'কেন্দ্রে পরিবর্তনের পথ দেখাবে বাংলা', বিজেপিকে উৎখাতের ডাক মমতার
কলকাতা: ফের মোদী সরকারকে উৎখাতের ডাক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বাংলা থেকে এবার কেন্দ্রে পরিবর্তনের ডাক দিলেন তৃণমূলনেত্রী। বললেন, ২০১৯-এ দেশে পরিবর্তন নিয়ে আসুন। নিউ জেনারেশন নিউ ইন্ডিয়া গঠন করবে। টিএমসিপির অনুষ্ঠান থেকে তাঁর দাবি, কেন্দ্রে পরিবর্তনের পথ দেখাবে বাংলা। বলেন, বিহার, ইউপিতে গেলে বলে, বাংলা পারবে তো? বাংলা পারবে। বাংলাই পথ দেখাবে। বিজেপি হঠাও দেশ বাঁচাও। ২৪ ঘণ্টা আগেই, পটনাতে গিয়েও একই সুরে হুঙ্কার ছেড়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পটনায় লালুপ্রসাদের সভা মঞ্চ থেকে তৃণমূলনেত্রী বলেছিলেন, সবাই থাকবে, বিজেপি থাকবে না। বিহারে এখন জেডিইউ-বিজেপির জোট সরকার। তৃণমূল সূত্রে খবর, সামনের সপ্তাহে আরেক বিজেপি শাসিত রাজ্য, ঝাড়খণ্ডে যাওয়ার কথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সেখানে গিয়েও তাঁর সভা করার কথা রয়েছে। তার আগে, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকি উপলক্ষ্যে সোমবার মেয়ো রোডের সভা থেকে বার বার বিজেপিকে নিশানা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, কোথায় গেল আচ্ছে দিন? আচ্ছে দিন, মিষ্টি খাওয়া বাদ দিন, চাকরি বাদ দিন, বেকার বাড়িয়ে দিন, হিন্দু-মুসলমান বাদ দিন। বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের আশা, ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে তাদের বিজয়রথ কলকাতা থেকে দিল্লি পৌঁছবে। সূত্রের খবর, এর জন্য রাজ্যের ২২টি লোকসভা আসনে জয়ের লক্ষ্যে ঝাঁপানোর টার্গেট নিয়েছে তারা। যদিও, এ সবকে গুরুত্বই দিচ্ছে না তৃণমূল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আগে পাঁচকুলা সামলাও উত্তরপ্রদেশ সামলাও, তারপর বাংলার দিকে তাকাও। চারটে সিট পেয়ে বলছে আমি দ্বিতীয়। ১০০-য় শূন্য পেয়ে দ্বিতীয় হও, আমার কিছু যায় আসে না। সিপিএম-বিজেপির খেলা এ রাজ্যে রাজনৈতিক ভাবে স্তব্ধ করে দিতে হবে। সামনের বছর রাজ্য পঞ্চায়েত ভোট। তার পরের বছর লোকসভা নির্বাচন। পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, ভোট যত এ গিয়ে আসবে, ততই যে, বিজেপির বিরুদ্ধে সুর চড়াবেন মমতা, এ দিন মেয়ো রোডের সভা থেকেও সেই ইঙ্গিতই মিলল। শুধু বিজেপিকে আক্রমণ নয়, দলের ছাত্র সংগঠনকে অরাজনৈতিক ছাত্র সংসদের পথে হাঁটার নির্দেশও দেন তৃণমূলনেত্রী। টিএমসিপির অনুষ্ঠান থেকে তাঁর বার্তা, স্টুডেন্ট কাউন্সিল ভাল করে করতে হবে। বহিরাগতরা যেন কলেজের ভিতর না ঢোকে। কলেজের পড়ুয়ারাই কলেজের রাজনীতি করবেন। জেভিয়ার্স, লেডি ব্রেবোর্নের মডেল অনুসরণ করুন। এ রাজ্যে কলেজে কলেজে অশান্তি নতুন কিছু নয়। