দাম কমলেও বাড়তি করের ভ্রুকুটি, এখন সোনায় বিনিয়োগের সময় নয়, বলছেন বিশেষজ্ঞরা
"করের বোঝায় আখেরে লাভের গুড় পিঁপড়ে খাবে..."
অরিত্রিক ভট্টাচার্য, কলকাতা: আরও কমল সোনার দাম। কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় সোনার দাম নির্ধারণ করে ওয়েস্ট বেঙ্গল বুলিয়ান মার্চেন্টস অ্যান্ড জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন।
তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কলকাতায় প্রতি দশ গ্রাম পাকা সোনার (২৪ ক্যারাট) দাম ৫০ হাজার টাকার আশেপাশে ঘোরাফেরা করছে। গিণি সোনার (২২ ক্যারাট) ক্ষেত্রে প্রতি দশ গ্রামের দাম ৪৮ হাজার টাকার ঘরে। ফলে সোনার দাম কমার ধারা যে অব্যাহত রইল, তা বলাই যায়।
তবে গত কয়েকদিনের ধারাবাহিক সোনার দামে পতন কতটা স্বস্তি দেবে সাধারণ মানুষকে? বাড়ির জন্য সোনা কেনা অথবা সোনাতে বিনিয়োগ, দুটি ক্ষেত্রেই খুব একটা আশার কথা শোনাচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা। আপাতদৃষ্টিতে দামের পতন বিনিয়োগকারীদের উৎসাহ দিলেও বাস্তব চিত্র কিছুটা ভিন্ন।
গত কয়েক মাস ধরেই টিসিএস (ট্যাক্স কালেক্টেড অ্যাট সোর্স) নিয়ে আপত্তি জানিয়ে বারবার কেন্দ্রের কাছে চিঠি দিয়েছেন স্বর্ণশিল্পীরা। এখনও অব্দি নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১ অক্টোবর থেকে লাগু হতে পারে এই কর।
সেক্ষেত্রে গহনা বিক্রেতাকে সোনা কেনার জন্য বাড়তি এক শতাংশ খরচ করতে হচ্ছে। স্বর্ণশিল্প বাঁচাও কমিটির কার্যকরী সভাপতি বাবলু দে জানাচ্ছেন, "এই কর চালু হলে বাড়তি করের বোঝা গ্রাহকদের ওপরেও পড়বে।
ফলে পঞ্চাশ হাজার টাকার সোনা কিনলে কর দিতে হতে পারে প্রায় হাজার চারেক টাকা।" ফলে বাজারে দাম কমার সুবিধে কর দিতে গিয়েই খোয়াতে হতে পারে বলে মত ব্যবসায়ীদের।
তবে কি সোনাতে বিনিয়োগ করা এই মুহূর্তে বুদ্ধিমানের কাজ হবে? আর্থিক বাজার বিশেষজ্ঞ প্রসূনজিত মুখোপাধ্যায়ের মতে, "সোনা এখনই দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য আদর্শ নয়।"
পাশাপাশি ডলারের নিরিখে টাকার মূল্য ও সোনার দরের সম্পর্কের কথাও উল্লেখ করেছেন তিনি। এই মুহূর্তে টাকার মূল্য ডলারের নিরিখে কমছে। এই অবস্থায় সোনার দর কমা স্বাভাবিক, তাতে সোনার প্রকৃত মূল্য বোঝা যায় না।
প্রসূনজিত মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, "সোনার প্রকৃত দর বিচার করতে গেলে ডলার প্রতি টাকার মূল্যকেও নজরে রাখতে হবে। সেটা দেখলেই বোঝা যায়, সোনাতে বিনিয়োগ করার আদর্শ সময় এখন একেবারেই নয়।"
তবে সোনার দামের পতন অব্যাহত থাকলেও এই পরিস্থিতি কতদিন চলবে, তা নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করতে রাজি নন কেউই।