Sikkim Floods: বাঁধভাঙা বৃষ্টি-ধসের মাঝে বন্দি! সিকিমে দুঃসহ অভিজ্ঞতা পর্যটকদের
Sikkim Cloudburst: বুধবার মেঘভাঙা বৃষ্টি আর হড়পা বানের ধাক্কায় তছনছ হয়ে গিয়েছে সিকিম। আটকে পড়েছেন বহু পর্যটন। যাঁরা ফিরতে পেরেছেন, দুঃসহ অভিজ্ঞতা তাঁদের।
কলকাতা: সামনেই পুজো-উৎসবের মরসুম। তার আগে পরিবারের সঙ্গে সিকিমে (Sikkim) ঘুরতে গিয়েছিলেন শৈলেন্দ্র কুমার। সুরাতের বাসিন্দা এই পরিবার দুঃস্বপ্নেও ভাবেনি, এতদিনে ধরে পরিকল্পনা করে সিকিমে ঘুরতে এসে এভাবে বিপদে পড়তে হতে পারে। সবই ঠিক যাচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই সব ওলোটপালট হয়ে গেল বুধবার। মেঘভাঙা বৃষ্টি (Sikkim Cloud Burst) এবং হড়পা বানের (Sikkim Flash Flood) ধাক্কায় অথৈ জলে সিকিমে ঘুরতে যাওয়া বহু পর্যটক। সেখানকার বাসিন্দাদের ভোগান্তি তো রয়েইছে। সিকিমে আটকে পড়ে বিপদে পড়েছেন পর্যটকরাও।
ওই পরিবারটি জানাচ্ছে, গ্যাংটক (Gangtok) ও পেলিংয়ে ঘোরার সময় আবহাওয়া ভালই ছিল। বুধবার পেলিং থেকে গ্যাংটকে ফেরার সময়েই গন্ডগোল হয়। ধসে কারণে মাঝরাস্তায় আটকে পড়েন তাঁরা। বৃহস্পতিবার দার্জিলিং (Darjeeling) থেকে PTI-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন শৈলেন্দ্র কুমার। তিনি জানিয়েছেন, ওই অবস্থায় তিনি তাঁর পরিচিত সৌমিক ঘোষকে ফোন করেছিলেন। সৌমিক তাঁদের পরামর্শ দেয় কোনওভাবেই গ্যাংটকের দিকে না ফিরতে- তার বদলে দার্জিলিংয়ে পৌঁছতে। কুমার জানাচ্ছেন, সৌমিক এবং স্থানীয় কিছু বাসিন্দাদের সাহায্যে দার্জিলিং পৌঁছতে পেরেছেন তাঁরা। এমন ভারী বৃষ্টি এবং ধস তাঁরা কোনওদিন দেখেননি বলে জানাচ্ছেন কুমার। ওই অবস্থায় রাস্তায় আটকে পড়ে, ইন্টারনেট সংযোগ হারিয়ে প্রবল আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন তাঁরা।
সৌমিক ঘোষ পেশায় একজন ব্য়বসায়ী এবং ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিও ক্লাবের (West Bengal Radio Club) সদস্য। তিনি বলছেন, 'কুমার আর ওর পরিবার একেবারে দিশেহারা ছিল। ধসের জেরে রাস্তায় আটকে পড়েছিল, তার উপর ভারী বৃষ্টি হচ্ছিল। আমার কিছু চেনাজানা লোকের সাহায্যে ওদের দার্জিলিংয়ে আনতে পেরেছি।'
পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal) থেকে যাওয়া একটি বড় পর্যটক দলও বিপদের মুখে পড়েছিল। বাংলার ভারত স্কাউটস অ্যান্ড গাইডসের একটি ১৩৮ জনের দল গিয়েছিল সিকিম। এই দলের অধিকাংশ সদস্যের বয়সই ছিল ১০-১৫ এর মধ্যে। সিকিম থেকে নিউ জলপাইগুড়ি রেলওয়ে স্টেশন (NJP Station) ফিরে আসতে পেরেছে তারা। সেখান থেকে ব্যারাকপুরে ফিরবে তারা। সিকিমে দুঃসহ অভিজ্ঞতার কথা PTI-কে জানিয়েছে তারা। ওই দলের বরিষ্ঠ সদস্য ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, তাঁর সিকিমে গিয়েছিলেন ট্রেকিং, হাইকিং-এর জন্য। ১ অক্টোবর ওই দল পৌঁছেছিল পশ্চিম সিকিমের উত্তরে (Uttarey) গ্রামে। পেলিং ঘুরে ৪ অক্টোবর বিকেলে এনজেপি পৌঁছনোর কথা ছিল তাঁদের। কিন্তু জোরথাং থেকে মাল্লির রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বৃষ্টি আর হড়পা বানের জন্য। সেই কারণে মাল্লি চেকপোস্ট হয়ে এনজেপি পৌঁছনোর রাস্তাও বন্ধ হয়ে যায়। সেই কারণে গোটা দলটিকে ঘুরপথে নামতে হয়। দার্জিলিং হয়ে শিলিগুড়ি পৌঁছতে হয়। জোরথাং থেকে ছোট গাড়িতে নামতে হয়েছে গোটা দলকে। আগে থেকে বাস বুক করা ছিল। কিন্তু খারাপ রাস্তায় ভারী গাড়ি চলবে না, সেই কারণে SUV-তে চেপে নামতে হয়েছে।
ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিও ক্লাবের সেক্রেটারি অম্বরীশ নাগ জানাচ্ছেন, HAM রেডিও অপারেটররা ১৫-১৬টি ছোট গাড়ির ব্যবস্থা করে দেয়। ধৃতিমান জানান, ওই গাড়ি করে ১২ ঘণ্টা ধরে জোরথাং থেকে দার্জিলিং হয়ে এনজেপি পৌঁছন তাঁরা। এইসব কারণে এনজেপি থেকে ট্রেন ধরতে পারেনি ওই দলটি।
সিকিম সরকার, পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং ভারতীয় রেল (Indian Railway)- কারও থেকে কোনওরকম সহযোগিতা মেলেনি বলে অভিযোগ ধৃতিমানের। শেষপর্যন্ত ওই স্কাউট দলের ২০ জন পদাতিক এক্সপ্রেসে ওঠেন। বাকিরা অন্য ট্রেন ধরে রাতেই কলকাতার দিকে ফেরেন।
আরও পড়ুন: মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১৮, উদ্ধারের পাশাপাশি পর্যটকদের ফেরানোয় নজর সিকিম প্রশাসনের