'সরকারি চাপে' প্রবেশিকা প্রত্যাহার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে, ভর্তি নম্বরের ভিত্তিতে
কলকাতা: সরকারের 'চাপের মুখে' প্রবেশিকা প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। নম্বরের ভিত্তিতেই ভর্তি হবে বলে জানানো হয়েছে। উচ্চমাধ্যমিক বা সমতুল পরীক্ষার নম্বরের ভিত্তিতে ভর্তি প্রক্রিয়া চলবে। বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কলা বিভাগে প্রবেশিকার দিন ঘোষণা করেও তা প্রত্যাহার করল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ভর্তি প্রক্রিয়ায় ছাত্রদের ভূমিকা থাকতে পারে না, এমনটাই দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার। এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সিদ্ধান্তের পরে ফের ছাত্র আন্দোলন নতুন করে মাথাচাড়া দিতে পারে বলে মনে করছে শিক্ষামহলের একাংশ। ইতিমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ে অরবিন্দ ভবনের সামনে টাকা নিয়ে আসন বিক্রির অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখান পড়ুয়াদের একাংশ।
ক’দিন আগে কলা বিভাগের ৬টি বিষয়েই প্রবেশিকা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু ছাত্রদের ৪৪ ঘণ্টা অবস্থানের পর পিছু হঠে কর্তৃপক্ষ। সিদ্ধান্ত হয়, বাংলা, ইংরেজি, তুলনামূলক সাহিত্য, ইতিহাস, দর্শন ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকস্তরে ভর্তির ক্ষেত্রে এবার প্রবেশিকা হবে। ভর্তিতে যার গুরুত্ব থাকবে ৫০ শতাংশ। বাকি ৫০ শতাংশ উচ্চমাধ্যমিক বা সমতুল বোর্ডের নম্বর। দুটোর গড় করে তৈরি হবে মেধা তালিকা।
কলা বিভাগের ছটি বিষয়ে প্রবেশিকার দিন ধার্য হয়েছিল ৩-৬ জুলাই। কিন্তু কর্মসমিতির বৈঠকে এই ভর্তিপ্রক্রিয়া বিধিবিরুদ্ধ বলে অভিযোগ ওঠে। এরপরই পরীক্ষা স্থগিত করে দিয়ে অ্যাডভোকেট জেনারেলের পরামর্শ চায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এতদিন প্রবেশিকার দায়িত্বে ছিল বিভাগীয় অধ্যাপকদের নিয়ে গঠিত বোর্ড অফ স্টাডিজ। কিন্তু এবারের জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে ভর্তির দায়িত্বে রাখা হয় অ্যাডমিশন কমিটি। মঙ্গলবার ভর্তি প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে বৈঠকে বসেছিল অ্যাডমিশন কমিটি। উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, সব বিভাগের ডিন এবং বিভাগীয় প্রধানরা। বৈঠক চলাকালীন বিক্ষোভ দেখায় ছাত্ররা।
ভর্তি প্রক্রিয়ার সঙ্গে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই যুক্ত থাকবেন, নাকি বাইরের শিক্ষকরা থাকবেন, তা নিয়ে মতানৈক্য তৈরি হয় বৈঠকে। ঠিক হয়, বুধবার বৈঠক করে এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে কর্মসমিতি। পড়ুয়াদের একাংশের অভিযোগ, কেন্দ্রীয়ভাবে প্রবেশিকা চালু করতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ কার্যকলাপে হস্তক্ষেপ করছে রাজ্য সরকার।
একই সুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাংশের। বাইরের অধ্যাপকদের দিয়ে প্রবেশিকা পরিচালনায় আপত্তি জানিয়ে বৈঠকের আগে স্মারকলিপি পেশ করে জুটা। তাদের দাবি, এতদিন আইন মেনেই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশিকা হয়েছে। কোনও অভিযোগ ওঠেনি। এবার বাইরের অধ্যাপকদের দিয়ে প্রবেশিকা পরিচালনার সিদ্ধান্ত আইন বিরুদ্ধ। এক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে হতে পারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে। পাশাপাশি, জুটার হুঁশিয়ারি, এরপরেও বাইরের অধ্যাপকদের দিয়ে প্রবেশিকা পরিচালনা করা হলে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নমূলক বিভিন্ন পদ থেকে সরে দাঁড়াবেন অধ্যাপকরা।
যদিও অপরপক্ষের বক্তব্য, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এতদিন ধরে যে পদ্ধতিতে প্রবেশিকা চলে আসছে, সেটাই বিধিবিরুদ্ধ। কিন্তু, এমনটা মানতে নারাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপকদের একাংশ। উপাচার্যকে লেখা চিঠিতে তাঁরা উল্লেখ করেছেন, কোনও পাঠ্যক্রমের ছাত্র বা সম্ভাব্য ছাত্রদের যোগ্যতার বিচার সেই পাঠ্যক্রমের শিক্ষকরাই সবচেয়ে ভালোভাবে করতে পারেন, সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। সম্পূর্ণ অকারণে এই ব্যবস্থা ভেঙে দিয়ে তার পরিবর্তে যে ব্যবস্থার প্রস্তাব করা হচ্ছে, তাতে মেধার মূল্যায়নে গুরুতর বিঘ্ন ঘটাতে বাধ্য। ফলে রাজ্যের শ্রেষ্ঠ ছাত্রদের প্রতি অবিচার হবে, বিভাগীয় শিক্ষকদের অসম্মান ও হতাশার মুখে ঠেলে দেওয়া হবে, এবং রাজ্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়টির সারস্বত মানের অবনতি ঘটবে।