Stray Dogs Problem In India: রাস্তায় বেরনোর উপায় নেই, রক্ষা পেলেন না কোটিপতি ব্যবসায়ীও, পথকুকুরদের আগ্রাসন থেকে মুক্তি মিলবে কি?
Stra Dog Attacks: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান বলছে, পৃথিবীর সর্বত্র জলাতঙ্কে যত রোগীর মৃত্যু হয়, তার ৩৬ শতাংশই ঘটে ভারতে।
নয়াদিল্লি: চা-পাতার ব্যবসাকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু 'Wagh Bakri' চা সংস্থার মালিক পরাগ দেসাইয়ের (Parag Desai) মৃত্যু হল মর্মান্তিক। পথকুকুরদের তাড়া খেয়ে পালাতে গিয়েছিলেন। সেই সময় মাটিতে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পান। সেই থেকে মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ শুরু হয় এবং শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মাত্র ৪৯ বছর বয়সি পরাগের এই মৃত্যুতে স্তম্ভিত শিল্পমহল (Stra Dog Attacks)। আর সেই সঙ্গেই দেশের রাস্তাঘাটে আগ্রাসী পথকুকুরদের বাড়-বাড়ন্ত নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কারণ গত এক বছরে পথকুকুরদের মুখে পড়ে প্রাপ্তবয়স্ক থেকে শিশুমূত্যুর একাধিক ঘটনা সামনে এসেছে। (Stray Dogs Problem In India)
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান বলছে, পৃথিবীর সর্বত্র জলাতঙ্কে যত রোগীর মৃত্যু হয়, তার ৩৬ শতাংশই ঘটে ভারতে। এর মধ্যে ৩০ শতাংশের বয়সই ১৫ বছরের কম। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রায়শই এমন ভিডিও সামনে আসে, যেখানে আগ্রাসী পথকুকুরদের আক্রমণের মুখে পড়তে দেখা যায় শিশুদের। তাতে সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসনের কাছএ এ নিয়ে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি ওঠে। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই ধরনের ঘটনা সামনে আসে না। সেপ্টেম্বরে উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদে ১৪ বছরের এক কিশোর মারা যায়। পরিবার সূত্রে জানা যায়, মাস দুয়েক আগে কুকুরে কামড়েছিল তাকে। ভয়ে বাড়িতে সেকথা জানায়নি সে।
পরাগের মৃত্যুতেও ফের ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন সাধারণ মানুষদের অনেকে। সোশ্য়াল মিডিয়ায় ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তাঁরা। অনেক সময় সমস্যার কথা জানাতে গেলে পোষ্যের মালিক এবং রাস্তায় পথকুকুরদের খাওয়ান যাঁরা, তাঁদের সঙ্গে ঝামেলাও হয় বলে জানিয়েছেন তাঁরা। এ যাবৎ পথকুকুরদের সঙ্গে এমন কিছু নৃশংসতার ঘটনা সামনে এসেছে, যা কাম্য না হলেও, দিনের পর দিন আতঙ্কে থেকেও কেউ কেউ এমন পদক্ষেপ করে ফেলেছেন বলে দাবি বিক্ষুব্ধদের একাংশের।
ভারতে যে আইন রয়েছে, সেই অনুযায়ী, ২০০১ সালের আগে পর্যন্ত বিপদের গুরুত্ব বুঝে পথকুকুরদের যন্ত্রণামুক্ত উপায়ে মেরে ফেলতে পারতেন পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। ২০০১ সালে অ্যানিমাল বার্থ কন্ট্রোল (ডগস) বিধি চালু হয় দেশে। এর আওতায়, পথকুকুরদের আলাদা বিভাগ তৈরি হয়। পথকুকুরদের নির্বীজকরণ এবং টিকাকরণের কথা বলা হয় তাতে। এ ব্যাপারে পশুকল্যাণ সংগঠন, ব্যক্তি বিশেষ এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে যোগদানের জন্য আহ্বান জানায় সরকার।যন্ত্রণামুক্ত উপায়ে পথকুকুরদের মেরে ফেলার যে নিয়ম চালু ছিল আগে, তার উল্লেখ করা হয় গুরুতর অসুস্থ এবং আহত কুকুরদের ক্ষেত্রে। শুধু তাই নয়, নির্বীজকরণ এবং চিকাকরণ হয়ে গেলে,এ কই জায়গায় পথকুকুরদের রেখে আসতে হবে বলেও নিদান দেওয়া হয়।
