Dhupguri Bypoll: মিতালিকে ভাঙিয়ে এনে উচ্ছ্বাস, কৌশলেই খামতি ছিল বিজেপি-র, মাত দিলেন অভিষেক
Dhupguri Bypoll Result: প্রচারে গিয়ে সম্প্রতি ধূপগুড়িকে মহকুমা করার প্রতিশ্রুতি দেন অভিষেক। সেই নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়।
ধূপগুড়ি: নির্বাচনের আগে হাঁকডাক ছিল বিস্তর। কিন্তু শেষরক্ষা হল না বিজেপি-র। উপনির্বাচনে ধূপগুড়ি আসনটি ধরে রাখতে পারল না তারা। বড় ব্যবধানে তাদের হারিয়ে দিল তৃণমূল। আর সেই ফলাফল সামনে আসতেই শুরু হয়ে গিয়েছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। ধূপগুড়ি উপনির্বাচনে বিজেপি-র তরফে কৌশলীর ভূমিকায় একদিকে যেখানে শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)-সুকান্ত মজুমদাররা (Sukanta Majumdar) ছিলেন, তেমনই তৃণমূলের তরফে ছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। ঝোড়া প্রচার চালিয়েও ধূপগুড়িতে বিজেপি-র কৌশলেই খামতি রয়ে গেল কিনা, প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। (Dhupguri Bypoll)
প্রচারে গিয়ে সম্প্রতি ধূপগুড়িকে মহকুমা করার প্রতিশ্রুতি দেন অভিষেক। সেই নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়। নির্বাচনী আদর্শ আচরণবিধি লঙ্ঘন করে অভিষেক ওই প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। অভিষেক প্রতিশ্রুতি দেওয়ার কে, এই প্রশ্নও তোলেন বিরোধীদের একাংশ। এমনকি নির্বাচন কমিশনে অভিযোগও জমা পড়ে। কিন্তু ধূপগুড়ি পুনর্দখল করে শেষ হাসি হাসলেন অভিষেকই।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর, ধূপগুড়ি উপনির্বাচনই রাজ্য়ে প্রথম নির্বাচন। ২০১৬ সালে ওই আসনটি সিপিএমএর থেকে ছিনিয়ে নিয়েছিল তৃণমূল। কিন্তু ২০২১ সালে সেটি আবার হাতছাড়া হয়ে যায় শাসকদলের। চলে যায় বিজেপির দখলে। দু'বছরের মাথায় ধূপগুড়িকে আবার নিজেদের আয়ত্তে আনতে চেষ্টায় ত্রুটি রাখেনি তৃণমূল। প্রার্থী বাছাই থেকে ভোট পরিচালনা, পুরোটাই নিজে হাতে সামলাতে দেখা যায় অভিষেককে।
গত ১০ বছর ধরে পৃথক মহকুমার দাবি জানিয়ে আসছেন ধূপগুড়িবাসী। তাঁদের সেই দাবিকেই তুরুপের তাস করেন অভিষেক। ধূপগুড়িতে প্রচারে গিয়ে, সভামঞ্চ থেকেই দেন মাস্টার স্ট্রোক। এবছর ৩১ ডিসেম্বরের আগে ধূপগুড়ি মহকুমা হবে বলে ঘোষণা করেন। ওই প্রতিশ্রুতিই তৃণমূলকে জয় এনে দিয়েছে বলে মত বিজেপি-র পরাজিত প্রার্থী তাপসী রায়ের। তাঁর বক্তব্য, "অভিষেকের ধূপগুড়িতে মহকুমার করার মিথ্যা প্রতিশ্রুতির কাছে হেরে গেলাম।"
নিজেদের শক্তঘাঁটি ধুপগুড়ি ধরে রাখতে মরিয়া হয়ে ময়দানে নেমেছিল বিজেপি। তাদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শুভেন্দু। দু'দিন ধরে ধূপগুড়িতে নির্বাচনের প্রচার করেন তিনি। বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার করতে দেখা যায় রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে। প্রচারে নামেন দিলীপ ঘোষও।
নির্বাচনী প্রচারের শেষ দিনে সবচেয়ে বড় চমকটি দেয় বিজেপি। তৃণমূলের ভোটব্য়াঙ্কে আঘাত হানতে, একদিন আগে অভিষেকের গলায় উত্তরীয় পরানো, মিতালি রায়কে বিজেপি-তে যোগদান করানো হয়। মিতালিকে দলে যোগদান করিয়ে তৃণমূলকে মাত দিতে চেয়েছিল বিজেপি। বলা হচ্ছিল, মিতালি একাই নাকি তৃণমূলের ৪-৫ হাজার ভোটে ভাঙন ধরাতে পারেন। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত বুমেরাং হয়ে বিজেপি-র কাছে ফিরল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
কারণ মিতালিকে ভাঙিয়ে যখন উৎসাহে ফুটছে বিজেপি, সেই সময় নীরবতা পালন করেছিল তৃণমূল। অভিষেকের বাছাই করা দলের প্রার্থী নির্মলচন্দ্র রায় নিজের মতো কাজ করে যাচ্ছিলেন। কামতাপুরী আন্দোলনের অত্য়ন্ত বড় প্রচারক সেই নির্মলচন্দ্রই ধূপগুড়িতে তৃণমূলের হগয় বিজেপি-কে মাত দিলেন। বিজেপি-র প্রার্থী তাপসী সেই তুলনায় রাজনীতিতে নবাগতাই। তাঁর স্বামী পুলওয়ামায় শহিদ হয়েছিলেন। তাপসীকে প্রার্থী করে দেশাত্মবোধ উস্কে দেওয়ার বিজেপি-র কৌশল যে সফল হয়নি, তা ফলাফলে কার্যতই স্পষ্ট।
তাই সরাসরি শুভেন্দুকে নিশানা করেছেন তৃণমূলের দেবাংশু ভট্টাচার্য। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর পোস্ট, 'ব্যাটসম্যানের নাম ছিল শুভেন্দু অধিকারী। ধূপগুড়িতে তাঁকে নামিয়ে উইকেট বাঁচানোর চেষ্টা করেছিল বিজেপি। বাকিটা ইতিহাস'। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষকেও বলতে শোনা যায়, "বাংলা ভাগের নাম আর মুখে আনবেন না। সামাজিক প্রকল্প আর শান্তিতে ভোটের জয় এসেছে। শুভেন্দু অধিকারী জনবিচ্ছিন্ন। সবাই দেখেছেন অবাধে ভোট হয়েছে। বিজেপি-র সঙ্গে সবাই হাত মিলিয়েছিল। ওঁর মানসিক হতাশা বাড়বে।" ধূপগুড়ির এই ফলাফলের পর আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে সকলে।