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরেও ছবিটা সে ভাবে বদলায়নি বলেই অভিযোগ। কখনও ক্যাম্পাসে ভাঙচুর-বোমা, কখনও রক্ত। কোথাও আবার অধ্যক্ষকে মারধরের অভিযোগ। ক্যাম্পাসে এমন অশান্তি রুখতেই জেভিয়ার্স মডেলকে সামনে রেখে অরাজনৈতিক ছাত্র সংসদের পথে হাঁটার কথা বলছে রাজ্য সরকার। যা নিয়ে কটাক্ষের সুর রাজ্যের বিরোধীদের গলায়। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, কলেজে এখন শুধু রাজনীতি। টাকা ছাড়া ছাত্র ভর্তি করতে দিচ্ছে না টিএমসিপি। কোনও পদে বসতে তাঁকে দাসত্বের পরীক্ষা দিতে হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভূতের দল ছেড়েছিল তৃণমূল। এখন তা বোতলবন্দি করতে পারছে না। তাই কাউন্সিলের ভাবনা। বিরোধীদের এও প্রশ্ন, যেখানে, রাজ্যর প্রায় ৯৫ শতাংশ কলেজের ছাত্র সংসদই, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দখলে, সেখানে অরাজনৈতিক ছাত্র সংসদের মডেল কোন মন্ত্রে বাস্তবায়িত হবে? সোমবার, মেয়ো রোডে, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকির অনুষ্ঠানে এর ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেন শিক্ষামন্ত্রী। পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, নবীনবরণ করবে। দেওয়ালপত্রিকা থাকবে। কিন্তু, ছাত্র সংসদ করতে হলে স্টুডেন্ট কাউন্সিল করতে হবে। আমরা এটা পরীক্ষামূলক ভাবে চাই। নির্ভর করবে টিএমসিপির উপর। মাস দুয়েক আগে এ নিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করে উচ্চশিক্ষা দপ্তর। যেখানে স্পষ্ট, সেন্ট জেভিয়ার্স ও লেডি ব্রেবোর্নের মিশেল। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে--
- নয়া মডেলে ছাত্র সংসদ হবে স্টুডেন্ট কাউন্সিল
- ছাত্র ভোট হবে ২ বছর অন্তর
- কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত হাজিরা থাকলে তবেই কোনও পড়ুয়া ভোট প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবেন।
- ভোট পর্ব চলাকালীন বা প্রচারের সময় কোনও রাজনৈতিক দলের পতাকা বা ব্যানার ব্যবহার নিষিদ্ধ।
- কাউন্সিলের প্রতিনিধি হিসেবে কোনও পড়ুয়া প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ পাবেন সর্বাধিক ২ বার।
- কোনও অপরাধমূলক কাজে অভিযুক্ত কিংবা কলেজ কর্তৃপক্ষের দ্বারা সাজাপ্রাপ্ত হলে, কোনও পড়ুয়া ছাত্র নির্বাচনে লড়তে পারবেন না ।
- ভোটের দিন আধিকারিক কিংবা পড়ুয়া ছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঢোকার প্রবেশাধিকার কারও নেই।
- স্টুডেন্ট কাউন্সিলের সভাপতি, সহ সভাপতি, কোষাধ্যক্ষ হবেন অধ্যাপকরা
এরকম অরাজনৈতিক স্টুডেন্ট কাউন্সিল বাতিলের দাবিতে ইতিমধ্যেই যাদবপুর, প্রেসিডেন্সিতে পড়ুয়ারা আন্দোলন করেছেন। সরকারও পাল্টা বুঝিয়ে দিয়েছে, তারা অবস্থানে অনড়। এই প্রেক্ষাপটে, এ দিন যে ভাবে নিজের দলের ছাত্র সংগঠনকে অরাজনৈতিক ছাত্র সংসদের পথে হাঁটার নির্দেশ দিলেন মমতা, তাতে অনেকেই আশার আলো দেখছেন। তা হলে কি আগামী দিনে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে অশান্তির ছবিটা বদলাবে? সেই উত্তরটা অবশ্য মিলবে ভবিষ্যতেই।