যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে, সিনেমার প্লটটি তারপরে ২০১৯ সালের পুলওয়ামা সন্ত্রাসী হামলায় সরিয়ে নেওয়া হয় এবং এর দোষীদের অনুসন্ধান শুরু হয়।
৩৭০ ধারা প্রত্যাহার করার কয়েক মাস আগে, সিনেমাটি জুনি হাকসার (ইয়ামি গৌতম ধর) নামে একজন স্থানীয় এজেন্টকে কেন্দ্র করে শুরু হয়, যাকে গোপনে কাশ্মীরে জাতীয় তদন্ত সংস্থার (এনআইএ) অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য পিএমও সেক্রেটারি রাজেশ্বরী (প্রিয়মণি স্বামীনাথন) দ্বারা নিয়োগ করা হয়। বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াই করা, দুর্নীতিগ্রস্ত আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা এবং সন্ত্রাসী গ্রুপ দমন করা যাঁর কাজ। এদের নেপথ্যে থেকে সাহায্য করে চলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (কিরণ কর্মার্কার), প্রধানমন্ত্রী (অরুণ গোভিল) এবং এমন মানুষ যাঁদের নাম নেওয়া হয়নি (কিন্তু নিশ্চিতভাবে বোঝা যাবে)।
ছবির প্রথমার্ধ খানিত ধীর গতিতে চলে, তবে তা ক্লাইম্যাক্সে গতি নেওয়ার আগে জ্বালানি সঞ্চয়ের মতোই বলা যেতে পারে। দ্বিতীয় ভাগ সেই গতি বাড়িয়ে তোলে এবং তীক্ষ্ণ হয়ে ওঠে। কিছু শক্তিশালী সংলাপ প্রশংসার দাবি রাখে। ইন্টেলিজেন্স ফিল্ড অফিসার জুনি হাকসারের চরিত্রে ইয়ামি গৌতমের অভিনয় সকলের মধ্যে অন্যতম চর্চিত এবং তাঁর যথেষ্ট কারণ আছে। তবে কিছু দৃশ্যে মনে হতে পারে দেশাত্মবোধ বেশি বেরিয়ে আসছে তাঁর অভিনয়ে। একজন উচ্চপদস্ত দক্ষ অফিসারের কাছ থেকে প্রত্যাশিত পরিপক্কতা থেকে খানিক দূরে সরে যায় এমন অভিব্যক্তি। কিন্তু বলিউড 'হিরো'কে কোনও না কোনওভাবে আলাদা তো হতেই হবে, তাই না?
এই সমস্ত অস্থিরতার মধ্যে, প্রিয়মণি তাঁর সূক্ষ্ম অথচ রচিত অভিনয় দিয়ে লাইমলাইটে থেকে যান এবং একই সঙ্গে সমান চিত্তাকর্ষক পারফরম্যান্সও দেন। অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করা অরুণ গোভিল এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করা কিরণ কর্মার্কার, উভয়কেই স্পষ্টতই যথাক্রমে নরেন্দ্র মোদি এবং অমিত শাহের মডেল হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। প্রধান কাস্টকে যোগ্য সহযোগিতা করেছেন অভিনেতা রাজ জুটসি, রাজ অরুণ এবং বৈভব তাতওয়াদি।
আরও পড়ুন: 'Crakk' Review: বিদ্যুৎ জামওয়াল 'ক্র্যাক' ছবির প্রাণ, অ্যাকশন দৃশ্য কাড়বে নজর
'আর্টিকল ৩৭০' কার্যকরভাবে একটি সরল গল্প এবং আকর্ষণীয় পারফর্ম্যান্সের মাধ্যমে তার উদ্দেশ্যমূলক বার্তা প্রদান করে। এই ছবির লক্ষ্য ছিল, আমলারা এবং রাজনীতিকরা যে বারবার কাশ্মীরে তাদের ক্ষমতা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে, যা যুবকদের প্রতারণা করে পাথর ছুঁড়তে বাধ্য করেছে এবং চরমপন্থাকে অনুমতি দিয়েছে, সেই হৃদয়বিদারক গল্প তুলে ধরা।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।