এক্সপ্লোর

১৯৩০-এর এক রক্তক্ষয়ী দিন: ব্রিটিশ পুলিশের বুলেটে প্রাণ হারিয়েছিলেন ১৪ জন স্বাধীনতা সংগ্রামী

নৃশংস ব্রিটিশ পুলিশের নির্বিচার বুলেট বুকে পেতে নিয়েছিলেন ১৪ জন স্বাধীনতা সংগ্রামী। ঘটনা ঘটেছিল দেশব্যাপী আইন অমান্য আন্দোলন চলাকালে।

কলকাতা: অগণিত মানুষের মরণপণ সংগ্রাম, আত্মবলিদানের মাধ্যমে এসেছে ভারতের স্বাধীনতা। শহিদদের আত্মত্যাগের কাহিনী অমর হয়ে আছে ইতিহাসের পাতায়। এমনই একটি ঘটনা ঘটেছিল অবিভক্ত মেদিনীপুর অধুনা পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরে। নৃশংস ব্রিটিশ পুলিশের নির্বিচার বুলেট বুকে পেতে নিয়েছিলেন ১৪ জন স্বাধীনতা সংগ্রামী। ঘটনা ঘটেছিল দেশব্যাপী আইন অমান্য আন্দোলন চলাকালে। গুজরাতের ডান্ডিতে লবন আইন ভেঙে যে আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন মহাত্মা গাঁধী, তার আঁচ এসে পড়েছিল দাসপুরের চেঁচুয়া হাটেও। ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামীরা। ১৯৩০-এ আইন অমান্য আন্দোলন চলাকালে সত্যাগ্রহীরা কর্মীরা রূপনারায়ণ নদীর  জোয়ার বাহিত নোনাজল থেকে লবন তৈরি এবং এই নদীর সঙ্গে সংযোগকারী পলাশপাই খালের তীরে চেঁচুয়া হাটে তা বিক্রয়ের পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ চলতে থাকে। সত্যাগ্রহীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে দেরি করেনি ব্রিটিশ সরকারের পুলিশ। এ সত্ত্বেও স্বদেশী ও স্বেচ্ছাসেবক দল চেঁচুয়া হাটে লবন সহ স্বদেশী সামগ্রী ব্যবহার ও বিক্রয়ের অনুরোধ করতে থাকেন। পুলিশের কাছে এই খবর পৌঁছতে দেরি হয়নি। আইন অমান্য আন্দোলনকারীদের এই প্রচেষ্টা দমন করতে তত্পর হয়ে পুলিশ। ১৯৩০-এর ৩ জুন। দাসপুর থানার বড়বাবু ভোলানাথ ঘোষ সহকারী ও চার সিপাইকে নিয়ে হাটে পৌঁছে কয়েকজনকে গ্রেফতার করে। এই অত্যাচার মুখ বুজে সহ্য করতে পারেননি স্বাধীনতা সংগ্রামী স্থানীয় যুবক মৃগেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। তিনি ভোলা দারোগার নাম ধরে ডাকেন এবং একই বেঞ্চে তার পাশে বসে পড়েন। এতে ক্ষুব্ধ ভোলা দারোগা মৃগেন্দ্রনাথকে হাতের বেত দিয়ে আঘাত করে। মৃগেন্দ্রনাথ তা বরদাস্ত করেননি। বেত কেড়ে পাল্টা আঘাত করেন তিনি। এভাবে মৃগেন্দ্রনাথের রুখে দাঁড়ানোর পর উত্তেজিত জনতা ভোলা দারোগাকে পিটিয়ে মেরে ফেলে। তার অর্ধদগ্ধ  দেহ একটি পুকুরের পাড়ে মাটি চাপা দিয়ে কলাগাছ লাগিয়ে দেওয়া হয়। ভোলা দারোগার সহকারীর দেহ খণ্ড খণ্ড করে সেই রাত্রেই স্থানীয় একটি মাঠে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। বাকি চার সেপাই কোনওক্রমে পালিয়ে যেতে পারে। ৩ জুনের এই ঘটনা দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে। পরের দিন ঘটনার তদন্তে আসেন মেদিনীপুরের ডিএম মিস্টার পেডি, এডিএম আব্দুল করিম ও দাসপুরের নতুন দারোগা। চেঁচুয়া হাটে পুলিশ শিবির বসল। আশেপাশের গ্রামগুলিতে চলল ব্রিটিশ পুলিশের অবর্ণনীয় অত্যাচার। ঘর ছাড়তে বাধ্য হলেন অধিকাংশ পুরুষ। এখানেই শেষ নয়। অত্যাচারের চেনা ছকে আতঙ্ক তৈরি করতে স্বাধীনতাকামীদের দমনের উদ্দেশ্যে আরও বেশি পুলিশ ও সেপাই পাঠাতে থাকে ঔপনিবেশিক শাসক।  জলপথে আরও পুলিশ ও সেপাই আসার খবর গ্রামের মহিলারা শঙ্খধ্বনির মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। এই খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আশেপাশের গ্রামের নারীপুরুষ নির্বিশেষে অসংখ্য নিরস্ত্র মানুষ চেঁচুয়া হাটের উত্তর পাড়ে সমবেত হতে থাকেন। তাঁদের দাবি ছিল, বন্ধ হোক পুলিশের অকথ্য অত্যাচার ও তুলে নেওয়া হোক পুলিশ ক্যাম্প।  এই দাবিতে তাঁদের স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে চেঁচুয়া হাটের উত্তর পাড়।  নির্দেশ অমান্য করেই বিক্ষোভকারীরা পলাশপাই খাল অতিক্রমের চেষ্টা করলে বর্বর ব্রিটিশ পুলিশের বন্দুক গর্জে ওঠে। বুলেট বুকে পেতে লুটিয়ে পড়েন ১৪ জন। আহত হন ১৪৫ জনেরও বেশি। শহিদদের রক্তে লাল হয়ে ওঠে পলাশপাই খালের জল। ১৯৩০-এর এক রক্তক্ষয়ী দিন: ব্রিটিশ পুলিশের বুলেটে প্রাণ হারিয়েছিলেন ১৪ জন স্বাধীনতা সংগ্রামী পুলিশের এই গুলি চালনাকে পরোয়া করেনি পরাধীনতার নাগপাশ ছিন্ন করতে মরিয়া সংগ্রামীরা। গুলি চালনার মধ্যেই তাঁরা এগিয়ে এলে পলাশপাই খালের খাসিকাটা ঘাট পেরিয়ে কোনওক্রমে জলপথে কংসবতী নদী দিয়ে পিঠটান দেয় ব্রিটিশ পুলিশ বাহিনী। এরপর পেডি ও পুলিশ ইন্সপেক্টর জেনারেল লোম্যান দেড়শো গোরা সৈন্য নিয়ে আসেন। স্বদেশে ও স্বেচ্ছাসেবীদের বিরুদ্ধে জারি হয় গ্রেফতারি পরোয়ানা। বিচারের জন্য গঠিত হয় বিশেষ আদালত। বিচারপতি ছিলেন সিএমএইচবি লিথব্রেজ। হাইকোর্টের চূড়ান্ত রায়ে অনেকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও জেল হয়। ১৯৩১-এর ৫ মার্চ গাঁধী-আরউইন চুক্তি অনুযায়ী তাঁদের সকলের মুক্তি হয়। চেঁচুয়ায়  শহিদ স্মৃতিস্তম্ভ সেই আত্মবলিদানের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে।এখানে  প্রতি বছর ৬ জুন স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর সেনানীদের প্রতি বিনম্র   শ্রদ্ধা নিবেদন করেন  দলমত নির্বিশেষে সাধারণ মানুষ। (তথ্য সহায়তা ও ছবি-দেবাশীস কুইল্যা)
আরও দেখুন
Advertisement
Advertisement
Advertisement

