Uddhav Thackeray: 'সর্বস্ব লুটেছেন প্রিয়জন, পদ কোন কাজের'! মারাঠা আবেগ নিয়েই আড়াই বছরের রাজপাটে ইতি উদ্ধবের
Maharashtra Political Crisis:সুপ্রিম কোর্টে আস্থাভোট স্থগিতের আর্জি খারিজ হয়ে যাওয়ার পরই ফেসবুক লাইভে এসে পদত্যাগ করেন উদ্ধব।
মুম্বই: আত্মমর্যাদার প্রশ্নে বিজেপি-র সঙ্গে দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক ছিন্ন করে বেরিয়ে এসেছিলেন। জোট গড়েিলেন সম্পূর্ণ বিপরীত আদর্শে চালিত ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি এবং কংগ্রেসের সঙ্গে। পরিবারের প্রথম সদস্য হিসেবে পা রেখেছিলেন নির্বাচনী রাজনীতিতে। 'মহা বিকাশ আঘাডি' জোটের মুখ্যমন্ত্রী হয়ে মসনদে বসেছিলেন মহারাষ্ট্রের (Maharashtra Political Crisis)। কিন্তু মাত্র আড়াই বছরই আসনে টিকে থাকতে পারলেন বালাসাহেব ঠাকরের কনিষ্ঠ পুত্র উদ্ধব ঠাকরে (Uddhav Thackeray)। দু'সপ্তাহ ব্য়াপী টানাপোড়েনের পর বুধবার মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিলেন। ছাড়লেন বিধান পরিষদের সদস্যতাও। কিন্তু কোথাও কোও আফশোস নেই বলে জানিয়ে দিলেন উদ্ধব।
নিজের লোকেরাই আজ দূরে সরে গিয়েছেন, আফশোস উদ্ধবের
শত্রুপক্ষের সঙ্গে লড়াই সম্ভব, কিন্তু নিজের লোকের সঙ্গে কঁহাতক লড়বেন বলে দিন কয়েক আগেই আক্ষেপ করতে শোনা গিয়েছিল উদ্ধবকে। ইস্তফাকালেও একই কথা শোনা গেল তাঁর মুখে। জানালেন, যাঁদের সব দিয়েছিলেন, নিজের হাতে বড় করেছিলেন, আজ তাঁরাই দূরে সরে গিয়েছেন। অথচ যারা পাশে থাকবে না ভেবেছিলেন, সেই এনসিপি, কংগ্রেস এবং শিবসৈনিকরাই দুঃসময়ে পাশে থেকেছেন বলে আত্মসন্তুষ্টির সুরও শোনা যায় তাঁর গলায়। মায়ানগরীতে বেড়ে ওঠা উদ্ধব খানিকটা সিনেমার কায়দাতেই বলে ওঠেন, "মুখ্যমন্ত্রিত্ব চলে যায় যাক। কোনও দুঃখ নেই। আমার কাছে শিবসেনা রয়েছে।" তাঁর এই কথায় বিষাদের ছায়া নামে এসেছে সাধারণ শিবসৈনিকদের মুখেও (Shiv Sena)।
সুপ্রিম কোর্টে আস্থাভোট স্থগিতের আর্জি খারিজ হয়ে যাওয়ার পরই ফেসবুক লাইভে এসে উদ্ধব বলেন, "‘রিকশাচালকদেরও মন্ত্রী-সাংসদ করেছি। তাঁরাই ভুলে গিয়েছেন। যাঁদের বড় করেছি, ক্ষমতা পাওয়ার পরে তাঁরাই ভুলে গিয়েছেন। যাঁদের সব দিয়েছি, তাঁরাই আজ বিক্ষুব্ধ। যাঁরা কিছু পাননি, তাঁরাই এখন পাশে।"
আরও পড়ুন: Uddhav Thackeray Resigns: রাত পোহালেই আস্থাভোট, তার আগে পদত্যাগ ঘোষণা উদ্ধবের
মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছাড়ার ঠিক আগের মুহূর্তে, শেষবারের জন্য বিক্ষুব্ধ বিধায়কদের উদ্দেশে বলেন, "আপনারা কীসে অখুশি, সুরাত-গুয়াহাটি না গিয়ে, মাতোশ্রীতে এসে বলতে পারতেন। আপনাদের আবেগকে সম্মান করি। মাতোশ্রীতে এসে বলতেই পারতেন আপনারা।"
প্রথম জীবনে রাজনীতিতে আগ্রহ না থাকা সত্ত্বেও স্রেফ পারিবারিক উত্তরাধিকার ধরে রাখতেই শিবসেনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন উদ্ধব। বাবার মৃত্যুর পর দীর্ঘ দিন একাহাতে শিবসেনার দায়িত্ব সামলালেও, আড়াই বছর আগেই নির্বাচনী রাজনীতিতে প্রবেশ। তাই ক্ষমতার মোহ যে একেবারেই নেই তাঁর, তাও বুঝিয়ে দেন উদ্ধব। বলেন, "কার কাছে কত সংখ্যাগরিষ্ঠতা, তা নিয়ে আমি চিন্তিত নই। আমি কোনও কিছুতে ভয় পাই না। শিবসেনা এবং মারাঠাদের জন্য আজীবন কাজ করেছি। মুখ্যমন্ত্রী পদ ছাড়া নিয়ে কোনও আফশোস নেই। মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করছি আমি।"
উদ্ধবের এমন পরিণতি নিয়ে নানা বিশ্লেষণ উঠে আসছে। বিজেপি-র সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা, হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি থেকে সরে এসে ধর্মনিরপেক্ষতার দিকে ঝোঁকা, এমন নানা কারণ তুলে এনেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। অনেকে আবার ছায়াসঙ্গী তথা দলের মুখপাত্র সঞ্জয় রাউতকেও উদ্ধবের পতনের জন্য দায়ী করেছেন। কিন্তু উদ্ধবের সিদ্ধান্তে পাশে থাকতে দেখা গিয়েছে সঞ্জয়কেও। উদ্ধব পদত্যাগের ঘোষণা করতেই সঞ্জয় ট্য়ুইটারে লেখেন, "ন্যায় বিচারের অধিপতি যিনি, তাঁর সম্মান থাকবে, অগ্নিপরীক্ষার সন্ধি ক্ষণ উপস্থিত হয়েছে, এই দুঃসময়ও কেটে যাবে, জয় মহারাষ্ট্র।"
ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন উদ্ধব!
শেষ মুহূ্র্ত পর্যন্ত উদ্ধব আত্মমর্যাদার সঙ্গে আপস করেননি বলে মত সঞ্জয়ের। তাঁর কথায়, "অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং মার্জিত মুখ্যমন্ত্রীকে হারালাম আমরা। ইতিহাস সাক্ষী, জালিয়াতির শেষ কিন্তু ভাল হয় না। ঠাকরেরই জয় হয়েছে, জয় হয়েছে মানুষের। শিবসেনার জয়যাত্রার সূচনাপর্ব এটা। চলুন লাঠিপেটা খাই, চলুন জেলে যাই। বালাসাহেবের শিবসেনার মনে আগুন জ্বলুক।" কিন্তু মনের আগুন প্রজ্জ্বলিত রেখে উদ্ধবের হাতে শিবসেনা ঘুরে দাঁড়াবে, নাকি শিবসেনা দফতরে ফিরে যেতেও কসরত করতে হবে তাঁকে, প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।