ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি থেকে বাদ ‘ফেয়ার’, সোনালি, তিয়াশা, স্বস্তিকার প্রশ্ন ‘মনের ময়লা দূর হবে তো?’
ফেস ক্রিম থেকে ‘ফেয়ার’ শব্দ বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে হিন্দুস্তান ইউনিলিভার।
কলকাতা: ‘ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি’ আর ‘ফেয়ার’ নয়! ফেস ক্রিম থেকে ‘ফেয়ার’ শব্দ বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে হিন্দুস্তান ইউনিলিভার। ২৫ জুন সংস্থার তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, তারা তাদের পণ্যের নাম বদল করবে। শুধু তাই নয় হিন্দুস্তান ইউনিলিভার নিশ্চিত করেছে, ‘ফেয়ার’, ‘হোয়াইট/হোয়াইটেনিং’ কিংবা ‘লাইট/লাইটেনিং’ জাতীয় শব্দও রাখা হবে না।
সম্প্রতি বর্ণবিদ্বেষ নিয়ে উত্তাল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। শ্বেতাঙ্গ পুলিশের হাতে কৃষ্ণাঙ্গ খুনের ঘটনার প্রতিবাদ হচ্ছে সর্বত্র। এই আবহে ‘বর্ণবিদ্বেষ’ নিয়ে যুগান্তকারী বার্তা ও পদক্ষেপ নিল হিন্দুস্তান ইউনিলিভার। নিজেদের পণ্য থেকে মুছে দেওয়া হচ্ছে সাদাকালোর বিভেদ। এই একই পথে হাঁটছে জনসন অ্যান্ড জনসন-ও। উজ্জ্বল্য বর্ধক ক্রিম ‘নিউট্রজেনা ফাইন অ্যান্ড ফেয়ারনেস’ বন্ধ করে দিচ্ছে জনসন অ্যান্ড জনসন। বন্ধ হচ্ছে ক্লিন অ্যান্ড কেয়ারের ‘ক্লিয়ার ফেয়ারনেস’-এর মতো পণ্যও।
দেরিতে হলেও ভারতীয় সংস্থাগুলোর এই বোধদয় নাগরিক পরিসরে বেশ সাড়া ফেলেছে। ‘প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ’, বলছেন তারকারা। তবে প্রশ্নও থাকছে, মুখের ময়লা তো না হয় তোলা গেল, মনের ময়লার কী হবে? এই প্রসঙ্গেই এবিপি আনন্দ কথা বলল বাংলা ধারাবাহিকের তিন তারকার সঙ্গে। প্রথম জন সোনালি চৌধুরি। ‘এক আকাশের নীচে’. ‘অগ্নিপরীক্ষা’-র মতো জনপ্রিয় ধারাবাহিক অভিনয় করেছেন সোনালি। ‘ফর্সা হলেই নায়িকা হওয়া যায়’, বিংশ শতকের শুরুতেই এই ধারনা ভেঙে দিয়েছন তিনি। তাঁর কথায়, “আমি ফর্সা নই, সেকারণে অনেক কটুক্তি শুনতে হয়েছে। লাল রঙ আমার পছন্দ। লাল রঙের শাড়ি পরার পর একবার শুনতে হয়েছিল, ‘ও বাবা কালোদের ওপর লাল রঙ এত সুন্দর লাগে’। জানি না, সেটা কমপ্লিমেন্ট ছিল না কটুক্তি। এমনও হয়েছে, পরিচালকের কাছে ছবি জমা দিতে গিয়ে শুনেছি চাপা গায়ের রঙ নিয়ে নায়িকা হবে, কী করে ভাবলে? তবে আমি এখন কাজ করছি, এখন তিনি নেই।” সোনালি হিন্দুস্তান ইউনিলিভারের এই পদক্ষেপে খুশি। “ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি থেকে ‘ফেয়ার’ কথাটা ২০২০ সালে এসে উঠল। এটা আরও অনেক আগেই হওয়া উচিত ছিল। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ঈশ্বরকে ধন্যবাদ শেষ পর্যন্ত হল”, মত সোনালির।
‘কৃষ্ণকলি’-র তিয়াশা রায় এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানালেও প্রশ্ন তুলছেন মানুষের ভাবধারার পরিবর্তন নিয়ে। তাঁর কথায়, “ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি থেকে ‘ফেয়ার’ কথাটা উঠে যাক বা ‘লাভলি’ কথাটা উঠে যাক কিংবা নতুন কিছু যোগ হোক, তাতে কিছুই যায় আসে না। মানুষের মনের মধ্যে ‘সাদাকালো’ ভেদাভেদ না সরলে আদতে কোনও কাজের কাজ হবে না।”
স্বস্তিকা দত্ত আবার যেমন বললেন, “ছোটবেলায় শুনেছি ফর্সা হতে গেলে ‘ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি’ মাখতে হয়। সুন্দরের সংজ্ঞাই ছিল ফর্সা। এখনও তো শুনি, ‘ডার্ক পিপল’, ‘ফেয়ার পিপল’। আমার প্রশ্নটা হল, এই পদক্ষেপটা এখন কেন নেওয়া হল? অনেক আগেই তো হওয়া উচিত ছিল।” ‘কি করে তোমায় বলব’ ধারাবাহিকের অভিনেত্রী এও বলেন, “এটা ইতিবাচক পদক্ষেপ। আমি বলব ‘নট ফেয়ার বাট লাভলি’। স্বাগত জানাচ্ছি এবং ভাবনারও বদল হওয়ার আশা রাখছি।”