সেরা শিরোনাম

West Bengal News Live Updates: 'মমতার ঘনিষ্ঠরা কতটা তাঁর ভাল চান, সন্দেহ আছে', ফের বিস্ফোরক হুমায়ুন
'মমতার ঘনিষ্ঠরা কতটা তাঁর ভাল চান, সন্দেহ আছে', ফের বিস্ফোরক হুমায়ুন
Chinmay Krishna Das : জামিন পেলেন না বাংলাদেশের হিন্দু সন্ন্যাসী,  রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের বিচারবিভাগীয় হেফাজত
জামিন পেলেন না বাংলাদেশের হিন্দু সন্ন্যাসী, রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের বিচারবিভাগীয় হেফাজত
Bangladesh Monk Arrest: বাংলাদেশে হিন্দু সন্ন্যাসীর গ্রেফতারি নিয়ে কড়া বার্তা রাম মন্দিরের প্রধান পুরোহিতের! পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা
বাংলাদেশে হিন্দু সন্ন্যাসীর গ্রেফতারি নিয়ে কড়া বার্তা রাম মন্দিরের প্রধান পুরোহিতের! পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা
Chinmoy Krishna Das Prabhu : চিন্ময় প্রভুর গ্রেফতারির পর হিন্দুদের প্রতিবাদে উত্তাল ঢাকা, চট্টগ্রাম, সেখানেও 'আক্রমণ অতর্কিতে'
চিন্ময় প্রভুর গ্রেফতারির পর হিন্দুদের প্রতিবাদে উত্তাল ঢাকা, চট্টগ্রাম, সেখানেও আক্রমণ অতর্কিতে
Advertisement
ABP Premium

