'স্বেচ্ছায় এই জীবনযাপন, সকলকে অসম্মানিত করছেন' ইরাকে নিয়ে বিবৃতি মীরার
শোনা যায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর যখন করোনা হয়েছিল তিনি ফুটপাতে থেকেই পুজো দিয়েছিলেন জামাইবাবুর আরোগ্য কামনায়।
কৃষ্ণেন্দু অধিকারী ও সমিত সেনগুপ্ত, কলকাতা: ফুটপাতে দিন কাটাচ্ছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শ্যালিকা!! খড়দার প্রিয়নাথ বালিকা বিদ্যালয়ের জীবন বিজ্ঞানের প্রাক্তন শিক্ষিকার টানা দু-বছরের এই লাইফ স্টাইল প্রকাশ্যে আসতেই হইচই পড়ে গিয়েছে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য অবশ্য জানিয়েছেন, তাঁর বোন স্বেচ্ছায় এই জীবন বেছে নিয়েছেন। এই আচরণের জন্য তিনি পরিবারের সকলকে অসম্মানিত করছেন।
শোনা যায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর যখন করোনা হয়েছিল তিনি ফুটপাতে থেকেই পুজো দিয়েছিলেন জামাইবাবুর আরোগ্য কামনায়। কিন্তু, ডানলপ চত্বরে তাঁর এভাবে থাকার কারণ কী?
এ প্রসঙ্গে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, 'ইরা বসু স্বেচ্ছায় এই জীবন বেছে নিয়েছেন। তিনি অতি অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহন করেন, শিক্ষিতা ও মেধাবী। দীর্ঘকাল শিক্ষকতা করেছেন খড়দার প্রিয়নাথ স্কুলে। তাঁর নিজের একটি বাড়ি আছে। ঠিকানা - বি.বি.৮৪, সল্টলেক, কলকাতা। তাঁর কোনও অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা নেই। তিনি চাইলেই নিজের বাড়িতে ফিরে বসবাস করতে পারেন।
মিরা ভট্টাচার্য আরও বলেন, 'যে কোনও অজানা কারনে ফুটপাতে বসবাস করছেন। প্রাপ্তবয়স্ক যে কোনও মানুষের বোধকরি এই অধিকার আছে। উনি পরিবারের কারও কথা কোনওদিন শোনেননি। নিজের ইচ্ছামতো জীবনযাপন করেছেন। এই আচরণের জন্য তিনি পরিবারের সকলকে অসম্মানিত করছেন। ইরা আমার নিজের ছোট বোন।'
শীর্ণকায় চেহারা। পরনে অপরিচ্ছন্ন পোশাক। ডানলপ মোড়ে সারাদিন তিনি ঘুরে বেড়ান। রাত কাটান ফুটপাতে।এলাকায় এই বৃদ্ধাকে সবাই চেনেন। নাম, ইরা বসু। ২০০৯ সাল পর্যন্ত খড়দার প্রিয়নাথ বালিকা বিদ্যালয়ের জীবন বিজ্ঞানের শিক্ষিকা।
তবে তাঁর আরও একটি পরিচয় রয়েছে, যা শুনলে চমকে উঠতে হয়! ইরা বসু প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শ্যালিকা, মীরা ভট্টাচার্যের বোন। জীর্ণ চেহারা মহিলা ক্যামেরা দেখে মুখ লুকোচ্ছেন। এলাকাবাসী বলছেন, তিনি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর শ্যালিকা।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও মীরা ভট্টাচার্যের সঙ্গে সম্পর্কের কথা জানতে চাইলেই রেগে কাঁই। কার্যত রেগেই বলছেন, 'বলছেন আমি কিছু বলব না, যা এখান থেকে যা।' ঝরঝরে বাংলা ও ইংরেজিতে কথা বলেন। কারও থেকে সাহায্য নেওয়া তো দূর অস্ত, এক কাপ চা পর্যন্ত কিনে খান।
খড়দার এক ব্যবসায়ী রবি দাস বলছেন, শিক্ষক দিবসে চিকেন বিরিয়ানি, মাটন খাইয়েছেন। ডানলপ ট্রাফিক গার্ড ASI রাজীব রায় বলছেন, কোনও দিন পয়সা চান না। কিনে খান। আমরা দেখি তো। ইরাদেবীর ইতিহাসের খোঁজ পেতে আমরা গেছিলাম তাঁর পুরনো স্কুলে।
প্রিয়নাথ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা কৃষ্ণকলি চন্দ বলছেন, পেনশনের কাগজপত্র জমা দিতে পারেননি। তাই পেনশন পাননি। উনি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শ্যালিকা, মীরাদেবীর বোন, সবাই জানে এখানে। পয়সার অভাব ছিল না। তবে রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে হবে কেন, বুঝতে পারছি না। অসীম দাশগুপ্ত যখন অর্থমন্ত্রী ছিলেন তখন এসে খোঁজ নিয়েছিলেন।
সল্টলেকে বিবি ৮৪- ঠিকানায় গিয়ে দেখা গিয়েছে, বাড়ি বন্ধ। গেট বন্ধ, তালায় জং ধরে গিয়েছে। দেখেই বোঝা যায়, দীর্ঘদিন এই বাড়িতে কারও যাতায়াত নেই। আপাতত প্রশাসনের তৎপরতায় ইরা বসুকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।