এক্সপ্লোর
Advertisement
মরণোত্তর দেহ দান করতে চেয়েছিলেন, করোনা আক্রান্ত হওয়ায় সেই ইচ্ছা অপূর্ণই থেকে গেল, বললেন প্রয়াত শ্যামল চক্রবর্তীর কন্যা ঊষসী
শ্রমিক সংগঠন সিটুর রাজ্য সভাপতি ছিলেন তিনি। সামলেছেন রাজ্যের পরিবহণ দফতরের দায়িত্ব। রাজ্যসভার সাংসদও ছিলেন শ্যামল চক্রবর্তী। কোভিড-প্রোটোকল মেনেই হবে তাঁর শেষকৃত্য।
কলকাতা: প্রয়াত সিপিএম নেতা শ্যামল চক্রবর্তী। করোনায় আক্রান্ত ছিলেন তিনি। গত ৩০ জুলাই থেকে পিয়ারলেস হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। ১ অগাস্ট থেকে ছিলেন ভেন্টিলেশনে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার সকালে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয় তাঁর। দুপুর ১.৫০-এ মৃত্যু হয় তাঁর।
রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রীর প্রয়াণে শোকাহত কন্যা তথা অভিনেত্রী উষসী চক্রবর্তী। এবিপি আনন্দকে তিনি বলেছেন, ‘আমার তো মা ছিল না। ৫ বছর বয়সে মাকে হারিয়েছিলাম। তারপর থেকে একমাত্র অভিভাবক ছিলেন বাবাই। আমাকে বাবাই মানুষ করেছেন। লেখাপড়া শিখিয়েছেন। ব্যস্ততার মধ্যেও উনি আমাকে অনেকই সময় দিয়েছেন সারা জীবন। সময় দিতেন আমার পড়াশোনার পিছনেও। সব কিছুর বাইরে গিয়ে পার্টির কাজটাই ওঁর কাছে বরাবর প্রাধান্য পেয়েছে। আর আমি ওঁর কাছে প্রাধান্য পেয়েছিলাম।’
তবে বাবার একটা ইচ্ছা অপূর্ণ থেকে যাওয়ায় যন্ত্রণাবিদ্ধ কন্যা। কী সেই ইচ্ছা? ‘বাবা জীবদ্দশায় বলে গিয়েছিলেন মৃত্যুর পর যেন তাঁর শরীর দাহ না করা হয়। মেডিক্যাল কলেজে দেহ দান করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু যেহেতু করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাই দেহ দান করা গেল না। সেটা একটা বড় আক্ষেপ হয়ে রয়ে গেল,’ ফোনে বলেছেন ঊষসী। যোগ করেছেন, ‘জননেতা ছিলেন। সারাজীবন রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন। শেষযাত্রায় সহকর্মী ও মানুষ তাঁর সঙ্গে হাঁটুক, চেয়েছিলাম পরিবারের সকলে। কিন্তু উনি করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে সেটাও সম্ভব হচ্ছে না।’
ব্যস্ত অভিনেত্রী তিনি। বর্তমানে জনপ্রিয় সিরিয়াল 'শ্রীময়ী'র অন্যতম মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করছেন তিনি। তাঁর, চরিত্রটি নেগেটিভ শেডের হলেও বেশ জনপ্রিয়। পাশাপাশি 'জুন আন্টি'র চরিত্রেও জনপ্রিয়তা পেয়েছেন উষসী। বাবা তথা প্রাক্তন মন্ত্রী শ্যামল চক্রবর্তীর করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবর তিনিই প্রথম ফেসবুকে পোস্ট করে জানান। বাবার প্রয়াণে শোকস্তব্ধ অভিনেত্রী এবিপি আনন্দকে বলেছেন, ‘আমার মা মারা যাওয়ার পর খুবই কষ্ট করে উনি আমাকে বড় করেছেন। কখনও নিজের সিদ্ধান্ত আমার ওপর চাপিয়ে দেননি। সর্বক্ষণের রাজনৈতিক কর্মী। তাঁর যেরকম জীবন যাপন করা উচিত, সেটার দৃষ্টান্ত হিসাবে থেকে যাবেন উনি। দুর্নীতিমুক্ত। সারাটা জীবন পার্টিকে দিয়ে দেওয়া যায়, এরকম উদাহরণ তৈরি করেছিলেন।’