ভিডিও

Humayun Kabir: চোর নই যে কোনও মন্তব্য করতে ভয় পাব I কড়া বার্তার পরেও বেলাগাম হুমায়ুন কবীরBally News: গুজরাতে ধৃত সিরিয়াল কিলারের কাছে মিলল বালির নিহত তবলা বাদকের মোবাইলRG Kar Update: বিধানসভায় এলেন আর জি কর মেডিক্যালের নিহত চিকিৎসকের মা-বাবাBankura News: ফের সরকারি হাসপাতালে দালাল-রাজ, এবার বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল

ফটো গ্যালারি

ব্যক্তিগত কর্নার

সেরা প্রতিবেদন
সেরা রিল
West Bengal News Live Updates: 'মমতার ঘনিষ্ঠরা কতটা তাঁর ভাল চান, সন্দেহ আছে', ফের বিস্ফোরক হুমায়ুন
'মমতার ঘনিষ্ঠরা কতটা তাঁর ভাল চান, সন্দেহ আছে', ফের বিস্ফোরক হুমায়ুন
Chinmay Krishna Das : জামিন পেলেন না বাংলাদেশের হিন্দু সন্ন্যাসী,  রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের বিচারবিভাগীয় হেফাজত
জামিন পেলেন না বাংলাদেশের হিন্দু সন্ন্যাসী, রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের বিচারবিভাগীয় হেফাজত
Bangladesh Monk Arrest: বাংলাদেশে হিন্দু সন্ন্যাসীর গ্রেফতারি নিয়ে কড়া বার্তা রাম মন্দিরের প্রধান পুরোহিতের! পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা
বাংলাদেশে হিন্দু সন্ন্যাসীর গ্রেফতারি নিয়ে কড়া বার্তা রাম মন্দিরের প্রধান পুরোহিতের! পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা
Chinmoy Krishna Das Prabhu : চিন্ময় প্রভুর গ্রেফতারির পর হিন্দুদের প্রতিবাদে উত্তাল ঢাকা, চট্টগ্রাম, সেখানেও 'আক্রমণ অতর্কিতে'
চিন্ময় প্রভুর গ্রেফতারির পর হিন্দুদের প্রতিবাদে উত্তাল ঢাকা, চট্টগ্রাম, সেখানেও আক্রমণ অতর্কিতে
Krishna Das Prabhu Arrested: 'ঢাকা বিমানবন্দর থেকে অপহরণ হিন্দু সন্ন্যাসীকে', বিদেশমন্ত্রীকে ব্যবস্থা গ্রহণের আর্জি শুভেন্দুর; কী লিখলেন তসলিমা ?
'ঢাকা বিমানবন্দর থেকে অপহরণ হিন্দু সন্ন্যাসীকে', বিদেশমন্ত্রীকে ব্যবস্থা গ্রহণের আর্জি শুভেন্দুর; কী লিখলেন তসলিমা ?
Krishna Das Prabhu Arrested : বাংলাদেশে গ্রেফতার হিন্দু সন্ন্যাসী ! কে এই কৃষ্ণদাস প্রভু ? কী অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে ?
বাংলাদেশে গ্রেফতার হিন্দু সন্ন্যাসী ! কে এই কৃষ্ণদাস প্রভু ? কী অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে ?
Pradhan Mantri Awas Yojana: সরকারি অফিসারকে চেয়ার ছুড়ে মারলেন TMC নেতা, আবাস যোজনা সমীক্ষা করার সময় বেনজির কাণ্ড!
সরকারি অফিসারকে চেয়ার ছুড়ে মারলেন TMC নেতা, আবাস যোজনা সমীক্ষা করার সময় বেনজির কাণ্ড!
RBI Governor Shaktikanta Das: হঠাৎ অসুস্থ RBI গভর্নর, ভর্তি করতে হল হাসপাতালে, ঠিক কী হয়েছে?
হঠাৎ অসুস্থ RBI গভর্নর, ভর্তি করতে হল হাসপাতালে, ঠিক কী হয়েছে?
Embed widget