Supreme Court of India: গুজরাত থেকেই তিনজন, বিচারপতি নিয়োগ ঘিরে বিতর্ক, বিভাজন তৈরি হল দেশের সুপ্রিম কোর্টে
Justice Vipul Pancholi: বিচারপতি পঞ্চোলীকে পটনা হাইকোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্টে আনতে ৪:১ অনুপাতে সমর্থন জমা পড়ে।

নয়াদিল্লি: সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিযুক্তি ঘিরে নতুন করে বিতর্ক। পটনা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি বিপুল মনুভাই পঞ্চোলীকে শীর্ষ আদালতের বিচারপতি নিয়োগে আপত্তি জানালেন শীর্ষ আদালতের বিচারপতি বিভি নাগরত্ন। ২০২৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দেশের প্রথম মহিলা প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেবেন বিচারপতি। তাঁর এই আপত্তি ঘিরে জোর চর্চা শুরু হয়েছে। (Supreme Court of India)
বিচারপতি পঞ্চোলীকে পটনা হাইকোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্টে আনতে ৪:১ অনুপাতে সমর্থন জমা পড়ে। বিচারপতি নাগরত্ন এই সিদ্ধান্তে সমর্থন জানাননি। তাঁর যুক্তি ছিল, এই নিযুক্তি দেশের বিচারব্যবস্থার জন্য ‘প্রতিকূল’ হয়ে উঠবে এবং কলেজিয়াম ব্য়বস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুণ্ণ হবে এতে। শুধু তাই নয়, বিচারপতি পঞ্চোলীর চেয়ে অনেক বেশি অভিজ্ঞ, অনেক বেশি যোগ্যতাসম্পন্নদের ছেড়ে তাঁকে কেন দেশের সর্বোচ্চ আদালতে জায়গা দেওয়া হচ্ছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি নাগরত্ন। তিনি ছাডডা সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়ামের অন্য সদস্যরা হলেন, প্রধান বিচারপতি বিআর গাভাই, বিচারপতি সূর্যকান্ত, বিচারপতি বিক্রম নাথ, বিচারপতি জেকে মাহেশ্বরী। (Justice Vipul Pancholi)
পটনা থেকে বিচারপতি পঞ্চোলীকে সুপ্রিম কোর্টে নিযুক্তির তীব্র সমালোচনা করেছে ক্যাম্পেন ফর জুডিশিয়াল অ্যাকাউন্টিবিলিটি অ্যান্ড রিফর্ম (CJAR) সংস্থাও। কী কারণে বিচারপতি পঞ্চোলীকে নিয়োগ করা হল, তার সপক্ষে যুক্তিগ্রাহ্য কোনও তথ্য মেলেনি বলে দাবি তাদের। তাদের কথায়, বিচারপতি নিয়োগে বার বার স্বচ্ছতার কথা হলেও, বাস্তবে তার প্রয়োগ হচ্ছে না। বরং বিচারপতি নিয়োগের প্রক্রিয়াটি হাস্যকর হয়ে ইঠেছে। CJAR জানিয়েছে, এই প্রথম আপত্তি জানালেন না বিচারপতি নাগরত্ন। মে মাসেও একবার আপত্তি জানান। ২০২৩ সালে গুজরাত থেকে বিহারে বদলির সিদ্ধান্ত নেওয়া বলে বৈঠকের ‘মিনিটস’ চেয়েছিলেন তিনি, অর্থাৎ প্রতি মুহূর্তের কথোপকথনের লিখিত রেকর্ড।
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরেছে CJAR. তারা জানিয়েছে, বিচারপতি পঞ্চোলীর নিযুক্তিতে গুজরাত থেকে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়া বিচারপতির সংখ্যা বেড়ে হল তিন। একটি রাজ্যের বিচারপতিদেরই কেন দেশের সর্বোচ্চ আদালতে পাঠানো হচ্ছে, বাকি রাজ্যগুলি কেন বঞ্চিত হচ্ছে, প্রশ্ন তুলেছে CJAR. তাদের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বিচারপতি পঞ্চোলীকে কেন সুপ্রিম কোর্টে পাঠানোর সুপারিশ করল কলেজিয়াম, তা স্পষ্ট নয়। গুজরাত থেকে সুপ্রিম কোর্টে পৌঁছনো তৃতীয় বিচারপতি তিনি, গুজরাত হাইকোর্টের আকারকে ধরলে, তার সঙ্গে এই সিদ্ধান্ত সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। দেশের অন্য হাইকোর্টগুলির সমান প্রতিনিধিত্ব থাকছে না। অভিজ্ঞতার নিরিখেও বিচারপতি পঞ্চোলী ৫৭তম স্থানে রয়েছেন’। ফলে আরও অভিজ্ঞ, যোগ্যদের বাদ দিয়ে তাঁকে কেন বেছে নেওয়া হচ্ছে, তার ব্যাখ্যা মেলেনি।
Still no woman judge , what is the collegium upto ? Are there no competent women judges in the High Courts ? What a shame . https://t.co/jZ4L91kSad
— Indira Jaising (@IJaising) August 25, 2025