ঊষসী জানিয়েছেন, তাঁর অভিনয়ে আসার সিদ্ধান্তে প্রথমে খুশি ছিলেন না শ্যামল। ঊষসী বলছেন, ‘আমার অভিনয়ে নামার সিদ্ধান্ত শুনে প্রথমে খুশি ছিলেন না। বাবাকে পরে বোঝাতে সক্ষম হই। পরের দিকে আমার কাজ দেখতেন। সিনেমা রিলিজ করলে দেখতেন। ভাল-মন্দ শেয়ার করতেন।’ অভিনেত্রী যোগ করেছেন, ‘স্নাতকোত্তর পর্বে অর্থনীতিতে ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছিলাম। বাবা চেয়েছিলেন গবেষণা করি। সেই কথা মেনেই এখন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করছি। কবে সাবমিশন হবে, তাড়া দিতেন। তবে লকডাউনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ছিল। এখন অবশ্য অনলাইনে সাবমিশন করা যাবে। কিন্তু বাবা দেখতে পেলেন না।’
লড়াই করতে ভালবাসতেন প্রয়াত শ্যামল। ঊষসী বলছেন, ‘বাবার সবচেয়ে বড় আদর্শ ছিল কোনও সময়ে মানুষের হাত না ছাড়া। লড়াই চালিয়ে যাওয়া ছিল ওঁর মূল মন্ত্র। উনি বলতেন, অন্যায়ের প্রতিরোধ গড়ে তোলাটাই আসল কথা। কিন্তু জীবনের সব যুদ্ধ তো জেতা যায় না।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘এই মুহূর্তে হয়তো বামফ্রন্ট ক্ষমতায় নেই। তবে উনি হতাশ হতেন না। আশাবাদী ছিলেন। বলতেন, তৃণমূল স্তরে গিয়ে কাজ করতে হবে। মানুষের সঙ্গে থাকতে হবে। বলতেন, আমরা তো শূন্য থেকেই শুরু করেছিলাম।’ ঊষসী জানালেন, বাবার মৃত্যু সংবাদ পেয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফোন করেছিলেন। কোনও অসুবিধা হলে জানাতে বলেছেন। ফোন করে প্রকাশ ও বৃন্দা কারাতও শোকপ্রকাশ করেছেন। ঊষসী বলছেন, ‘আজীবন যে ধরনের রাজনীতি করেছেন বাবা, তাতে সিংহভাগ পার্টিকেই দিয়েছেন। প্রলোভন ছিল না। শুধু আদর্শকে আঁকড়ে ধরে কাজ করে গিয়েছেন। ভবিষ্যত প্রজন্ম যেন এভাবেই রাজনীতি করে, সেই বার্তাই দিতে চেয়েছিলেন।’
শ্রমিক সংগঠন সিটুর রাজ্য সভাপতি ছিলেন শ্যামল চক্রবর্তী। সামলেছেন রাজ্যের পরিবহণ দফতরের দায়িত্ব। রাজ্যসভার সাংসদও ছিলেন। কোভিড-প্রোটোকল মেনেই হবে তাঁর শেষকৃত্য।
খবর (News) লেটেস্ট খবর এবং আপডেট জানার জন্য দেখুন এবিপি লাইভ। ব্রেকিং নিউজ এবং ডেলি শিরোনাম দেখতে চোখ রাখুন এবিপি আনন্দ লাইভ টিভিতে
আরও দেখুন
Advertisement
ট্রেন্ডিং
Advertisement
Advertisement
সেরা শিরোনাম
জেলার
জেলার
বিজ্ঞান
জেলার
Advertisement