তিন তালাক: মামলা শুনছে সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ ভিন্ন ধর্মের বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ
নয়াদিল্লি: বৃহস্পতিবার থেকে তিন তালাক নিয়ে শুনানি শুরু হল সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চে।
তিন তালাক ধর্মের অভিন্ন অংশ কিনা, ধর্মের ক্ষেত্রে মৌলিক অধিকারের আওতায় রয়েছে কি না, সেই বিষয় নিয়েই শুনানি হবে। পাশাপাশি, মুসলিমদের মধ্যে ‘নিকাহ হালালা’ ও বহুবিবাহ প্রথা নিয়েও শুনানি চলবে।
গ্রীষ্মকালীন ছুটি সত্বেও রোজ চলবে শুনানি। তিন তালাক বাতিলের আর্জিতে সর্বোচ্চ আদালতে ৭টি মামলা দায়ের হয়েছে। তার মধ্যে ৫টি আলাদা রিট পিটিশন দাখিল করেছেন মুসলিম মহিলারা, যাঁরা তিন তালাককে অসাংবিধানিক হিসেবে উল্লেখ করেন।
সাংবিধানিক বেঞ্চের নেতৃত্বে প্রধান বিচারপতি জেএস খেহর। তাত্পর্যপূর্ণভাবে, ৫ বিচারপতির বেঞ্চে আলাদা ধর্মাবলম্বী বিচারপতিদের রাখা হয়েছে। সাংবিধানিক বেঞ্চকে সহযোগিতা করছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মুকুল রোহতগি।
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক বিচারপতিদের পরিচয়—
বিচারপতি জে এস খেহর
প্রথম শিখ, যিনি দেশের প্রধান বিচারপতি হয়েছেন। চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে তিনি এই দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। ২০০৯ সালে তিনি উত্তরাখণ্ড হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির দায়িত্বে ছিলেন। সেই প্রথম কোনও হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পান খেহর।
এরপর এক এক করে পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি হন। সেখান থেকে হিমাচল প্রদেশের প্রধান বিচারপতি হয়ে যান। এরপর তিনি কর্নাটক হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ছিলেন। ২০১১ সেপ্টেম্বর মাসে তিনি সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হন। শীর্ষ আদালতের যে বেঞ্চ সহারা মামলায় সুব্রত রায়কে জেলে পাঠিয়েছিল, খেহর তাতে ছিলেন।
এর পাশাপাশি, বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন খেহর। তাঁর নেতৃত্বাধীন সাংবিধানিক বেঞ্চ জাতীয় বিচারপতি নিয়োগ কমিশনকে অসাংবিধানিক বলে উল্লেখ করে। বেঞ্চের মতে, কমিশন বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে চলেছে।
বিচারপতি কুরিয়েণ জোসেফ
কেরলের মালায়ালি খ্রিস্টান পরিবারে জন্ম নেওয়া বিচারপতি কুরিয়েণ ১৯৭৯ সালে কেরল হাইকোর্টের বিচারপতি হন। ১৯৮৭ সালে তিনি সরকারি কৌঁসুলি হন। পরে, ১৯৯৪ সালে অতিরিক্ত অ্যাডভোক্যাট জেনারেল হিসেবে নিযুক্ত হন।
২০০০ সালে কেরল হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে যোগ দেন কুরিয়েণ। সেখান থেকে হিমাচল প্রদেশের প্রধান বিচারপতি হন ২০১০ সালে। ২০১৩ সালে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হন তিনি।
বিচারপতি আর এফ নরিমন
পার্সি পরিবারে জন্ম নেওয়া রোহিন্তন বিশিষ্ট আইনজীবী তথা দেশের সলিসিটর জেনারেল ফালি এস নরিমনের ছেলে। ১৯৭৯ সালে তিনি তাঁর আইনি কেরিয়ার শুরু করেন। ২০১৪ সালে তিনি সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হন।
তার আগে, তিনি সেখানেই সিনিয়র কাউন্সেল হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। বাবার মত ছেলেও ২০১১ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত দেশের সলিসিটর জেনারেল হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন রোহিংটন। আইনজ্ঞ হওয়ার পাশাপাশি রোহিংটন পার্সি ধর্মের পণ্ডিতও।
বিচারপতি উদয় ললিত
মহারাষ্ট্রের হিন্দু পরিবারে জন্ম নেওয়া ললিত বার কাউন্সিলে যোগ দেন ১৯৮৩ সালে। ১৯৮৬ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিনি শীর্ষ আদালতের আইনজীবী হিসেবে কাজ করেন।
১৯৯২ সাল পর্যন্ত তিনি প্রাক্তন অ্যাটর্নি জেনারেল সোলি জে সোরবজির সহযোগী ছিলেন। এই সময়ে তিন বহু হাই-প্রোফাইল মামলা সামলেছেন। তুলসী প্রজাপতি এনকাউন্টার মামলায় তিনি বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের কৌঁসুলি ছিলেন।
এছাড়া, ২জি স্পেকট্রাম মামলা থেকে শুরু করে বিনায়ক সেন মামলা-- তাঁকে সরকারি কৌঁসুলির ভূমিকায় দেখা গিয়েছে। অন্যদিকে, একটি দুর্নীতি মামলায় তিনি পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিংহ এবং একটি হত্যা মামলায় নভজ্যোত সিংহ সিধুর হয়ে সওয়াল করেছিলেন।
বিচারপতি আব্দুল নজির
১৯৫৮ সালে কর্নাটকের মুসলিম পরিবারে জন্ম নেওয়া নাজিরের আইনি কেরিয়ার শুরু হয় ১৯৮৩ সালে। সেখান থেকে ২০০৩ সালে তিনি কর্নাটক হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে যোগ দেন। ২০০৪ সালে তিনি সেখানকার স্থায়ী বিচারপতি হন। সেখান থেকে চলে আসেন সুপ্রিম কোর্টে।