নোট বাতিল: ঘোষণার আগেই ‘ফাঁস’ সিদ্ধান্তের, অভিযোগ বিরোধীদের, জেপিসি তদন্তের দাবি
নয়াদিল্লি: নোট বাতিল ইস্যুতে উতপ্ত হল রাজ্যসভা। একসুরে মোদী সরকারকে আক্রমণ করল বিরোধীরা। সিদ্ধান্ত ঘোষণার আগে ফাঁসের অভিযোগে যৌথ সংসদীয় কমিটি গড়ে তদন্ত চেয়েছে কয়েকটি বিরোধী দল। অন্যদিকে কেন্দ্রের সাফাই, এই সিদ্ধান্তে ক্ষতি হয়েছে শুধু অসৎ ব্যক্তিদের। এদিন শোকপ্রস্তাব পাঠের পর শুরুতেই লোকসভার অধিবেশন মুলতুবি হয়ে যাওয়ায় রাজ্যসভায় শীতকালীন অধিবেশনের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ছিল কংগ্রেস। নোট বদল নিয়ে রাজসভায় বিতর্কের শুরুটা বুধবার আক্রমণাত্মক সুরে করেন কংগ্রেস সাংসদ আনন্দ শর্মা। বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীকে ধিক্কার জানাই। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা গরিব মানুষকে দুর্নীতিগ্রস্ত বলার জন্য ওনার উচিত ক্ষমা চাওয়া। ৫০০ ও হাজারের নোট বাতিলের সিদ্ধান্তে মোদীর কড়া ভাষায় সমালোচনা করে তিনি অভিযোগ করেন, আগাম কোনও প্রস্তুতি ও নোটিস ছাড়াই এত বড় সিদ্ধান্ত লাগু করেছে কেন্দ্র, যার জেরে এখন দুভোর্গে পড়তে হচ্ছে আমজনতাকে। আনন্দ শর্মার দাবি, নোট বাতিলের ঘোষণার আগেই বিষয়টি বিজেপি এবং তাদের ঘনিষ্ঠদের জানিয়ে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, নোট বাতিলের ঠিক আগে বিজেপির রাজ্য শাখাগুলি কোটি কোটি টাকা ব্যাঙ্কে জমা করল। এই নিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন রিপোর্টকেও উদ্ধৃত করেন শর্মা। শুধু নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নয়, প্রবীণ কংগ্রেস নেতার সোজাসুজি প্রশ্ন মোদীকে, কোন আইনে তিনি দেশের আমজনতাকে তাঁদের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলতে বাধা দিচ্ছেন, যেখানে তাঁদের নিজের অ্যাকাউন্টে যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ রয়েছে? কেন্দ্রকে তীব্র কটাক্ষ করে আনন্দ শর্মা জানতে চেয়েছেন, কোন জঙ্গি সংগঠন টাকা বদলাতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে যাবে? এদিকে নিজের রোজগারের টাকা পেতে সমস্যায় পড়ে গেছে সাধারণ মানুষ। এছাড়া মোদীকে তাঁর ক্ষমতায় আসার আগে নির্বাচনী প্রচারে করা এক প্রতিশ্রুতির কথা মনে করিয়ে দিয়ে কংগ্রেস নেতা বলেন, এখনই সরকারের উচিত্ সুইস ব্যাঙ্কে আ্যাকাউন্ট রয়েছে সেইসমস্ত ভারতীয়দের নামের তালিকা প্রকাশ করা। সেখানেতো গচ্ছিত রয়েছে লক্ষ লক্ষ কালো টাকা। নোট বাতিলের জেরে কৃষিজীবী মানুষরা চরম বিপদে পড়েছে, কংগ্রেস নেতার প্রশ্ন কজন সাধারণ মানুষের কাছে ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড থাকে? দিন আনে দিন খাওয়া মানুষ কি কার্ড ব্যবহার করে? কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে দেশের সব মানুষ বিনা দোষে অপরাধী হয়ে গিয়েছে। রাজ্যসভায় বিতর্ক শেষে ভোটাভুটি দাবি করে তৃণমূল। সুর চড়ান ইয়েচুরি, মায়াবতীরাও। এনিয়ে বেশ কয়েকটি বিরোধী দল যৌথ সংসদীয় কমিটি গড়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছে। পাল্টা মোদী সরকারের হয়ে সাফাই দিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রী পীযূষ গয়াল বলেন, হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত না নিলে তো সবাই কালো টাকা সাদা করে নিত। সব মিলিয়ে একদিকে সরকার, অন্যদিকে ঐক্যবদ্ধ বিরোধী-- শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম দিনই নোটের গরমে উত্তপ্ত হল রাজ্যসভা।