কিন্তু বিধি চালু হলেও, দেশের অধিকাংশ এলাকাতেই তা কার্যকর করতে গিয়ে বাধাপ্রাপ্ত হয় সরকার এবং প্রশাসন। সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, এত সংখ্যক পথকুকুরের নির্বীজকরণ এবং টিকাকরণের জন্য় প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান করা। পথকুকুরদের নির্বীজকরণ অত্যন্ত ব্যয়সাপেক্ষ। এমনিতেই লোকসানের খাতায় নাম থাকে পৌরসভাগুলির। তাই পথকুকুরদের নির্বীজকরণ এবং টিকাকরণের বিষয়টিকে উপেক্ষিত হয়েই থেকে যায়। পথকুকুরদের নির্দিষ্ট আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যও প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। আবার তাদের মেরে ফেলার পথেও পশু সংগঠনের কাছ থেকে বাধা আসে। ভারতে এ ব্যাপারে ধর্মীয় বাধাও রয়েছে। পশুহত্যা নিয়ে বিভিন্ন ধর্মেই নিষেধাজ্ঞার উল্লেখ মেলে।
পথকুকুরদের নিয়ে তৈরি হওয়ার সমস্যার সমাধান হিসেবে এখনও পর্যন্ত নানা শলা-পরামর্শ সামনে এসেছে। এর জন্য বিশেষ সরকারি তহবিল তৈরি, মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলা, পশুর প্রতি নৃশংস আচরণ নিয়ে সচেতন করার কথা বলা হয়েছে। পশু অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলির দাবি, পথকুকুরদের মেরে দেওয়া বৈধতা পেলে, পশুদের প্রতি নৃশংসতা আরও বাড়বে, কমবে না মোটেই। আইনের অপব্যবহার শুরু হবে। সম্প্রতি কেরল সরকারের স্থানীয় প্রশাসনের তরফে পথকুকুরদের রাস্তা থেকে সরিয়ে নেওয়ার পক্ষে সওয়াল করা হয়। বিষয়টি এখনও সুপ্রিম কোর্টে আটকে রয়েছে।
শুধু ভারতই নয়, নেদারল্যান্ডস, আমেরিকার মতো দেশও একসময় পথকুকুরদের সমস্যায় জর্জরিত ছিল। কিন্তু বর্তমানে তাদের দেশে একটিও পথকুকুর নেই বলে দাবি নেদারল্যান্ডসের। কুকুর প্রতিপালন, কুকুর দত্তক নেওয়া নিয়ে কঠোর আইন চালু করেছে তারা। কুকুরের নির্বীজকরণেও জোর দেওয়া হয়েছে। সরকারি খরচেই সেই সব করা সম্ভব হয়। তাতেই সাফল্য মিলেছে বলে দাবি করা হয়। আমেরিকাতেও পথকুকুরদের মোকাবিলায় নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। পথকুকুরদের বিশেষ পশুপালন কেন্দ্রে রাখা হয় সেখানে। মরণাপন্ন না হলে সেখানে কুকুরদের মেরে ফেলার নিয়ম নেই। কিন্তু পশুপালন কেন্দ্রের সংখ্যা যথেষ্ট না হওয়ায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে আমেরিকাকে। তাই প্রতিবছর কয়েক লক্ষ পথকুকুরকে যন্ত্রণামুক্ত উপায়ে মেরে ফেলা হয় সেখানে। কিন্তু অতিমারির পর থেকে পথকুকুরের সমস্যা উত্তরোত্তর বেড়েছে বই কমেনি সেখানে। খরচে কুলোতে না পেরে বহু মানুষ পোষ্যদের রাস্তায় ছেড়ে দিয়েছেন। তাতে পরিস্থিতি সামাল দিতে বেগ পেতে হচ্ছে স্থানীয় প্রশাসনকে।