Durga Puja Exclusive : পরিযায়ী শ্রমিকের পর এবার শিল্পী রিন্টু দাসের দুর্গা-ভাবনায় 'ভাগের মা'!
শিল্পীর শঙ্কা, আবারও কোনও অস্থির সময় আসবে না তো? যখন ভিটেমাটি ছেড়ে মাকে আবারও কোথাও চলে যেতে হবে ?
কলকাতা : গত বছর পরিযায়ী শ্রমিকের আদলে মা দুর্গার প্রতিমা গড়ে সারা দেশজুড়ে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিলেন কলকাতার শিল্পী রিন্টু দাস। পরিয়ায়ী শ্রমিকের মা দুর্গার কোলে সন্তান। কাঁখে পুঁটুলি। করোনা আবহে পরিযায়ী শ্রমিকদের সমস্যা সারা দেশে প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছিল। কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা সমালোচিত হয়েছিল রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক ক্ষেত্র থেকে। বড়িশা ক্লাবের প্রতিমার ছবি শেয়ার হয়েছিল হু হু করে। শহর, শহরতলির মানুষ করোনা আবহে সশরীরে মণ্ডপে আসতে পারুক বা না পারুক, সোশ্যাল মিডিয়ায় এই প্রতিমা নিয়ে লেখালিখি হয়েছিল বিস্তর।এবারও তার অন্যথা হবে না। বললেন শিল্পী। এবার বড়িশার ওই ক্লাবের জন্য নতুন ভাবনা ভেবেছেন শিল্পী। সেখানেও থাকছে সমাজ-চেতনা। এবার শিল্পীর ভাবনায় 'ভাগের মা'! বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, 'ভাগের মা গঙ্গা পায় না' । সেই প্রবাদেরই ছাপ শিল্পীর ভাবনায়।
শিল্পী রিন্টু দাসের কথায়, বল্লাল সেন স্বপ্নাদেশে মা দুর্গাকে পান। সেই দেবীকে তিনি পেয়েছিলেন ঢাকা অবস্থায়। তাই তাঁর নাম হয়, ঢাকেশ্বরী দুর্গা। ১৯৪৭ এ যখন দেশভাগকে কেন্দ্র করে বাংলা উত্তাল, তখন লক্ষ লক্ষ মানুষকে ভিটেমাটি ছাড়া হতে হয়। ছাড় পাননি স্বয়ং মা দুর্গাও। বাস্তুহারা হতে হয় দেবীকেও। ঢাকেশ্বরী মায়ের মূর্তিকেও ঢাকা শহর থেকে কলকাতায় আনা হয়। সেই মাতৃপ্রতিমা এখনও এই কলকাতা শহরে কুমোরটুলিতে নিয়মিত পূজিতা। কিন্তু শিল্পীর শঙ্কা, আবারও কোনও অস্থির সময় আসবে না তো? যখন ভিটেমাটি ছেড়ে মাকে আবারও কোথাও চলে যেতে হবে ? সন্তানদের নিয়ে মা যাবেন কোথায় ? শিল্পী-মনের আকাশে সেই দুশ্চিন্তার মেঘই প্রকাশ পেয়েছে তাঁর ভাবনায়। বাংলা প্রবাদের অর্থ, যে মায়ের সন্তানেরা চুলচেরা হিসেব করে মায়ের দায়িত্ব নেয়, সেই মায়ের দুর্দশার ইয়ত্তা নেই। সেই ভাবনারও প্রতিচ্ছবি থাকছে রিন্টু দাশের মূর্তিতে। তাঁর প্রতিমা দাঁড়িয়ে সীমান্তে। তিনি কোনদিকে যাবেন ? কোথায় হবে তাঁর গন্তব্য ভেবে পাচ্ছেনা না।
শিল্পী রিন্টু দাস বরাবর মাতৃপ্রতিমার মধ্যে খুঁজে পেতে চান ঘরের-মাকেই। যাঁর কপালে চিন্তার ভাঁজ। যাঁকে প্রতি মুহূর্তে লড়তে হয় প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে। এবারের দেবীমূর্তির কম্পোজিশনে থাকছে কাঁটাতার, ট্রাক। মা ভিটে ছাড়ার আগে ভাবছেন এই বাড়িতেই এসেছিলেন নববধূ হয়ে। কিন্তু আজ তিনি ঠিকানাহীন। মণ্ডপে শোনা যাবে ভাষ্যও - এই ভিটামাটি ছাইড়া, পোলাপান লইয়া আবার যামু কই? যেন দেশ ভাগের যন্ত্রণাই আবার ফিরে আসবে। সেই কম্পোজিশন দেখা অপেক্ষাতেই দর্শকমহল।
আরও পড়ুন :
সন্ধিপুজোর ভোগে ল্যাটা বা শোল, শুনুন সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের কালীকিঙ্কর ভবনের পুজোর গল্প