Covid19 : করোনাকে হারিয়ে জীবন যুদ্ধে জিতলেন বেহালার প্রবীণ দম্পতি
হাসপাতালে ভর্তির ন ’দিনের মাথায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন ইলা সেনগুপ্ত। আর দুসপ্তাহ পর, কোভিডকে হারিয়ে, জীবনযুদ্ধে জিতে ফেরেন তাঁর স্বামী, ১০০ ছুঁইছুঁই বিভূতিভূষণ।
কলকাতা : একজনের বয়স ৯৪। আরেক জনের ৭৯। করোনার রক্তচক্ষুর কাছে, বয়স যে নিতান্তই সংখ্যা, তা প্রমাণ করলেন বেহালার বাসিন্দা এই দম্পতি।
বিভূতিভূষণ সেনগুপ্ত ও ইলা সেনগুপ্ত। বেহালার শকুন্তলা পার্কের এই বাড়িতেই দম্পতির সংসার। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে যখন চারদিক বেসামাল, তখন আচমকাই এই বাড়িতে হানা দেয় মারণ ভাইরাস। প্রথম করোনার উপসর্গ বুঝতে পারেন দম্পতির মেয়ে চৈতালি সেনগুপ্ত। জ্বর ও অন্যান্য উপসর্গ থাকায় কোভিড টেস্ট করান তিনি। সংস্পর্শে আসায়, মা-বাবারও করোনা টেস্ট করান। চৈতালির রিপোর্ট নেগেটিভ এলেও, মা-বাবার করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসে। চিকিত্সকদের পরামর্শে আলিপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালের স্যাটেলাইট সেন্টারে ভর্তি করা হয় দম্পতিকে। ন’দিনের মাথায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন ইলা সেনগুপ্ত। আর দুসপ্তাহ পর, কোভিডকে হারিয়ে, জীবনযুদ্ধে জিতে ফেরেন তাঁর স্বামী, ১০০ ছুঁইছুঁই বিভূতিভূষণ।
করোনাজয়ী দম্পতির মেয়ে এই প্রসঙ্গে বলেন, 'যখন মা-বাবার রিপোর্ট পজিটিভ আসে, খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম। কয়েকদিন পর মাকে ছাড়ে হাসপাতাল থেকে। খানিকটা দুঃশ্চিন্তা কমে। খুশি হই খুব। ভাবছিলাম একজনকে অন্তত ফিরে পাবো। কিন্তু তখন বাবাকে নিয়ে চিন্তা বাড়তে থাকে। কারণ, বাবা এতটাই অসুস্থ ছিলেন যে, ফোনটাও ঠিক মতো ব্যবহার করতে পারতেন না। বাবার শ্বাসকষ্ট রয়েছে। মাকে নিয়ে আসতে আমার ছেলে গুরুগ্রাম থেকে চলে আসে।' এখন সবাই বাড়িতে। সেনগুপ্ত বাড়িতে খুশির ঢেউ বইছে।
মে মাসে সেকেন্ড ওয়েভে যখন পরিস্থিতি বেসামাল, সেই সময় বিভূতিভূষণ সেনগুপ্ত এবং ইলা সেনগুপ্ত দুজনেরই করোনা হয়। করোনা দ্বিতীয় ঢেউ-এ যখন সব বেসামাল, তখন তাঁরা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেন। দুই বৃদ্ধ-বৃদ্ধার অদম্য প্রাণশক্তির কাছে করোনা হারল। জীবন জিতল। করোনা জয়ী বিভূতিভূষণ সেনগুপ্ত সেরে ওঠার পর বলেন, 'আমার করোনা হয়েছে, বুঝতেই পারিনি। বাড়ির সবাই খুব চিন্তায় ছিল। ডাক্তাররা রোজ আমায় উত্সাহ দিতেন জীবনে ফেরার। স্ত্রীর শরীর ভালো হয়ে যাওয়ায় ওর ছুটি হয়ে যায়। তখন আমার মনে হয়েছিল, এবার বুঝি আমার যাওয়ার পালা।' করোনা জয়ী ইলা সেনগুপ্তও এই প্রসঙ্গে বলেন, 'আমিও খুব চিন্তায় ছিলাম। মেয়েকে ওর বাবার কথা জিজ্ঞাসা করায় মেয়ে বলল, ওর বাবাকে আরও দু-চার দিন হাসপাতালে থাকতে হবে। আর এখন তো সব ঠিক হয়ে গিয়েছে। সবাই বাড়িতে আছি।' অসীম মনোবল আর বেঁচে থাকার প্রবল ইচ্ছাশক্তিতে, জীবন যুদ্ধে জিতে ফিরে এসেছেন এই প্রবীণ দম্পতি। এখন তাঁরা অন্যদের অনুপ্রেরণা।