নেপাল সীমান্ত থেকে আনসারউল্লা বাংলা টিম জঙ্গি মহম্মদ আফতাব খানকে গ্রেফতার করল এসটিএফ
কলকাতা: এবার কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের হাতে গ্রেফতার হল আনসারউল্লা বাংলা টিম বা এবিটি-র আরেক জঙ্গি ওমর ফারুখ ওরফে মহম্মদ আফতাব খান। এসটিএফ সূত্রে দাবি, এই ওমর ফারুখ এবিটি-র এক্সপ্লোসিভ উইং বা বিস্ফোরক বিভাগের সক্রিয় সদস্য। আইইডি তৈরি করতে এবং ব্যবহারে সিদ্ধহস্ত। অনেককে বিস্ফোরক তৈরির প্রশিক্ষণও দিয়েছে সে। হাওড়ার একটি হোটেল থেকে পাওয়া সূত্রের ভিত্তিতে মঙ্গলবার নেপাল সীমান্ত লাগোয়া এলাকা থেকে ওমর ফারুখকে গ্রেফতার করে এসটিএফ। তার কাছ থেকে একটি বিস্ফোরক তৈরির বই, ম্যাপ এবং জাল আধার কার্ড উদ্ধার হয়েছে। আরও দুই জঙ্গিকে হন্যে হয়ে খুঁজছে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স। কলকাতা পুলিশের এসটিএফ সূত্রে দাবি, সম্প্রতি হাওড়ার একটি হোটেলে অভিযান চালাতে গিয়ে প্রথম ওমর ফারুখের বিষয়ে সূত্র মেলে। জানা যায়, ৮ থেকে ১১ অক্টোবর পর্যন্ত ধৃত আরেক জঙ্গি তনবীরের সঙ্গে হাওড়ার ওই হোটেলেই ছিল ওমর ফারুখ। হোটেলের রেজিস্টার ঘাঁটতে গিয়ে থেকে একটি আধার কার্ড মেলে, যাতে নাম লেখা ছিল আফতাব খান। খোঁজখবর নিতে গিয়ে জানা যায় আফতাবের আসল নাম ওমর ফারুখ। সে সীমান্ত পেরিয়ে নেপালে পালানোর ছক কষছে। এরপরই অভিযান চালিয়ে মঙ্গলবার তাকে গ্রেফতার করা হয়। এসটিএফ সূত্রে খবর, ২০১৬-য় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপককে খুনের ছক কষেছিল ওমর ফারুখ। কিন্তু, পুলিশ ঠিক সময়ে পৌঁছে যাওয়ায় তাদের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। ওমরের দুই সঙ্গীকে এনকাউন্টারে মারে বাংলাদেশ পুলিশ। এরপরই সেখান থেকে পালিয়ে পশ্চিমবঙ্গে চলে আসে ওমর ফারুখ। ওমরের গ্রেফতারির পর এবিটি-র আরও দুই জঙ্গি তামিম ও নয়ন গাজিকে খুঁজছে এসটিএফ। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠন ‘আনসারুল্লা বাংলা টিমের’ আরও একটি বড়সড় ষড়যন্ত্রের কথা জানতে পারলেন গোয়েন্দারা! যেখানে উঠে এল, কাশ্মীর, পাকিস্তান, এমনকি আফগানিস্তানের নামও! এই ‘এবিটি’ ‘আল কায়দা ইন দ্য ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্ট’(একিউআইএস) -এর অংশ। যার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য সামসাদ মিঞা ওরফে তনবীর ওরফে সইফুল ওরফে তুষার! এসটিএফ সূত্রে দাবি, কলকাতা স্টেশন থেকে ধৃত তনবীরকে একটি ‘বিশেষ টাস্ক’ দিয়েছিল জঙ্গি নেতারা। তাকে বলা হয়েছিল কাশ্মীর ও পাঞ্জাবে নিজের নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে! এসটিএফ সূত্রে দাবি, এবিটি-র উদ্দেশ্য ছিল, তনবীরের পরিচিতিকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের সংগঠনের সদস্যদের পাকিস্তান হয়ে আফগানিস্তানে পাঠানো! যাতে সেখানকার জঙ্গি সংগঠনগুলির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যোগাযোগ গড়ে তোলা যায়। বাংলাদেশের ব্লগারদের ওপর হামলার ঘটনায় বারবার আঙুল উঠেছে এই ‘আনসারুল্লা বাংলা টিমের’ দিকে। কয়েকজন ব্লগার খুনও হয়েছেন। কেউ আবার আতঙ্কে দেশ ছেড়েছেন। ঘুরছেন এ দেশ থেকে অন্য দেশে! তাঁদেরই একজন সানিউর রহমান। ভিটে ছেড়ে যিনি এখন ভারতে লুকিয়ে। বলেন, ২০১৩ সালের ৭ মার্চ হামলা হয়। নিরাপত্তার কারণে বাহরিন, দুবাই, নেপাল হয়ে রাজ্যে আসি। এখানেও নিরাপদ নয় মনে করে বেরিয়ে এসেছি। শুধু নিজের ওপর হামলার আশঙ্কাই নয়, আরও চিন্তার কথা শুনিয়েছেন এই বাংলাদেশি ব্লগার! বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গের বর্ডার দিয়ে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রবেশ হয়। এরাই কয়েকজন সীমীত নয়, আরও অনেকে ছড়িয়ে আছে। নানা নামে। বাংলার ব্লগাররাও আক্রান্ত হতে পারেন। সানিউরের বক্তব্য যে অমূলক নয়, ইতিমধ্যেই তার প্রমাণ মিলেছে। এসটিএফ সূত্রে দাবি, শিয়ালদায় জগৎ সিনেমার কাছ থেকে ধৃত সাহাদত হোসেন স্লিপার সেলের সদস্য! একজনের খোঁজ মিলেছে, বাকিরা এখনও অধরা। গোয়েন্দাদের অনুমান, বাংলাদেশ থেকে এসে, অনেকেই আবার বাংলাদেশে ফিরে গিয়েছে! ধৃত জঙ্গিদের জেরা করে এ ব্যাপারে খোঁজ পাওয়ার চেষ্টা করছে এসটিএফ। এদিকে, বাংলাদেশি জঙ্গিদের সঙ্গে অস্ত্রপাচারকারী অভিযোগে ধৃত মনোতোষ দে-র স্ত্রী সোমবার বসিরহাটে তাঁর বাড়িতে ঢুকতে গেলে প্রতিবেশিরা বাধা দেয়। এরপর মঙ্গলবার বাড়ি তালা দিয়ে চলে যান তাঁরা।