বাঁচার একমাত্র পথ ‘লকডাউন’, ‘সেলফ আইসোলেশন’, চিন থেকে ‘করোনা যুদ্ধের’ অভিজ্ঞতা দুই ভারতীয়র
১১ সপ্তাহের পর করোনায় বিধ্বস্ত একাধিক প্রদেশ থেকে ‘শাটডাউন’ তুলে নিল চিনের কমিউনিস্ট প্রশাসন।
উহান: ১১ সপ্তাহের পর করোনায় বিধ্বস্ত একাধিক প্রদেশ থেকে ‘শাটডাউন’ তুলে নিল চিনের কমিউনিস্ট প্রশাসন। উহান, হুনান, হুবেইয়ের মতো প্রদেশ, যেখানে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা সবথেকে বেশি সেইসমস্ত প্রদেশে অনেকটাই শিথিল করা হচ্ছে প্রশাসনিক নির্দেশিকা। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হওয়ার পথে জনজীবন। মাসের পর মাস গৃহবন্দি থাকার পর মানুষ আবার পথে নামছে। চিনা নাগরিকরা তো বটেই ছন্দে ফেরার আনন্দে রয়েছেন প্রবাসী ভারতীয়রাও। একই সঙ্গে তাঁদের বার্তা, করোনা ঠেকাতে সর্বোত্তম উপায় হল নিজেকে গৃহবন্দি রাখা। লকডাউন এবং সেলফ আইসোলেশনই বাঁচার একমাত্র উপায়।
উহানে কর্মরত কেরলের হাইড্রোবায়োলজিস্ট অরুণজিৎ টি সতরাজিৎ ৭৩ দিন নিজেকে গৃহবন্দি রাখার পর কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস নিচ্ছেন। সংবাদসংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই ভারতীয় জানিয়েছেন, “আমি আমার ল্যাব বন্ধ করে বেরিয়ে আসি। এরপর নির্দেশ অনুযায়ী ৭৩ দিন নিজেকে গৃহবন্দি রেখেছি। দীর্ঘদিন কথা বলিনি। সবাই নিজেকে গৃহবন্দি করে রাখার কারণে কাউর সঙ্গে কথা বলতে পারিনি। সেকারণেই এখন কথা বলতে অসুবিধা হচ্ছে।”
চিন থেকে ভারতীয় সহ আরও বিদেশিদের ফিরিয়ে আনতে এয়ার ইন্ডিয়া ২টি বিশেষ বিমান চিনে পাঠায়। ৭০০ জনকে ফিরিয়েও আনা হয়। তবে অরুণজিৎ ফেরেননি। এই দুঃসময়ে পালিয়ে যাবেন না, লড়াই করবেন বলেই থেকে গিয়েছিলেন চিনে। এছাড়াও কেরলে ফিরে গিয়ে স্ত্রী, সন্তান ও পরিবারেরও বিপদ বাড়াতে চাননি তিনি। মহামারীর উৎসকেন্দ্র উহানে থেকেই ১১ মিলিয়ন মানুষের সঙ্গে আরও ভারতীয়দের মতো কেরলের এই হাইড্রোবায়োলজিস্টও লড়লেন।
তাঁর সঙ্গে একই ভাবে ১১ সপ্তাহের দীর্ঘ করোনাবন্দি জীবন কাটিয়েছেন আরও এক ভারতীয় বিজ্ঞানীও। তাঁর কথায়, “৭২ দিন নিজেকে ঘরে আটকে রেখেছি। আমার প্রতিবেশীদের ৩টি সন্তান রয়েছে। আমি এই সময়ের মধ্যে একদিনও তাদের দেখিনি। বেঁচে আছি, এটা ভেবেই আমি আজ খুশি।”
তবে চিনে কেন এতো ভয়াবহ আকার নিল কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ? দুই ভারতীয়ই সহমত হয়েছেন, চিন করোনা ভাইরাস চিহ্নিত করতেই বড্ড দেরি করে ফেলেছে। ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত অনেকেই এই ভাইরাসে সংক্রামিত হয়েছেন এবং তাঁদের মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে। ভারতীয় বিজ্ঞানীর কথায়, “ভাইরাসকে চেনা সহজ কাজ ছিল না। চিনাদের এতোটা সময় লাগল কারণ তাঁদের এমন ভয়াবহতা নিয়ে কোনও ধারনাই ছিল না।”
অরুণজিৎ-কে তাঁর গবেষণার জন্য চিনের অনেক গ্রামীণ অঞ্চলে যেতে হয়েছে। তাঁর আশঙ্কা, প্রাণী থেকেই এই ভাইরাস মানুষের মধ্যে ছড়িয়েছে। প্রসঙ্গত, গতবছর ডিসেম্বরে উহান থেকে এই মারণ ভাইরাসের উৎপত্তি। এখনও পর্যন্ত ৮৮ হাজারের ওপরে মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা ১৫ লক্ষেরও ওপরে। যেখানে আমেরিকার অবস্থা সবথেকে সঙ্কটজনক।