বিচারপতি পঞ্চোলীকে সুপ্রিম কোর্টে উন্নীত করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিচারপতি নাগরত্ন যে আপত্তি জানান, তিনি যে বক্তব্য তুলে ধরেন, তা কেন প্রকাশ করা হয়নি, সেই নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে CJAR. বিচারপতির ব্যাকগ্রাউন্ড, পদে আসীন বা অবসরপ্রাপ্ত কারও সঙ্গে কোনও ভাবে সংযুক্ত কি না, এই সংক্রান্ত খুঁটিনাটি তথ্য প্রকাশে আগের প্রধান বিচারপতিরা যে কুণ্ঠা করেননি, সেকথাও তুলে ধরা হয়। CJAR-এর মতে, বিচারপতির সম্পর্কে সমস্ত তথ্য পাওয়া গেলে বিচারব্যবস্থা এবং কলেজিয়াম ব্যবস্থার উপর মানুষের বিশ্বাস বাড়বে।
বিচারপতি পঞ্চোলীকে নিয়ে আপত্তির ঠিক কী কী কারণ, তাও তুলে ধরেছে CJAR. তাদের দাবি, ১) বিচারপতি পঞ্চোলীর ব্যাকগ্রাউন্ড প্রকাশ করা হয়নি। ২) কে বা কারা তাঁর সুপারিশ করেছেন, সুপারিশ কমিটি সম্পর্কে বিশদ তথ্যও নেই। ৩) যথেষ্ট অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও কোন বিশেষ কারণে কাউকে বেছে নেওয়া হল, তার ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।
অবিলম্বে সেই সব তথ্য প্রকাশের দাবি জানিয়েছে CJAR. অন্য একটি বিবৃতিতে সুপ্রিম কোর্টের ১৯ অগাস্টের একটি সুপারিশ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, যেখানে বম্বে হাইকোর্টে আটজন আইনজীবীর পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়। ওই আট আইনজীবীর মধ্যে বর্তমান CJI বিআর গাভাইয়ের ভাইপোও শামিল।
At least 3 woman judges are Senior to Justice Vipul Pancholi. They are Justices Sunita Agarwal, Revati Mohite Dere&Lisa Gill. This makes three judges from Gujrat, two will be CJI @utkarsh_aanand @barandbench @LiveLawIndia @toi_dhananjayM @TheLeaflet_in
— Indira Jaising (@IJaising) August 25, 2025
বিচারপতি পঞ্চোলী সুপ্রিম কোর্টে নিযুক্ত হলে ২০৩১ সালের ৩ অক্টোবর থেকে ২০৩৩ সালের ২৭ মে পর্যন্ত CJI-এর দায়িত্ব পালন করবেন। আগে থেকেই সুপ্রিম কোর্টে গুজরাতের দুই বিচারপতি রয়েছেন, বিচারপতি জেবি পর্দিওয়ালা এবং বিচারপতি এএন অঞ্জারিয়া। এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অভিজ্ঞ আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংহ লেখেন, ‘এখনও কোনও মহিলা বিচারপতি নয়? কলেজিয়াম কী চাইছে? হাইকোর্টগুলিতে যোগ্য মহিলা বিচারপতি কি নেই? লজ্জা’। ইন্দিরা জানিয়েছেন, বিচারপতি পঞ্চোলীর চেয়ে অনেক অভিজ্ঞ তিন মহিলা বিচারপতিও রয়েছেন, বিচারপতি সুনীতা আগরওয়াল, বিচারপতি রেবতী মোহিতে ডেরে এবং বিচারপতি লিসা গিল। তার পরও গুজরাত থেকে তিন বিচারপতি সুপ্রিম কোর্টে থাকবেন কেন প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। এতে গুজরাতের দুই বিচারপতিই পরবর্তী CJI হবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণও স্বচ্ছতা এবং দায়িত্ববোধ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি পঞ্চোলীর নিয়োগের নেপথ্যে রাজনৈতিক অভিসন্ধিও দেখছেন কেউ কেউ। কারণ ‘মোদি পদবী’ নিয়ে যে মন্তব্যের জন্য রাহুল গাঁধীকে দোষী সাব্যস্ত করে দু’বছরের সাজা শোনায় আদালত, রাতারাতি তাঁর সাংসদ পদ চলে যায়, সেই মামলার উপর থেকে স্থগিতাদেশ তুলে নিয়েছিলেন বিচারপতি পঞ্চোলীই। এর পর, ২০২৩ সালের ২৪ জুলাই পটনা হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত হন তিনি। চলতি বছরের ২১ জুলাই পটনা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন। বিচারপতি পঞ্চোলীর সঙ্গে বিচারপতি অলোক আরাধেকেও সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের সুপারিশ করেছে কলেজিয়ান। তাঁকে নিয়েও সুপ্রিম কোর্টে মধ্যপ্রদেশের বিচারপতির সংখ্যা বেড়ে তিন হতে চলেছে। মধ্যপ্রদেেশ থেকে আসা অন্য দুই বিচারপতি হলেন বিচারপতি জেকে মাহেশ্বরী, বিচারপতি সতীশচন্দ্র শর্মা।






















