হোক না অনেক দিন আগেকার ধরা মাছ। কিন্তু দেখলে মনে হবে এই যেন তুলে আনা হয়েছে পুকুর থেকে। মাছ কাটলে বেরোচ্ছে রক্তও। ক্রেতারা পটাপট কিনেও নিচ্ছেন সেই ‘সতেজ’ মাছ। আগেকার ধরা মাছ এমন সতেজ থাকছে কী ভাবে? এর পিছনে রয়েছে একটি রাসায়নিকের কারসাজি। নাম তার ফর্মালিন। শারীরবিদেরা বলছেন, একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি ফর্মালিন শরীরে ঢুকলে বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কার্যকলাপকে তা প্রভাবিত করতে পারে। দেখা দিতে পারে মারাত্মক সমস্ত রোগভোগও। আর এ বার তাই বিপজ্জনক মাত্রার ফর্মালিন-যুক্ত মাছ বিক্রি বন্ধ করতে উদ্যোগী হতে চলেছে কলকাতা পুরসভা। কী ভাবে? পুর-প্রশাসন এ বার থেকে নিয়মিত ভাবে শহরের বিভিন্ন বাজারে ফর্মালিন দেওয়া মাছ ধরতে নজরদারি চালাবে। পুরসভার খাদ্য-সুরক্ষা অফিসারদের নিয়ে তৈরি হয়েছে দল। ওই দল নির্দিষ্ট যন্ত্র (কিট) নিয়ে হানা দেবে বাজারে। সন্দেহ হলেই মাছের শরীরে কতটা ফর্মালিন রয়েছে তা পরিমাপ করবেন তাঁরা। ইতিমধ্যেই পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর এ নিয়ে বৈঠক করেছে। যেখানে খাদ্য সুরক্ষার বিশেষজ্ঞেরাও ছিলেন। তাঁদেরই এক জন জানিয়েছেন, কোনও দ্রবণে ৩৭ শতাংশ ফর্মালিন থাকলে তা মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত ডেকে আনতে পারে। স্বাস্থ্য দফতরের উপদেষ্টা তপন মুখোপাধ্যায় জানান, ছাত্রাবস্থায় ল্যাবরেটরিতে অনেকেই ফর্মালিনের ব্যবহার করেন। সেখানে ব্যাঙ বা অন্য কোনও জীব কাটার পরে ফর্মালিন দিয়ে তা সতেজ রাখা হয়। তপনবাবুর কথায়, ‘‘একই ভাবে মাছ ব্যবসায়ীরাও মাছ ফর্মালিনে চুবিয়ে রাখেন। তাতে মাছ সতেজ থাকে বটে, কিন্তু মানুষের পাকস্থলী, যকৃৎ, ক্ষুদ্রান্ত্রে নানাবিধ ক্ষতি করে ওই ফর্মালিন। এমনকী এর থেকে ক্যানসারও হতে পারে।’’ ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া রোধে স্বাস্থ্য দফতর বছরভর নানা পরিকল্পনা নিচ্ছে। কলকাতার মেয়রের দাবি, তার জেরে শহরে মশাবাহিত রোগ অনেকটাই কমেছে। অনেকটা সেই রকম ভাবেই এ বার শহরে ভেজাল খাবার রুখতে অভিযানে নামছে পুরসভা। মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ জানান, মশাবাহিত রোগ নিবারণের পাশাপাশি শহরের বাসিন্দারা যাতে ভেজাল বা বিষাক্ত খাবার খেয়ে অসুস্থ না হন সেটা দেখাও পুরসভার কর্তব্য। সেই নিরিখেই শহরের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হওয়া মাছে ফর্মালিনের ব্যবহার রুখতে চায় পুর-প্রশাসন। ফর্মালিনের ব্যবহার বন্ধ করতে আগাম প্রচারও চালানো হবে বলে জানান মেয়র পারিষদ। কী ভাবে ফর্মালিন ব্যবহৃত হয় মাছে? স্বাস্থ্য দফতর জানাচ্ছে, মাছ ধরার পরে তা আনা হয় আড়তে। সেখান থেকে মাছ কিনে বিভিন্ন বাজারে নিয়ে যান ব্যবসায়ীরা। বেশ কয়েক দিন ধরে সেই মাছ বাজারে মজুত রাখেন তাঁরা। সতেজ রাখার জন্য তা চুবিয়ে রাখা হয় ফর্মালিনে। পুরসভার এক রসায়নবিদের কথায়, যাঁরা মাছে ফর্মালিন ব্যবহার করছেন, তাঁরা জানেন না কতটা পরিমাণ দিলে তা মানুষের স্বাস্থ্যের নিরাপদ। মাছ সতেজ রাখতে তাঁরা খুশি মতো ব্যবহার করছেন ওই রাসায়নিক। আর ভয়টা সেখানেই। অতীনবাবু জানান, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মতো শহর জুড়ে মাছের বাজারে ঘুরবেন পুরসভার খাদ্য সুরক্ষা দফতরের অফিসারেরা। অতিরিক্ত ফর্মালিন ধরা পড়লে প্রথম বার ওই সব ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে দেবে পুরসভা। তাতে কাজ না হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মেয়র পারিষদ বলেন, আজ, মঙ্গলবার শহরে ভেজাল খাবারের বিরুদ্ধে অভিযান চালাবে পুরসভা।