জঙ্গিদমনে এনএসজি-র হাতে বন্দুক চালানো রোবট কুকুর, গ্রেনেড-বর্ষণকারী ইউএভি
নয়াদিল্লি: একটা চালকবিহীন বিমান যা থেকে গ্রেনেড ফেলা যায়, একটা অত্যাধুনিক থ্রি-ডি রেডার যা ২০ মিটার দেওয়াল ভেদ করেও সব ছবি তুলতে পারে এবং একটা রোবট কুকুর যে কিনা বন্দুকও চালাতে পারে!
দেখে মনে হতেই পারে, এসব হল কোনও কল্পবিজ্ঞান বা সাই-ফি গল্পের বিভিন্ন চরিত্র। কিন্তু, বাস্তবে এগুলি হল ন্যাশনাল সিকিউরিটি ফোর্স বা এনএসজি-র নতুন হাতিয়ার।
জানা গিয়েছে, জঙ্গিদমন ও পণবন্দি মুক্ত অভিযানে এনএসজিকে আরও ক্ষুরধার ও শক্তিশালী করতে এই নতুন সমরাস্ত্র এবং গ্যাজেট অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের এক উচ্চপদস্থ কর্তা জানান, অতীতের সন্ত্রাসদমন অভিযান এবং শহরাঞ্চলে পণবন্দি পরিস্থিতির অভিজ্ঞতা থেকে নতুন অত্যাধুনিক কিছু হাতিয়ার অন্তর্ভুক্ত করেছে বাহিনী।
তাঁর মতে, জঙ্গিদের হামলার ধরন ক্রমশ পাল্টাচ্ছে। তাই তার মোকাবিলা করতেও, এবার প্রচলিত পন্থা থেকে বেরিয়ে আসার সময় হয়েছে। না হলে, এই সমস্যার সমাধান হবে না।
তিনি জানান, বিদেশে এই ধরনের অভিযানের ক্ষেত্রে যে সব গ্যাজেট ব্যবহার করে থাকে সেখানকার স্পেশাল ফোর্স বা সোয়াট—এবার এনএসজি-ও সেই সরঞ্জাম ব্যবহার করবে।
ওই কর্তা জানান, সামরিক বাহিনী দীর্ঘদিন ধরেই চালকবিহীন বিমান বা ইউএভি ব্যবহার করে আসছে। এবার, ‘ব্ল্যাক ক্যাট’-দের হাতেও এসেছে এই যান।
জানা গিয়েছে, সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এই বিমান থেকে শত্রু-ঘাঁটির ওপর অবিরাম ৩৮-এমএম গ্রেনেড-বর্ষণ করা যাবে। বিমানে লাগানো ক্যামেরার সাহায্যে এই কাজ কন্ট্রোল রুম থেকেই করা যাবে।
এছাড়া, এনএসজি-র হাতে আসছে থ্রি-ডি ‘থ্রু ওয়াল রেডার’। জানা গিয়েছে, পঠানকোট হামলার পরই এই বিশেষ সরঞ্জামের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে কেন্দ্র।
জানা গিয়েছে, ২০ মিটার পুরু দেওয়াল ভেদ করেও এই রেডার ভেতরের ত্রিমাত্রিক ছবি তুলতে সক্ষম। এক-একটি রেডারের ওজন প্রায় ১৪ কিলো। দাম ১ কোটি টাকার বেশি।
তবে, বাহিনীর নতুন সরঞ্জামগুলির মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় সংযোজন হল ‘ডগো রোবো’। ইজরায়েলি নির্মিত এই রোবট কুকুরটির ওজন ১১.৫ কেজি।
কোথাও কোনও জঙ্গি ঘাপ্টি মেরে জঙ্গলের মধ্যে রয়েছে, বা কোনও গর্তে লুকিয়ে রয়েছে অথবা কোনও পণবন্দির পরিস্থিতি তৈরি হলে, সেক্ষেত্রে এই যন্ত্র-সারমেয় সেখানে ঢুকে জঙ্গিদের সঠিক জায়গা বাহিনীকে জানাবে।
পাশাপাশি, রোবটে লাগানো রয়েছে এনক্রিপ্টেড অডিও সিস্টেম বা ট্রান্সিভার। এর মাধ্যমে জঙ্গির কথাবার্তা যেমন শোনা যাবে, তেমনই তার সঙ্গে কথাও বলা যাবে।
রোবোটের সঙ্গে লাগানো ক্যামেরার মাধ্যমে সেই ছবি চলে যাবে এনএসজি কম্যান্ডোদের হাতে। শুধু তাই নয়। যদি এই রোবটকে ধ্বংস করার চেষ্টাও করে, তাহলে শরীরে বাঁধা গ্লক পিস্তল থেকে সঙ্গে সঙ্গে গুলি করে জঙ্গিকে ধরাশায়ী করতেও পারদর্শী ‘ডগো রোবো’।
চালকবিহীন বিমানের মত এক্ষেত্রেও ‘ডগো রোবো’-কে দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করবে জওয়ানরা। রোবটে লাগানো ক্যামেরা দিয়ে তাঁরা সব কিছু প্রত্যক্ষ করতে পারবেন। এক-একটি রোবোট কুকুরের দাম পড়ছে আনুমানিক ৭৬ লক্ষ টাকা।
এর পাশাপাশি, মূল অস্ত্রেও অনেক পরিবর্তন করেছে বাহিনী। যেমন, এতদিন জার্মান-নির্মিত পিএসজি১ স্নাইপার রাইফেল ব্যবহার করতেন এনএসজি-র শার্প শ্যুটাররা।
এখন এরই উন্নত সংস্করণ পিএসজি১-এ১ স্নাইপার রাইফেল ব্যবহার করা হচ্ছে। নতুন রাইফেলের বিশেষত্ব হল, এতে ২০ রাউন্ড গুলি ধরে। ফলে, দীর্ঘক্ষণ সময় ধরে শত্রুকে টার্গেট করা যায়।
এছাড়া, ইজরায়েলি ও মার্কিন নির্মিত কর্নার-শট রাইফেলও হাতে পাচ্ছে এনএসজি। এক-একটি রাইফেলের ওজন হল প্রায় ৪ কেজি। এর বিশেষত্ব হল, দেওয়ালের কোনায় কোনও জঙ্গি লুকিয়ে থাকলেও, এবার সামনে না এসে এই বন্দুকের সাহায্যে তাকে খতম করা যায়। মার্কিন সোয়াট টিমের কাছে অত্যন্ত প্রিয় এই বন্দুক। ২৬/১১ মুম্বই হামলার পর এই বন্দুক কেনার ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছিল।
বাহিনীর হাতে আসছে, বিশেষ কমব্যাট বন্দুক এসপিএএস-১৫। ইতালিতে নির্মিত এই শটগানটি যে কোনও বন্ধ দরজা ভাঙতে সক্ষম। সমরাস্ত্র ছাড়াও জওয়ানদের সুরক্ষার জন্য সর্বাধুনিক হেলমেট ও গ্লাস ভাইজর কেনা হয়েছে।