Bangladesh Unrest: বাংলাদেশের বিষয়ে কেন্দ্রের পাশের বিরোধীরা, কে কী বললেন
Jaishankar On Bangladesh Unrest: মঙ্গলবার সর্বদলীয় বৈঠকে বাংলাদশের পরিস্থিতি নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠক করলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। এই বৈঠকে নিয়ে কী প্রতিক্রিয়া জানালেন কংগ্রেস?
নয়াদিল্লি: মঙ্গলবার বাংলাদেশের অচলাবস্থা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের ডাকা সর্বদলীয় বৈঠকে (all-party meeting) বিরোধী নেতৃত্বকে নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর (Indian EAM Jaishankar briefs Opposition leaders on Bangladesh crisis in all-party meeting)। বৈঠকে ডাকার বর্তমান পরিস্থিতি ওই বিষয়ের মোকাবিলার জন্য ভারত কী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে চলেছে তা নিয়ে আলোচনা করেন।
আজ সংসদ ভবনে আয়োজিত সর্বদলীয় বৈঠকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সমস্যা সম্পর্কে রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীদের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ব্যাখ্যা দিলেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী। কী পরিস্থিতিতে হিংসাত্মক আন্দোলনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করলেন তার কারণ সবিস্তারে তুলে ধরেন।
বৈঠকের মধ্যে বিরোধী নেতাদের ঢাকাতে কী চলছে এবং এই মোকাবিলার জন্য ভারত সরকার কী পরিকল্পনা নিয়েছেন তা নিয়ে আলোচনা করেন। সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, ভারত সরকারের তরফ থেকে শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশি সেনাবাহিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখা হয়েছে। ভারতের নিরাপত্তা ও দেশের নাগরিকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য সমস্ত রকমের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এর পাশাপাশি বাংলাদেশের অচলাবস্থার পিছনে বিদেশী ষড়যন্ত্র রয়েছে কিনা। তা এখন পর্যন্ত বলা সম্ভব নয় বলেও উল্লেথ করেন তিনি। সর্বদলীয় বৈঠকে তিনটি প্রশ্ন করেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। তিনি জানতে চান, বাংলাদেশের ঢাকাতে যে রাজনৈতিক অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছে রাজনৈতিকভাবে তার মোকাবিলার লংটার্ম ও শর্টটার্ম কি পরিকল্পনা নিয়েছে ভারত সরকার। এর উত্তরে জয়শঙ্কর জানান পরিস্থিতির ক্রমশ উন্নিতে হচ্ছে এবং কেন্দ্রীয় সরকার পুরো বিষয়টির ওপর কড়া নজরদারি চালাচ্ছে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করার জন্য।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার পেছনে বিদেশি কোনও শক্তির মদত রয়েছে কিনা তা জানতে চান রাহুল। বিশেষ করে পাকিস্তান বাংলাদেশের এই অচলাবস্থার পিছনে রয়েছে কিনা।
এর উত্তরে জয়শঙ্কর জানান, পাকিস্তানের একজন কূটনীতিবিদকে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের অচলাবস্থা নিয়ে মাঝে মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করে চলেছেন। ভারত সরকারের তরফ থেকে তাঁর এই ধারাবাহিক পোস্ট বড় কোনও ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
কংগ্রেস সাংসদ রাহুলের তৃতীয় প্রশ্ন ছিল, বাংলাদেশে যেভাবে নাটকীয় পরিবর্তন হয়েছে তাতে নয়াদিল্লি কোনও ভূমিকা নিচ্ছে কিনা। এর জবাবে জয়শঙ্কর তাঁকে আশ্বস্ত করেন এই বলে যে ভারত সক্রিয়ভাবে পরিস্থিতির উপর কড়া নজর রাখছে।
আরেক কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর বলেন, "শেখ হাসিনার যুগ যে শেষ হয়েছে তা পরিষ্কার হয়ে গেছে। এই বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। বর্তমানে তাঁর বয়স ৭৬ বছর। তাই আমি মনে করি তাঁর পক্ষে আর ফিরে আসা সম্ভব নয়। আমরা গত ৫০ বছর ধরে দেখছি যে নাগরিকদের আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে সেনা। শেখ মুজিবর রহমান এবং তাঁর মেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশে শাসন করে এসেছেন। অন্যদিকে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ সেনা ও কিছু ক্ষেত্রে অনেক ইসলামিক শক্তির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছে। যার ফলে তারা আস্তে আস্তে পূর্ব পাকিস্তানে পরিণত হওয়া দিকে এগিয়ে গেছে। দেশের সাধারণ মানুষ সরকারের বদলে ইসলামিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে। এদিকে ভারত আগাগোড়াই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে গেছে বাংলাদেশের ক্ষমতা আসীন হওয়া সমস্ত সরকার সঙ্গে। অনেক সময় বাংলাদেশ সরকার আমাদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহার না করলেও ভারত তার অবস্থানের পরিবর্তন করেন। আমি মনে করি আগামী দিনেও আমরা একই ধরনের ব্যবহার করে যাবে।"
সোমবার তীব্র সরকার বিরোধী আন্দোলনের জেরে পদত্যাগ করার পর শেখ হাসিনা সোজা এসে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আসার পর তিনি দিল্লির কাছে অবস্থিত গাজিয়াবাদের হিন্ডোন এয়ার বেসে বিমান থেকে অবতরণ করেন।
বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর ইঙ্গিত দেন ভারতের সরকার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তাঁর পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে পরিকল্পনা নেওয়া জন্য সময় দিচ্ছেন। তাঁকে আশ্বস্ত করা হয়েছে যে শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত নেবেন তাতে সমর্থন দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে ভারত সরকার।
নিজের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেল থেকে পোস্ট করে সর্বদলীয় বৈঠকে বিরোধী দলগুলি সরকারের সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনাকে যেভাবে প্রশংসা ও সমর্থন করেছে তার জন্য প্রশংসা করেছেন তিনি। এপ্রসঙ্গে নিজের পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, আমরা সর্বদলীয় বৈঠকে বাংলাদেশের অচলাবস্থার অবসানে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তাতে নিঃস্বার্থ ও শর্তহীন সমর্থনের জন্য অঙ্গীকার করেছে বিরোধী দলগুলি তা প্রশংসনীয়।
সর্বদলীয় বৈঠকের সময় সরকারের তরফে সমস্ত রাজনৈতিক নেতৃত্বকে জানানো হয় যে আনুমানিক ২০ হাজার ভারতীয় নাগরিক বর্তমানে বাংলাদেশে রয়েছেন। তার মধ্যে ইতিমধ্যে ৮ হাজার জন বাংলাদেশে ছেড়েছেন। ঢাকায় অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাসের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশে থাকা ভারতীয় নাগরিকদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ করে তাঁদের নিরাপত্তার বিষয়টি সুরক্ষিত করেছে।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।